আমাকে হয়রানির জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: টিউলিপ
Published: 14th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। দুদকের করা একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এ অভিযোগ করেছেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনার শাসন আমলের নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ বড় পরিসরে তদন্ত শুরু করে দুদক। তার অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগের মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গতকাল রোববার টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ সোমবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা “মিডিয়া ট্রায়াল” চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনো এর জবাব দেয়নি।’
টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে তাঁকে প্রত্যর্পণের জন্য এক দেশ আরেক দেশের কাছে আবেদন করতে পারে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ ‘২বি’ প্রত্যর্পণ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত। এর অর্থ প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ও বিচারকদের সামনে অবশ্যই স্পষ্ট প্রমাণ তুলে ধরতে হবে।
আরও পড়ুনতারিক সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক ও সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু১৫ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনপদত্যাগ করেছেন টিউলিপ১৪ জানুয়ারি ২০২৫এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, তিনি একক ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। আর গতকাল রোববার টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা বলেছেন, দুদক বিগত কয়েক মাসে ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে’ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন অভিযোগ’ এনেছে।
বিবিসির নজরে আসা এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড বলেছেন, ‘অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা এবং টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা সেগুলো লিখিতভাবে মোকাবিলা করছেন।’
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক। এ তদন্ত করা হচ্ছে ববি হাজ্জাজ নামে একজনের ধারাবাহিক অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সদস্য।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা, রেহানা, টিউলিপ, রাদওয়ানসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা১৩ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনটিউলিপের বিরুদ্ধে জাল সই ব্যবহার করে বোনের নামে ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের অভিযোগ১৪ মার্চ ২০২৫বিবিসির নজরে আসা আদালতের নথি অনুযায়ী, ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতায় সহায়তা করেন টিউলিপ সিদ্দিক। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশে একটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এর আগে বিবিসিকে বলেছিলেন, অভিযোগগুলোয় কোনোভাবেই কাউকে ‘নিশানা’ করে করা হয়নি এবং সেগুলো ‘ভিত্তিহীন নয়’। ‘দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে’ তদন্ত করা হচ্ছে।
দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশের আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকা ঠিক হবে না। আমি টিউলিপ সিদ্দিককে (বাংলাদেশে) এসে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো আইনি সহায়তা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য স্বাগত জানাব।’
আরও পড়ুনগুলশানে বিলাসবহুল ভবনের বাসিন্দার তালিকায় ছিল টিউলিপের নাম০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনলন্ডনে টিউলিপের ব্যবহৃত সেই ফ্ল্যাট কেনা হয় অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে১২ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট উল প স দ দ ক র র আইনজ ব মন ত র পর য় ন য গ কর র জন য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।
রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।