জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্রে
Published: 21st, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এক গোপন গ্রুপ চ্যাটকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম হয়েছে। একটি সিগন্যাল চ্যাটে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ও যুদ্ধবিমান হামলার সময় ও লক্ষ্যবস্তুর বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়, যা নিয়ে হোয়াইট হাউস শুরুতে দাবি করেছিল, এতে কোনো শ্রেণিবদ্ধ (ক্লাসিফায়েড) তথ্য ছিল না। তবে সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাটলান্টিক যখন পুরো চ্যাট প্রকাশ করে, তখন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
সিএনএনের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ চ্যাটে যে হামলার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, তা পরিষ্কারভাবে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনে পরিচালিত অভিযানের ইঙ্গিত দেয়। এমনকি চ্যাটের নামেও ‘হুতি’ শব্দটি ছিল।
অবশ্য হোয়াইট হাউস এবং হেগসেথ বারবার বলে আসছেন এই বার্তাগুলো শ্রেণিবদ্ধ নয়, শুধু ‘সংবেদনশীল’। কিন্তু বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। সিএনএনের একাধিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তিগতভাবে শ্রেণিবদ্ধ ছিল কি না, সে বিতর্কে না গিয়ে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত এ ধরনের তথ্য আদৌ ওপেন চ্যাটে শেয়ার করা উচিত ছিল কি না।
এ নিয়ে সিএনএনে কথা বলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের সাবেক উপপরিচালক (কৌশল ও পরিকল্পনা) মার্ক কিমিট এবং সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক বেত স্যানার। স্যানার গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে বাইডেন ও ট্রাম্প উভয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এই দুই বিশেষজ্ঞ বুধবার সিএনএনে উপস্থিত ছিলেন। পরে স্যানারের সঙ্গে ফোনেও কথা হয় প্রতিবেদকের।
পেন্টাগনের একাধিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, হেগসেথ যে সময়, লক্ষ্যবস্তু ও হামলার পদ্ধতি উল্লেখ করেছিলেন, তা নিঃসন্দেহে শ্রেণিবদ্ধ তথ্য। মার্ক কিমিট অবশ্য বলেন, ‘সবাই মূল প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। হেগসেথ যদি বলেন এটি শ্রেণিবদ্ধ নয়, তাহলে তার আইনি ভিত্তি থাকতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হওয়া উচিত এমন তথ্য কি শ্রেণিবদ্ধ হওয়া উচিত ছিল?’ তাঁর মতে, ‘উত্তর খুব সহজ—হ্যাঁ, অবশ্যই হওয়া উচিত ছিল।’
স্যানার বলেন, বিষয়টি জটিল করার কিছু নেই। কোনো তথ্য যদি সরকারি কর্মকর্তারা খোলা ই–মেইলে পাঠাতে না চান, তাহলে সেটি শ্রেণিবদ্ধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মস্কো বা বেইজিংয়ের গোয়েন্দা হিসেবে এমন তথ্য হাতে পান এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল স্পষ্ট হয়ে যায়, তবে সে তথ্য স্পষ্টতই শ্রেণিবদ্ধ।’
স্যানার স্পষ্ট করে বলেন, যুদ্ধবিমান বা ড্রোন হামলার প্রস্তুতির মতো সামরিক তথ্য কখনোই উন্মুক্তভাবে জানানো উচিত নয়। এমন তথ্য স্পষ্টতই শ্রেণিবদ্ধ। তিনি আরও যোগ করেন, হেগসেথ চাইলে যদি কোনো তথ্য জনসমক্ষে আনতে চান, তাহলে তার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজন হয়।
স্যানারের মতে, সিগন্যাল অ্যাপে গ্রুপ চ্যাট হওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু চ্যাটের ভেতরে যখন হেগসেথ ও সিনেটর ভ্যান্সের মধ্যে নীতিগত মতপার্থক্য প্রকাশ পায়, তখন সেই তথ্য শত্রুদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুপক্ষ) বুঝে ফেলেছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় বা আদৌ হয় কি না। প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ছাড়াই হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।’ ভ্যান্স চ্যাটে হামলার যৌক্তিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সেই মতামত প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হোয়াইট হাউস দাবি করছে, হেগসেথ যে তথ্য দিয়েছেন, তা ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা’ নয়। তাৎক্ষণিক আক্রমণের পরিকল্পনা। কিমিট বলেন, ‘এটা কেবল শব্দের খেলা নয়। যুদ্ধ পরিকল্পনা অনেকটাই ভবিষ্যতের জন্য তৈরি খসড়া। আর আক্রমণের পরিকল্পনা মানে বাস্তব অভিযান, যা আরও সংবেদনশীল।’ তার ব্যাখ্যায়, ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা অনেক সময় কম স্পর্শকাতর, কারণ সেগুলো সম্ভাব্যতা–নির্ভর। কিন্তু কোনো সামরিক অভিযান যখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে, তখন তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে।’
ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বলছেন, এই চ্যাট মার্কিন সেনাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তবে কিমিট বলেন, এই দাবি কিছুটা অতিরঞ্জিত। কারণ, সিগন্যাল একটি তুলনামূলক নিরাপদ অ্যাপ এবং সংশ্লিষ্ট সামরিক অভিযান সফলভাবেই শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এমন অনেক ভুল ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখেছে, যেগুলো অনিচ্ছাকৃত ছিল এবং যার কারণে বাস্তব ক্ষতি হয়নি।’
হোয়াইট হাউস ও হেগসেথ ক্রমাগত এ বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিমিটের মতে, এই অস্বীকারমূলক আচরণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, ‘ভুল স্বীকার করুন, সংশোধন করুন এবং আবার যেন এমন না হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। অস্বীকার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার কোনো মানে নেই।’ স্যানার বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন অ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ চালানো বন্ধ করা উচিত।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন, তাঁদের ব্যবহৃত ফোন সরকারি ছিল কি না, তা–ও জানা যায়নি। স্যানার বলেন, ‘এই বিষয়টি রাজনৈতিক তর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে না এনে, একটি শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) যোগাযোগব্যবস্থাকে আরও সুরক্ষিত করা এখন সময়ের দাবি। যাতে আমাদের প্রতিপক্ষরা জানতে না পারে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) কী করছি, কীভাবে করছি।’
সূত্র: সিএনএন
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত ৪, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট। পরে বিবিসি আরেকজন নিহতের খবর দেয়। এতে নতুন হামলায় চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।