আমার এক্সকে ‘দাগি’ সিনেমাটি দেখাতে চাই...
Published: 2nd, April 2025 GMT
‘হাজারটা চাঁদ আসলেও সে রাতের কোনো মূল্য নাই, যদি তুমি না আস’—সামাজিক মাধ্যমে রিলে, স্টোরিতে কথাটা ঘুরছে। ঈদে প্রকাশ পেয়েছে নিশো-তমা মির্জা জুটির সিনেমা ‘দাগি’। ডায়লগটা এই সিনেমার। যাঁরা সিনেমাটি ইতিমধ্যে দেখেছেন, তাঁদের অনেকে যেমন কথাটা বলে, শুনে আপ্লুত হয়েছেন, হচ্ছেন—একইভাবে ট্রেলার দেখেও উচ্ছ্বসিত হয়েছেন অনেকে।
গত ২৭ মার্চ চরকির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পায় সিনেমাটির অফিশিয়াল ট্রেলার। ২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ট্রেলারের শুরুতে শোনা যায়, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, নিশানের ফাঁসি চাই’ স্লোগান। আর একেবারে শেষে নিশোর মায়াময় কণ্ঠে শোনা যায় ডায়লগটা। তা ছাড়া ট্রেলারের ‘ছুঁয়ে যায় আদরের এই উপহার’ গানটিও দর্শককে আকর্ষণ করেছে। আকর্ষণ করেছে নিশোর অভিনয়। মন্তব্যের ঘরে অনুভূতির কথাও জানিয়েছেন দর্শক। তাপস সরকার লিখেছেন, ‘“ছুঁয়ে যাক আদরের এই উপহার” গানটা শোনার সাথে সাথে কলিজায় লাগল।’ রুদ্রনীল লিখেছেন, ‘কী সুন্দর অভিনয়, আসলেই নিশো তুমি সেরা।’ কেউ কেউ আবার ‘হাজারটা চাঁদ আসলেও সে রাতের কোনো মূল্য নাই, যদি তুমি না আস’ কথাটায় মন্তব্যে লিখেছেন। প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। যেমন কেউ বলেছেন, ‘“দাগি” সিনেমা হবে ব্লকবাস্টার।’ আবার অনেকের মন্তব্য, ‘দাগি’ ছাড়িয়ে যাবে ‘সুড়ঙ্গ’কে।
প্রত্যাশা তৈরি হয় সফলতাকে ঘিরে। নিশো দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত শিল্পী। ধাপে ধাপে প্রস্তুত করেছেন নিজেকে। অভিনয়দক্ষতা দিয়ে জিতে নিয়েছেন অগণিত দর্শকের প্রিয় অভিনেতার আসন। অর্জন করেছেন বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজের অবস্থান। তাই তো তাঁকে ঘিরে তাঁর দর্শকের এত আশা, ভরসা, প্রত্যাশা। ‘দাগি’ নিশোর দ্বিতীয় সিনেমা। তা–ও দুই বছর পর। ২০২৩ সালে প্রকাশ পায় নিশোর প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’। কেবল প্রশংসিত ও আলোড়িত বললে কম বলা হবে। সিনেমাটি রীতিমতো হইচই ফেলে দিযেছিল। সব শ্রেণির দর্শক সিনেমাটি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। নিশো-তমা মির্জা জুটির আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল চলচ্চিত্র অঙ্গন। ‘কী সাবলীল, প্রাণবন্ত অভিনয়, কী টানটান গল্প’ দর্শক উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সিনেমাটি দেখে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন। দর্শকের মুখে মুখে ‘সুড়ঙ্গ’র নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। কেবল ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও অনেক সিঙ্গেল হলে ছবিটি দেখতে দর্শক ভিড় করেছিলেন। মাল্টিপ্লেক্সেও তৈরি হয়েছিল দেখার মতো অবস্থা। দর্শকের মুখে মুখে ফিরছিল ‘সুড়ঙ্গ’র নাম। ঈদের তৃতীয় দিন স্টার সিনেপ্লেক্সে শোর সংখ্যার দিক দিয়ে রেকর্ড গড়ে সিনেমাটি। দর্শকের চাপে শোর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। তা ছাড়া ‘সুড়ঙ্গ’-এর দর্শক চাহিদার কারণে ঢাকার বাইরে সিরাজগঞ্জের ‘রুটস সিনেক্লাব’ প্রথমবারের মতো লেটনাইট শো শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল।
‘দাগি’তেও নিশোর বিপরীতে অভিনয় করেছেন তমা মির্জা। ‘সুড়ঙ্গ’–এ নিজের অভিনয়নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তিনি। চরিত্রটিকে এত প্রাণোচ্ছলভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন যে দর্শক চরিত্রটিকে আক্রোশের সঙ্গে, নেতিবাচক চোখে দেখতে শুরু করে। এখানেই অভিনয়ের সার্থকতা, চরিত্রকে বাস্তবতার আলোকে পরশ দিতে পারা।
‘ছুঁয়ে দিলে মন’ খ্যাত নির্মাতা শিহাব শাহীনের নির্মাণ ‘দাগি’। দীর্ঘদিন পর কাজ নিয়ে বড় পর্দায় এলেন তিনি। তাঁর সিনেমা মানেই গল্পে টুইস্ট থাকবেই। তিনি যে গল্প বলতে ভালোবাসেন। গল্পকেই সবচেয়ে বেশি মূল্য দেন। আর এই সিনেমার গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেছেন নিজেই। তাই দাগির গল্প যে দর্শকের মন কাড়বে, সে আশা রাখায় যায়।
আজ ঈদের তৃতীয় দিন। দর্শকের আশা, ভালোবাসাকে পুঁজি করে ‘দাগি’ এগিয়ে যাচ্ছে আপন গতিতে। প্রথম দিন হাউসফুল ছিল। সিনেমাটি দেখে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে প্রাঙ্গণ মুখর করেছেন দর্শক। এক দিন যেতে না যেতেই মাল্টিপ্লেক্সে ‘দাগি’র শো বাড়ানো হয়েছে। ‘দাগি’ও ছড়িয়ে পড়েছে দর্শকের মুখে মুখে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উল্লাস করে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে দর্শককে। কেউ বলছেন, ‘দাগি হৃদয়ে দাগ কেঁটেছে’। আবার কেউ বলছেন, ‘ব্যতিক্রমী একটি মুভি দেখলাম, ভালো লাগল।’ আবার তরুণ দর্শকদের অনেকে বলছেন, ‘আমার এক্সকে সিনেমাটি দেখাতে চাই।’ পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও ‘দাগি’ নিয়ে অনুভূতির কথা আসতে শুরু করেছে। নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘দাগি’ নিয়ে তাঁর অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। যেখানে ‘দাগি’কে নিখুঁত নির্মাণ ও ভালো গল্পের ভালো চলচ্চিত্র বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
সময় গড়ালে দর্শকমত আরও স্পষ্ট হবে। জানা যাবে, নিশো-তমা মির্জা জুটি নিজেদের ছাপিয়ে যেতে পারলেন কি না, আর ‘দাগি’ই বা কতটা আলো ছড়াতে পারল।
নিশো–তমা মির্জা ছাড়াও সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, মিলি বাশার, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।