জোসেফ কোটস আদতে পোয়েমস সিনড্রোম (POEMS Syndrome) নামে বিরল এক রক্তের ব্যাধিতে ভুগছিলেন। এতে তাঁর হাত-পা একরকম অচল হয়ে গিয়েছিল। হৃদ্‌যন্ত্র আর কিডনিও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায়। কিছুদিন পরপর তাঁর পেট থেকে তরল বের করা হতো। এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো শারীরিক অবস্থাও ছিল না। কোনো আশাই আর অবশিষ্ট ছিল না। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোসেফ কোটস বলেন, ‘আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, পরিণতিটা (মৃত্যু) কোনোভাবেই আর এড়ানো গেল না।’

আরও পড়ুনবিরল এই রোগের কথা আর লুকিয়ে রাখতে পারলেন না সামান্থা২৯ অক্টোবর ২০২২

কোটস হাল ছেড়ে দিলেও তাঁর প্রেমিকা তারা থিওব্যাল্ডের মনের কোণে তখনো আশা জেগে ছিল। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসরত ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক ও চিকিৎসক ড.

ডেভিড ফেগেনবমের সঙ্গে ই–মেইলে যোগাযোগ করেন। বিরল রোগবিষয়ক এক সামিটে সেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এই জুটির। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেগেনবমের ফিরতি ই–মেইল পান তারা থিওব্যাল্ড। সেখানে একসঙ্গে কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও স্টেরয়েডের বিরল সমন্বয়ে নতুন করে চিকিৎসা শুরু করার পরামর্শ দেন ফ্যাজেনবাম।

পরামর্শমতো চিকিৎসা শুরু করেন কোটস ও তারা। আর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করেন কোটস। চার মাসের মাথায় অর্জন করেন স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো শারীরিক সক্ষমতা। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ, তবে চিকিৎসা চলছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে পদ্ধতিতে কোটসের স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো, সেটা ডেভিড ফেগেনবম পেয়েছিলেন এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায়!

আরও পড়ুনদুনিয়ায় এমন বিরল ক্ষমতাধর আছে ৮০ জনের মতো১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বিরল রোগের চিকিৎসা ও গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিচ্ছেন। বিরল ও আগ্রাসী ক্যানসার, জটিল নিউরোলোজিক্যাল কন্ডিশনে প্রায়ই এআইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেসব কাজও করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই লাখ মানুষ বিভিন্ন বিরল রোগে আক্রন্ত। যেসব রোগ সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানেও খুব বেশি কিছু জানা যায় না, অর্থাৎ এমন বিরল রোগ আছে হাজারো ধরনের। এসবের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অনুমোদিত চিকিৎসা নেই।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক মেরিনকা জিটনিক বলেন, ‘একেকটি বিরল রোগের ধরন, উপসর্গ বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন ওষুধ তৈরি করা খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধের উপকরণ, গুণাগুণ এবং রোগের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এআই সহজেই চিকিৎসাপদ্ধতি ও ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারে। আবার কোন ওষুধের সঙ্গে কোন ওষুধ মেশালে শরীরে তা কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, সে সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অনেক সময় অন্য রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ এআইয়ের পরামর্শ অনুসারে অনেক অজানা রোগেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন “মিনোক্সিডিল” নামের ওষুধটি আগে কেবল উচ্চরক্তচাপ উপশমে ব্যবহার করা হতো, সেটি এখন বিশেষ ধরনের চুল পড়ার সমাধানেও ব্যবহৃত হচ্ছে।’

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি একটি বিশেষ এবং বিরল ঘটনা। লেখাটি কোনোভাবেই কোনো রোগবালাইয়ে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে অনুপ্রাণিত করে না।আরও পড়ুনএই বিরল পরিস্থিতিতে মানুষ খেতে বসলে অঝোরে কাঁদতে থাকে৩০ জুলাই ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে

আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ 

গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে 
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার। 
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান। 
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‌‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
  • টানা ৩৬ ঘণ্টা খেললেন গলফ