মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়: বাংলাদেশ জাসদ
Published: 12th, April 2025 GMT
সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ জাসদ। আজ শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় নিজেদের এ অবস্থান তুলে ধরে দলটি।
আজ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে দলটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বৈঠকের শুরুতে নিজেদের প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ পাঠ করেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন।
মুশতাক হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান উল্লেখ করার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানও তাৎপর্যপূর্ণ। এই গণ–অভ্যুত্থানকেও সংবিধানে মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও ৭ মার্চের ভাষণ অপসারণ তাঁরা সমর্থন করেন না। দেশের নাম বাংলাতে পরিবর্তনকে তাঁরা অনাবশ্যক বলে মনে করেন।
আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও এ দাবি প্রকৃতপক্ষে জনগণের।আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও এ দাবি প্রকৃতপক্ষে জনগণের। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি শেষ করতে চায় কমিশন। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্র সংস্কারের একটি সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করতে পারবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান শুধু জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে সম্ভব নয়। জনগণের ঐক্য, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে এর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: অ্যা স্ট্রাটেজিক ডায়ালগ এহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করেছে নীতি গবেষণা কেন্দ্র।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান জাতিসংঘ করতে পারবে না। দেশের জনগণের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও ঐক্যের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এ কারণেই সমস্যার মূল সমাধান নির্ভর করছে জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ওপর।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।ফরহাদ মজহার, কবি ও চিন্তক৮ আগস্ট জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, সংবিধানের নামে একই ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও গণতন্ত্রবিরোধী প্রতিষ্ঠান বজায় রেখে দেশের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সংলাপে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা ও গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
নুরুল ইসলাম বলেন, সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করা, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা তোলা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাদের নাগরিকত্ব ও জাতিগত পরিচয় সুরক্ষিত রাখা এবং উপযুক্ত শিক্ষা ও পুনর্বাসনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যাবর্তনের পথে রাজনৈতিক বাধা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। —পিটার কার্ন, আইওএম বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধানআন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধান পিটার কার্ন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে উদারতা প্রদর্শন করেছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে আরও স্বীকৃতি প্রাপ্য।
পিটার কার্ন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে সমর্থন দিয়ে স্বীকার করেছে, এই বিশাল বোঝা বাংলাদেশ একা বহন করতে পারবে না। এর মাধ্যমে বিশ্ব বাংলাদেশের ভূমিকা ও রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: অ্যা স্ট্রাটেজিক ডায়ালগ এহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শিরোনামের প্রবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট জটিল হচ্ছে। অর্থের ঘাটতি প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা সীমিত করছে। বড় দেশগুলো শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখছে, আঞ্চলিক দেশগুলোও তেমন সক্রিয় নয়। বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা, শিক্ষা, কাজের সুযোগ ও চলাচলের স্বাধীনতার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হলেও রাখাইন ও মিয়ানমারে সহিংসতার বিষয়টি প্রায় অবহেলিত। নিরাপত্তা–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে; রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর কার্যক্রম বেশি তুলে ধরা হয়, আর রাখাইন জাতীয়তাবাদীদের কর্মকাণ্ড তেমন আলোচনায় আসে না।
আরও পড়ুনআসিয়ান জোট রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণকে উপেক্ষা করেছে: এপিএইচআর০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে প্রবন্ধে বলা হয়, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এড়াতে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা হুমকিমুক্ত রাখতে মাদক, মানব পাচার, সীমান্ত লঙ্ঘন এবং জেলেদের অপহরণ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এবং সমাজে সমান অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক হিসেবে একীভূত করার জন্য পন্থা নির্ধারণ করা। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধি করা।