মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ইঙ্গিত এনসিপির
Published: 16th, April 2025 GMT
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশ না নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচনের বিষয়ে এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা বলেছি যে আমরা এখানে ন্যূনতম সংস্কার নয়; বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য আমরা কাজ করছি। এই পরিবর্তনগুলো ছাড়া নির্বাচন হলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সেই নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে।’’
আরো পড়ুন:
বেড়াতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম
দেশে সংস্কারের দরকার আছে : নুসরাত তাবাসসুম
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের এজেন্ডাগুলো নিয়ে কাজ করছি। বর্তমান সময়ে মাঠ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। সেখানে প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মূলত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচন বিষয়ে আমাদের প্রধান ফোকাস ছিল। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, বাংলাদেশে রাজনীতি কোনদিকে যাবে এবং আমাদের রাজনীতিতে দলের গঠন প্রক্রিয়া, সাংগঠনিক কার্যক্রম, আদর্শ ইত্যাদি বিষয়ে তাদের আগ্রহ ছিল। আমরা আমাদের জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করেছি।’’
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘‘আমাদের যে তিনটি দাবি- বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন; সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছি। আমরা বলেছি, ন্যূনতম সংস্কার নয়, মৌলিক সংস্কার, রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের জন্যই আমরা কাজ করছি। কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না- সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে।’’
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, আমরা দেখছি প্রশাসন বিএনপির পক্ষ অবলম্বন করছে অনেক জায়গায়। মাঠপর্যায়ে যেসব জায়গায় চাঁদাবাজি চলছে, সেই জায়গায়ও প্রশাসন আসলে নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা বলেছি, এ ধরনের প্রশাসন যদি থাকে তাহলে এর অধীনে নির্বাচন করাটা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন, আমলাতন্ত্র, পুলিশ নিশ্চিত করতে হবে।’’
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট ক জ করছ আম দ র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।