আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ এবং বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে স্মারকলিপি দিয়েছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের ভাষ্য, উপদেষ্টা তাঁদের আশার বাণী শোনাতে পারেননি। তাই আরেক জুলাই গড়ে তুলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করা হবে।

আজ সোমবার বেলা ২টার পর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে জাতীয় সচিবালয় এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা আওয়ামী লীগসহ দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও জুলাই গণহত্যাসহ সব অপকর্মের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম থেকে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করছেন।

এরপর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসব দাবি জানাতে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে ভেতরে যায়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিক আল আরমান ও রাফিদ এম ভুইয়া।

সচিবালয় থেকে বেরিয়ে প্রধান ফটকে বিকেল চারটায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্য মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে ইতিবাচক কিছু বলবেন, এমন আশা ছিল। কিন্তু তিনি কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা দাবি করেন মুসাদ্দিক। তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনায় মনে হয়েছে সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দূতাবাসগুলোর প্রশ্নের মুখোমুখি হাতে চায় না বলেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছে না। কিন্তু এটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। ৫ আগস্ট জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে, এ দেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাই কালবিলম্ব না করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।

মুসাদ্দিক আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, গণ–আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। আরেক জুলাই গড়ে তুলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করতে হবে। আমরা শিগগিরই দাবি আদায়ে মাঠে নামব।’ শিগগরিই কর্মসূচি ঘোষণা করার কথাও জানান এই শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুনআওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা২ ঘণ্টা আগে

এ সময় সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, সংবিধানের ১৩২ ধারা নিয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। এই ধারা বাতিলের জন্য উপদেষ্টাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ধারাটি হলো সরকারি কর্মকর্তাদের নামে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। এ ক্ষেত্রে বিসিএস কর্মকর্তা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর পুলিশ হলে আইজির অনুমতি লাগে। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত অনেক মামলার আবেদন হয়েছে। কিন্তু সেগুলো থানায় যায়নি। তাই এই ধারায় সংশোধনী বা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাদিক আল আরমান বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা দেশের আনাচকানাচে তাদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। সে জন্য আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন ষ দ ধ কর দ ক আল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

২ মে ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ, প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ৭ অপরাধ

‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে’ আগামী ২ মে (শুক্রবার) রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত দল এনসিপি।

সমাবেশ উপলক্ষে তৈরি করা প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলের সাতটি অপরাধের কথা উল্লেখ করেছে এনসিপি। এগুলো হলো ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ দমনের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড; গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহরণ; ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ; ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো হত্যাযজ্ঞ; লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচার; ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চালানো নজিরবিহীন গণহত্যা।

এরপর চারটি দাবিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রচারপত্রে। এগুলো হলো প্রতিটি অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন গঠন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যবস্থা; আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নের মীমাংসা তথা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল; বিচার চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও তাঁদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশে প্রায় ২০ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে। এই সমাবেশে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২১ এপ্রিল থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিল করছে এনসিপি। এর ধারাবাহিকতায় এবার কিছুটা বড় পরিসরে ঢাকা মহানগর শাখার ব্যানারে সমাবেশ হতে যাচ্ছে।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরের থানা পর্যায়ে কিছুদিন ধরে এনসিপির যে কর্মসূচিগুলো হচ্ছে, এগুলোরই চূড়ান্ত সমাবেশটা হবে আগামী ২ মে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত
  • রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • ইসলামবিরোধী প্রস্তাবনা রুখে দেওয়া হবে: মামুনুল হক
  • ২ মে ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ, প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ৭ অপরাধ
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • ‘বিশ্বের নজরদারির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল’
  • রাখাইনে করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হেফাজতের
  • ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
  • নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি