গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে একটি আবাসিক হোটেলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকার রয়্যাল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আবদুল মতিন সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো.

শাহরিয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় আজ একটি মামলা হয়েছে। মামলার অভিযোগে হোটেলের ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ সকাল ১০টার মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

মামলার বাদী আবদুল মতিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা করেছে বলে মনে হয়েছে। হামলার সময় হামলাকারীরা মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। পাশাপাশি হামলা ও ভাঙচুরের সময় তাঁরা গুলতি, হাতুড়ি ও শাবল ব্যবহার করেছেন। গুলতি দিয়ে সড়ক থেকে তাদের ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত কাচ ভাঙচুর করা হয়।

আবদুল মতিন আরও বলেন, ১৪তলা ভবনের মধ্যে দ্বিতীয় তলায় শুধু কেএফসি ছিল। হামলাকারীদের তাঁদের হোটেলের কর্মীরা বারবার জানিয়েছেন, কেএফসির সঙ্গে হোটেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা ফিলিস্তিনের পক্ষে হোটেলের সামনে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে ব্যানার ও ফিলিস্তিনের পতাকা টাঙিয়ে রেখেছেন। এরপরও হামলাকারীরা তাঁদের কোনো কথা শোনেননি। হামলাকারীদের আটকাতে গিয়ে হোটেলের সাত থেকে আটজন কর্মচারী আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীদের ভিডিও চিত্র ও ছবি সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছেন। সেগুলো দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব। হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে সিলেট নগর বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল। বিকেলের দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি ভাঙচুর করে। এরপর বাটা, ইউনিমার্ট, আলপাইন রেস্তোরাঁসহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী