২২ বছর পর তালেবানের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার রাশিয়ার
Published: 18th, April 2025 GMT
রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট গতকাল বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের শাসকদল তালেবানের ওপর থেকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তকমা প্রত্যাহার করেছে। ফলে এখন থেকে রাশিয়ায় তালেবান বৈধভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবে।
চার বছর আগে দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণকারী তালেবানকে ২০০৩ সাল থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রাশিয়া। তাই এত দিন পর্যন্ত গোষ্ঠীটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা রাশিয়ার আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর বাহিনী প্রায় দুই দশক অবস্থানের পর ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে তালেবান। এরপর থেকে তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত মধ্য এশিয়ার দেশটিকে স্থিতিশীল করতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলারও আহ্বান জানাতে থাকেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত চার বছরে তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা একাধিকবার রাশিয়া সফর করেছেন। গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আফগানিস্তানের ‘বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা প্রয়োজনীয়’। কারণ আফগানিস্তানে বর্তমানে তাঁরাই ক্ষমতায়।
২০২৪ সালের মে মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিচার মন্ত্রণালয় তালেবানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। চলতি মাসের শুরুতে প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব জমা দেয়। গতকাল প্রস্তাবটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান সুপ্রিম কোর্ট।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রায় এক দশক আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সেনা মোতায়েন ছিল। তখন তাঁরা দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অর্থাৎ তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতময় অতীত রয়েছে। তবে মস্কোর সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার তালেবানকে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য করতে সহায়তা করবে।
গত কয়েক বছরে এশিয়ার অন্যান্য দেশও তালেবানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে কাজাখস্তান তালেবানের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা প্রত্যাহার করে। পরের বছর একই পথে হাঁটে কিরগিজস্তান।
তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। নারীদের প্রতি তালেবানের মনোভাব আন্তর্জাতিক মহলে চরমভাবে সমালোচিত হয়ে আসছে।
স্বীকৃতি না দিলেও কাবুলে বর্তমানে চীন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ইরানের দূতাবাস রয়েছে। তালেবানের অধীনে ২০২৩ সালে আফগানিস্তানে প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে চীন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল ব ন র ওপর থ ক আফগ ন স ত ন পর থ ক ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
রিচি সোলায়মান। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই আড়ালে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’। এতে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান। এই গানচিত্র এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী
আপনার অভিনীত গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’ নিয়ে কিছু বলুন?
‘বাবা শুনতে কি পাও’ শিরোনামের এই বিশেষ গানটি তৈরি করেছেন প্রান্তিক সুর। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গজল ঘরানার শিল্পী শিরিন চৌধুরী। গানটির কথাও লিখেছেন শিল্পী নিজে। গানচিত্রে একটি সুন্দর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বপ্ন যেন মরে না যায় এবং শুধু মানুষটাকে নয়, তার স্বপ্নকেও ভালোবাসার সংবেদনশীল এবং হৃদয়স্পর্শী বাবার অনুরোধের বার্তা থাকছে এতে। গানের কথার সূত্র ধরে গল্পনির্ভর ভিডিওটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত আর মেয়ের ভূমিকায় আমি। অনেকদিন পর হায়াত চাচার সঙ্গে কাজ করলাম।
এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
কিছুদিন আগে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী আমায় গানচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য বললেন। যখন শুনলাম এই গানে বাবার ভূমিকায় অভিনয় কবেন আবুল হায়াত চাচা; ঠিক তখনই রাজি হয়েছি। কারণ, আমি হায়াত চাচার পরিচালনায় অনেক নাটকে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাই ভাবলাম বাবা দিবসের এই কাজটি আমাদের আরও একটি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাক। আমাদের এই কাজে একজন মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবাকে ঘিরে তার স্মৃতি, ভালোবাসা আর না বলা কথাগুলো উঠে এসেছে। কাজটি করার সময় আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। একজন বাবার অবদান যে কত বিশাল, সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না–এই গানচিত্রে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।
আপনাকে এখন টিভি নাটকে খুব কম দেখা যায়। ইচ্ছা করেই দূরে সরে আছেন?
আমি এখন পরিবার আর নিজের সময়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি কাজের মানের প্রতিও সবসময় সংবেদনশীল ছিলাম। নাটকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কখনও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন তো অনেক সময় দেখা যায় গল্প বা চরিত্রের গভীরতা কম, কাজগুলো অনেকটাই ‘কনটেন্ট ভিউ’ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, যখন কাজ করি, সেটি যেন দর্শকের মনে থাকে। তাই শুরু থেকে এখনও বেছে বেছেই কাজ করছি।
এখন নাটকে ‘ভিউ’ ও ‘ট্রেন্ড’ অনুসারে শিল্পী নির্বাচন হয় বলে অভিযোগ আছে...
এটি ঠিক যে এখন ‘ভিউ’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো– দীর্ঘ মেয়াদে এই দর্শক আসলে কাদের মনে রাখে? আমার মনে হয়, একটি শিল্পমাধ্যমে যখন কেবল সংখ্যা দিয়ে শিল্পী বা কাজের মান বিচার হয়, তখন সেখানে অন্তর্নিহিত শিল্পবোধ অনেকটা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমাদের প্রথম দায় নিজের চরিত্রের প্রতি। ‘ভিউ’ দিয়ে নয়, শিল্পের গভীরতা দিয়ে একজন শিল্পীকে বিচার করা উচিত।
বর্তমান সময়ে ওটিটি মাধ্যমের প্রসারে নাটকের গুণগত মানে কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
ওটিটি একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। নতুন গল্প আর নতুন নির্মাতাদের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। যারা আগে টিভিতে প্রভাবশালী ছিলেন, এখন তারা ওটিটিতেও আধিপত্য রাখছেন। এটি শিল্পের জন্য মোটেই ভালো নয়। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি বলব, ওটিটি হোক কিংবা টিভি–প্রতিভা ও গল্পকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ‘চেনা মুখ’ বা ‘সেলিব্রেটি প্যাকেজ’কে নয়।
যে সিন্ডিকেটের কথা বললেন, তা কী ভাঙা যায় না?
অবশ্যই যায়। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, তারাই এখন সেই দলের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সেই সময় কিন্তু সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছেন। এখন পরিচয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নাট্যাঙ্গনের শিল্পটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ওটিটির কাজে আগ্রহ অনুভব করেন?
অবশ্যই। যদি ভালো গল্প আর শক্তিশালী চরিত্র পাই, আমি ওটিটিতেও কাজ করতে চাই। অশ্লীলতা বা অহেতুক সাহসী দৃশ্যের নামে যদি গল্পের গুরুত্ব হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি আমাকে টানে না। শিল্পমান থাকলেই আমি আগ্রহী।
বর্তমান প্রজন্মের নতুন অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
নতুনদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমি তাদের একটা কথাই বলি, নিজেকে সময় দিন, নিজেকে গড়ুন। রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন। টিকে থাকার জন্য শুধু সৌন্দর্য নয়, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও আত্মসমালোচনাও জরুরি।