স্টার জলসার জনপ্রিয় টক শো ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’তে কলকাতার প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ একবার আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, আমার ফ্যাশন স্টাইলগুলো কীভাবে আমি ক্রিয়েট করতাম।
বলেছিলাম, এটা আমি সচেতনভাবে করিনি। আমি সাধারণ পোশাকই পরতাম।
শুধু ঋতুপর্ণ ঘোষ একাই নয়, বিভিন্ন সময়ই আমাকে শুনতে হয়, আমি নাকি ‘স্টাইল আইকন’। লোকে আমাকে কেন স্টাইল বা ফ্যাশন আইকন বলে জানি না, তবে বললে আমি আনন্দ পাই। লোকে যে এত বছর আগের রুনাকেও মনে রেখেছে, তার পোশাক, গয়নাগাটি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে, ভাবলে ভালো লাগে।
ছোটবেলা থেকেই সাজগোজের শখ ছিল। মা চুল বেঁধে দিত। পোশাক কিনে দিত। আমাদের জামাকাপড়গুলো অন্যদের মতোই সাধারণ। তারপর স্কুল থেকেই পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু। গান গাইতে কোথাও গেলে ফ্রক পরে যেতাম। বাড়ি থেকে মেকআপ করার অনুমতি ছিল না। শুধু টিভি অনুষ্ঠান হলে মেকআপ দেওয়ার অনুমতি ছিল।
খাটো চুলে টপ আর প্যান্টে রুনা লায়লা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেকহাম এখন থেকে ‘স্যার’
খেলাধুলা ও দাতব্যকাজে অবদানের জন্য ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ফ্যাশন আইকন ডেভিড বেকহামকে ‘নাইটহুড’ দেওয়া হয়েছে। তাঁর পাশাপাশি রক ব্যান্ড ‘দ্য হু’–এর গায়ক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা রজার ডালট্রে ও হলিউড অভিনেতা গ্যারি ওল্ডম্যানকেও একই সম্মানে ভূষিত করা হয়।
আরও পড়ুন৩৭ পেরোনো মেসি এবার ৪৭তম ট্রফির খোঁজে ২ ঘণ্টা আগেইংল্যান্ডের হয়ে ১১৫ ম্যাচ খেলা বেকহাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান ও পিএসজির মতো ক্লাব মাতিয়েছেন। ইউনাইটেডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ৫০ বছর বয়সী সাবেক এই মিডফিল্ডার মেজর লিগ সকারের (এমএলসি) ক্লাব ইন্টার মায়ামির সহমালিক। সম্মানসূচক নাইটহুড পাওয়ার পর বেকহামের নামের সঙ্গে এখন ‘স্যার’ উপাধি যোগ হবে এবং তাঁর স্ত্রী স্পাইস গার্লস ব্যান্ডের সাবেক সদস্য ভিক্টোরিয়া বেকহাম ‘লেডি বেকহাম’ হিসেবে পরিচিত হবেন।
নাইটহুড পাওয়ার আলোচনায় আগে থেকেই ছিলেন বেকহাম। ২০০৩ সালে অফিসার অব দ্য অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার সম্মানে তাঁকে ভূষিত করা হয়। ফ্যাশন শিল্পে অবদানের জন্য পরে ভিক্টোরিয়াও একই সম্মান পান। প্রেস অ্যাসোসিয়েশনকে দেওয়া বিবৃতিতে বেকহাম বলেছেন, ‘পূর্ব লন্ডনে বাবা–মা ও দাদা–দাদিদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, যাঁরা ভীষণ দেশপ্রেমিক ছিলেন এবং ব্রিটিশ হওয়ার জন্য গর্ববোধ করতেন। কখনো ভাবিনি এমন সত্যিকারের সম্মান পাব। আমি খুব ভাগ্যবান; কারণ, যে কাজ আমি করি সেটা করতে পারছি এবং তার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।’
আরও পড়ুনক্লাব বিশ্বকাপ জেতার আশায় কোন দল কত খরচ করল৫ ঘণ্টা আগেখেলাধুলা, ফ্যাশন ও ব্যবসা মিলিয়ে বেকহাম নিজেকে দিন দিন বৈশ্বিক আইকনে পরিণত করার ফল হিসেবে এ সম্মান পেলেন। যুক্তরাজ্যের সম্মানসূচক উপাধিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিনের ‘অনার্স লিস্ট’–এ তাঁকে গতকাল নাইটহুড দেওয়া হয়।
মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেরি এজনেস পারমেন্তিয়ের বেকহাম ও ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, এই সম্মান ‘শক্তিশালী প্রতীক।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘একজন সম্মাননীয় ব্রিটিশ হিসেবে এটা তার ইমেজকে আরও শক্তিশালী করল।’
বেকহামের পোশাক থেকে চুলের ছাঁট—ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু থেকেছে সব সময়ই। নিজেকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করা সাবেক এই ফুটবলারকে প্রতিকূল পরিস্থিতিও পার হতে হয়েছে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নকআউট ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় ইংল্যান্ডের ‘সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ’–এর ট্যাগ পেয়েছিলেন বেকহাম।
২০১২ অলিম্পিক আয়োজনের স্বত্ব লন্ডনকে পাইয়ে দেওয়ায় বড় অবদান ছিল বেকহামের। তখন থেকেই নাইটহুড পাওয়ার আলোচনায় ছিলেন তিনি। তবে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর তাঁর নাইটহুড পাওয়ার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ। পরে অভিযোগটি থেকে খালাস পান বেকহাম।
আরও পড়ুনফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: কী, কেন, কীভাবে৭ ঘণ্টা আগেফ্রি–কিকে খ্যাতি পাওয়া বেকহাম ২০১৩ সালে বুট তুলে রাখার আগেই নিজের ক্যারিয়ারকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার কথা ভেবেছেন এবং সাফল্যও পেয়েছেন। নেটফ্লিক্সে ২০২৩ সালে প্রচারিত ‘বেকহাম’ তথ্যচিত্রে তিনি বলেছিলেন, ‘জানতাম একটা সময় আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে, ফুটবলের পরেও আমি ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছি।’
তবে খেলোয়াড়ি জীবনে সেরা সব ফ্যাশন হাউস, সৌন্দর্যের ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে লোভনীয় অঙ্কের চুক্তি করেছেন বেকহাম। তাঁর জনপ্রিয়তা কোনো বয়স মানেনি। ইংল্যান্ডের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যুক্তরাস্ট্রের বাজারেও ঢুকেছেন। শুধু তা–ই নয়, ‘স্টুডিও ৯৯’ নামে একটি প্রযোজনা হাউসও আছে বেকহামের এবং ২০ বছর ধরে তিনি ইউনিসেফের দূতের দায়িত্বও পালন করছেন। সমাজবিজ্ঞানী এলিস ক্যাশমোরের মতে, ফুটবলের কারণে এখন বেকহাম সবচেয়ে পরিচিত নন, বরং ‘বেকহাম নামের ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার জন্য’ তিনি বেশি পরিচিত। দ্য টাইমসের এ বছরের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বেকহাম ব্র্যান্ডের মূল্য ৫০ কোটি পাউন্ড।
২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ২০১৮ সালে প্রিন্স হ্যারির বিয়েতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিমন্ত্রণ পান বেকহাম। ২০২২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর কফিন দেখতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা এড়িয়ে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ব্রিটেনের বিভিন্ন অঙ্গনের বেশ কিছু তারকা। কিন্তু বেকহাম লাইনে প্রায় ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর রানিকে সম্মান জানান। তখন থেকেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় বেকহাম নামের সঙ্গে ‘স্যার’ উপাধি যোগ হওয়াটা স্রেফ সময়ের ব্যাপার।