খিঁচুনি কেন হয়, কী করবেন সেই সময়?
Published: 2nd, April 2025 GMT
খিঁচুনি হলো মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণহীন সংকোচন, যা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে পাঁচ মিনিটের বেশি খিঁচুনি হলে হাসপাতালে নিতে হবে। সব খিঁচুনিতেই মাংসপেশির এমন সংকোচন হয় না। কোনো কোনো মানসিক বিপর্যয়ে খিঁচুনির মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। একে সাইকোজেনিক নন-এপিলেপটিক কলভালসন বলে।
জ্বরের সময় কারও কারও খিঁচুনি হয়। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত এই প্রবণতা থাকলেও পরে এটা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু জ্বর বা সংক্রমণ আছে, যার সঙ্গে খিঁচুনি হওয়াটা স্বাভাবিক। যেমন মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি। আজকাল তাল বা খেজুরের রস খেয়েও কারও কারও খিঁচুনি হচ্ছে।
বুঝবেন যেভাবেঅনেকে আবার কাঁপুনির সঙ্গে খিঁচুনিকে গুলিয়ে ফেলেন। জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি থাকলে অনেকে খিঁচুনি বলে ভুল করেন। তাই সেই সময়টা চিকিৎসকে দেখাতে পারলে ভালো হয়। সম্ভব হলে ভিডিও করে রাখতে পারেন।
অনেক ধরনের খিঁচুনি আছে। সারা শরীরে বা শুধু শরীরের একপাশেও হতে পারে। সাধারণত খিঁচুনি হলে জিবে কামড় পড়তে দেখা যায়। খিঁচুনির সময় অনেকের প্রস্রাব-পায়খানাও হয়ে যায়। জন্মগত বা জেনেটিক কারণে খিঁচুনি হতে পারে। এ ধরনটিকে বলে প্রাইমারি এপিলেপসি। মস্তিষ্কে কোনো টিউমার বা জন্মগত কোনো রক্তনালির এনিউরিসম থাকলে তার লক্ষণ হিসেবে খিঁচুনি হয়ে থাকে।
কী করবেনকারও খিঁচুনি হলে ঘাবড়ে না গিয়ে রোগীকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসুন। রোগী যদি আগুন, পানি বা কোনো মেশিনের কাছে থাকেন, তাহলে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলুন।
গলায় টাই বা নেকলেস পরা থাকলে খুলে ফেলুন।
রোগীকে বাঁ কাতে শুইয়ে দিন।
মুখে কিছু জমে থাকলে পরিষ্কার করে দিন।
এই কাজগুলো করার পাশাপাশি চিকিৎসক ডাকুন বা হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। রোগীর রক্তে গ্লুকোজ কমে গিয়ে এমন হতে পারে, তাই ডায়াবেটিক রোগী হলে মুখে কিছু খাওয়াতে যাবেন না। গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা করতে হবে।
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে বা রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হলো কি না তা নির্ণয়ের জন্য ব্রেন সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষ সেরিব্রাল অ্যানজিওগ্রাফিও করা হয়।
আরও পড়ুনমৃগী মানে জিনে ধরা নয়১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০প্রতিরোধে করণীয়একেকবারের খিঁচুনিতে মস্তিষ্কের অনেক কোষ নষ্ট হয়ে যায়। তাই খিঁচুনি প্রতিরোধের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে—
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ঘুমের সময় শব্দদূষণ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
সঠিক সময়ে পরিমাণমতো খাবার খেতে হবে।
নিয়মিত রক্তের সুগার পরীক্ষা করে ডায়াবেটিসের ওষুধের মাত্রা জেনে নিতে হবে।
আগুন, যন্ত্র বা পানির কাছের কাজ পরিহার করুন।
খিঁচুনির ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। সারা শরীরের ত্বকে ফুসকুড়ি বা স্টিভেনস-জনসন সিনড্রোম হতে পারে। লবণ কমে গিয়ে হাইপোন্যাট্রিমিয়া হতে পারে।
শুধু একটি ওষুধে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ না-ও হতে পারে। তাই নিয়মিত ফলোআপে থাকুন। কোনো অসুবিধা হলে চিকিৎসকের কাছে যান।
গর্ভধারণ করতে চাইলে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। তিনি নিরাপদ কোনো ওষুধ দেবেন।
খিঁচুনির চিকিৎসার জন্য কোনো গ্রাম্য কবিরাজ কাছে যাবেন না। কারণ, ঠিকমতো চিকিৎসায় খিঁচুনি থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
ডা.
রোজানা রউফ, কনসালট্যান্ট, ইউনিকো হাসপাতাল, গ্রিনরোড, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
মঞ্চে ফিরছে ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’
বাংলার লোকগাথা আর আদি নাট্যরীতির এক অনন্য সম্মিলন ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’। দীর্ঘ বিরতির পর আবারো মঞ্চে আসছে নাটকটি। খুলনা অঞ্চলের জনপ্রিয় লোককাহিনি অবলম্বনে নির্মিত এই নাটক ১৬ জুন, সন্ধ্যা ৭টায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে।
ঢাকা পদাতিকের ৩৫তম প্রযোজনা হিসেবে ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’ আবার দর্শকদের সামনে তুলে ধরবে বাংলার মাটির গন্ধমাখা কাহিনি, লোকজ রীতি এবং ঐতিহ্যবাহী অভিনয়শৈলী। নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় আছেন কাজী চপল, যিনি শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত এক সরস উপস্থাপনা উপহার দিতে প্রস্তুত।
নাটকের মূল চরিত্র পাইচো চোর—চতুর, চটপটে এবং বুদ্ধিমান এক লোক, যে রাজপ্রাসাদে ঢুকে চুরি করে রাজকন্যা! তবে গল্পটা শুধু চুরির নয়, বরং চুরির আড়ালে সমাজ, রাজনীতি ও ক্ষমতার গল্প। একজন কথক সমগ্র কাহিনি বর্ণনার ছলে দর্শকদের ঘুরিয়ে আনেন এক রঙিন লোকজ জগতে, যেখানে পাইচো চোর নিজেই হয়ে ওঠে বীর, প্রতারক আর প্রতিচ্ছবি।
আরো পড়ুন:
ফের মঞ্চে ‘উনপুরুষ’
শিল্পকলায় ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন—কাজী শিলা, শ্যামল হাসান, সালাউদ্দিন রাহাত, কিরণ জাকারিয়া, কাজী সম্রাট, আলামিন স্বপন, সুমন ঘোষ, জয়া, সজল, সিরাজুম মনিরা ইকরা, মীর ফারজানা আক্তার নীপা, বর্ণালী আহমেদ সেতু, চন্দ্রিমা মল্লিক তন্দ্রা, কবির বাউল, শংকর কুমার মন্ডল প্রমুখ।
লোকজ সুর, হাস্যরস, নাট্যগম্ভীরতা ও নাট্যব্যঞ্জনায় ভরপুর এই নাটক মঞ্চে আবারো প্রমাণ করতে চায়—বাংলার মাটির গল্প কখনো পুরোনো হয় না, বরং বারবার ফিরে আসে নতুন গন্ধ মেখে।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত