‘আমারে ৫ লাখ টাকা দেও, ব্যাকআপ দিমু’
Published: 21st, April 2025 GMT
‘আমি এত কিছু করতাছি, এত চাপ নিতাছি। আমারে ৫ লাখ টাকা দিয়া দেও। আমি ব্যাকআপ দিমু। তোমার হাতে নিয়া আসতে হবে। আমারে তো আর গেঞ্জি দিলা না!’ মোবাইল ফোনের এক প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলছিলেন এসব কথা। অপর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়– ‘বাড়ির কাম করতে গিয়া খুব খারাপ অবস্থা। ঢাকা থেকে ফুলহাতা গেঞ্জি আইনা দিমুনে।’
গাজীপুরের শ্রীপুরে এমন কথোপকথনের একটি অডিও ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এ কথোপকথনের বিভিন্ন অংশ আজ সোমবার ফেসবুকে পোস্টও করেছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেলিম সিকদার নামে এক ঝুট ব্যবসায়ীর সঙ্গে লেনদেন বিষয়ে এসব কথা বলেছেন শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। যদিও তিনি কথোপকথনটিকে অসত্য ও বানানো বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি তাঁর কণ্ঠ নয়। এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।
তবে শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে সেলিম সিকদার বলেন, এটি তাঁর সঙ্গে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নালের কথোপকথনের রেকর্ড। জয়নাল শ্রীপুর থানায় যোগদানের পর তাঁকে ডেকে নিয়ে মাসে মাসে দেড় থেকে দুই লাখ করে টাকা নিয়েছেন। মাস দুয়েক আগে তাঁর কাছে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে তাঁকে ডেকে নিয়ে আটক করে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়াও হয়েছিল ওসিকে। তবুও ওসি তাঁকে ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠান। রমজান মাসের ৬ দিন আগে ১ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আসেন তিনি। সেলিম সিকদার রিদিশা গ্রুপের রিদিশা ফর্মুলা ওয়ান কারখানায় ঝুট ব্যবসা করতেন। সেই ঝুট ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য ওসিকে বারবার টাকা দিতে হয়েছে।
সেলিম সিকদার বলেন, ‘আমি জানতাম, ওসি আমাকে ব্যবসা করতে দেবে না। এ কথা ভেবেই তাঁর সঙ্গে কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিলাম।’
ফাঁস হওয়া ওই অডিও কথোপকথনে টেলিফোনে ওসি জয়নালকে বলতে শোনা যায়, তিনি স্থানীয় একজনের মধ্যস্থতায় সেলিমকে কারখানা থেকে ঝুট বের করতে সহযোগিতা করছেন। স্থানীয় ওই ব্যক্তিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলে বিনা বাধায় ঝুট বের করে নিয়ে যেতে পারবেন বলে ওসি সেলিমকে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। কথোপকথনের শুরুর দিকেই ওসিকে বলতে শোনা যায়– ‘আমি আমিনুলকে বইলা দিছি। আমি বলছি ও (সেলিম) আমারে ১ লাখ ৩০ দেয়। .
এ প্রসঙ্গে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘আমার কণ্ঠ এডিট করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করায় সেলিম আমার বিরুদ্ধে অডিও এডিট করে ভাইরাল করেছে। আমার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।’
ওসি বলেন, প্রতিদিন শত শত ফোন আসে। অনেকে কাজের কথা বলে, অনেকে অকাজের কথাও তো বলে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ব যবস জয়ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
সারজিস আলমের চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেন রাশেদ খান
সম্প্রতি নানা ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল রোববার এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সারজিস আলম।
পোস্টে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত অবৈধ এক টাকাও স্পর্শ করিনি, অনৈতিক কোনো সুপারিশকে প্রশ্রয় দিইনি। এটা আমার কাছে অভ্যুত্থানের রক্তের কমিটমেন্ট। আমার নিজের সঙ্গে নিজের কমিটমেন্ট।
সারজিস বলেন, কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপপ্রচার, মনগড়া তথ্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ চোখে পড়েছে। শুধু একটি ক্ষেত্রে কমেন্টে রিপ্লাই করেছি। বাকিগুলো এড়িয়ে গিয়েছি। যে অভিযোগগুলোর সঙ্গে দূর-দূরান্তেও আমি আমার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাইনি সেগুলোর ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা কীভাবে সম্ভব? বরং পেছনে লেগে থাকা শত শত প্রপাগান্ডা মেশিনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দেওয়া শ্রেয় মনে করি। সর্বশেষ ৮-৯ মাসের এই অল্প সময়ে এত প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি যে এমন প্রপাগান্ডা স্বাভাবিকভাবেই এখন ফেস করতে হবে এবং সামনের দিনে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
পোস্টের একটি অংশে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে সবচেয়ে বেশি নোংরা মানসিকতা এবং বিবেকবোধহীন আচরণের পরিচয় দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়েও শুধু টিআরপি আর ফুটেজের আশায় প্রপাগান্ডা মেশিন হিসেবে মনগড়া আর সাপ্লাই পাওয়া তথ্যকে একত্রিত করে তিনি আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি অভিযোগ করেছেন। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমাকে নিয়ে তার ফেসবুকে লেখা অভিযোগগুলো তিনি যদি সত্য প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। আর যদি না পারেন তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। গাটস থাকলে এই চ্যালেঞ্জটুকু তিনি গ্রহণ করুক।
সারজিস আলমের এমন কড়া পোস্টের একদিন পর আজ সোমবার জবাব দিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে সারজিস আলম আমাকে কল করেন। ১ ঘণ্টার অধিক সময় মোবাইলে তার সঙ্গে কথোপকথন হয়। তিনি আমার কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। বিস্তারিত আলাপ তুলে ধরতে হলে অনেক লেখা লাগবে। কথোপকথনের সারসংক্ষেপ হলো, আমি তার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছি। তিনি ভুল ভাঙাতে চেষ্টা করেন ও আমাকে বলেন, আমি যেন তাকে নিয়ে একটা পজিটিভ পোস্ট করি। কিন্তু আমি করিনি, কারণ আমি যেসব বক্তব্য দিয়েছি, তার যথেষ্ট আলামত ও তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
রাশেদ বলেন, প্রথমত, যুগান্তর পত্রিকায় ছাত্র সমন্বয়ক নামধারী গাজী সালাহউদ্দীন তানভীর সচিবালয়ে নিজেকে সারজিস ও হাসনাতের পরামর্শে আসার কথা স্বীকার করেন। যমুনা টিভির একটি ভিডিও আমাকে দেখান সারজিসের খুব কাছের একজন। তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, সারজিসের প্রভাব খাটিয়ে ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেন তানভীর। আনসার ক্যুর দিন সারজিসের সঙ্গে তানভীর কেন সচিবালয়ে প্রবেশ করলেন এবং একসঙ্গে বের হলেন?
তিনি আরও বলেন, ডিসি নিয়োগের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তানভীর যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হয়েছেন, সেই তথ্যও কেউ জানতেন না। সেটিও আমি সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠজন থেকে পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন সারজিস এনসিপিতে পদ দিতে রেফারেন্স করলেন? এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি সারজিসকে প্রশ্ন করি। তিনি আমাকে উত্তর দেন, শুধু কি আমি একাই রেফারেন্স করেছি, আর কেউ করেনি? কথোপকথনের সময় হাসনাতের নাম আসে। তখন তিনি বলেন, তাহলে কেন আপনি শুধু আমার নাম নেন? এনসিপি সূত্রমতে, গাজী সালাহউদ্দীন তানভীরের সঙ্গে সারজিস ও হাসনাত দুজনেরই ঘনিষ্ঠতা আছে। যেটা সারজিসও স্বীকার করেছেন এবং তাদের দুজনের রেফারেন্সই ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তি এনসিপির মতো তরুণদের দলে গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছে!
দ্বিতীয়ত, যখন এনসিটিবির কেলেঙ্কারি সামনে আসে, তখন রাখাল রাহাকে নিয়ে সারজিস পোস্ট করলেও গাজী সালাহউদ্দীন তানভীরের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। কেন গাজী সালাহউদ্দীন তানভীরকে এড়িয়ে গেলেন সারজিস? তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এজন্য? ডিসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে অভিযুক্ত থাকা ব্যক্তি পুনরায় কাদের সহযোগিতায় এনসিটিবিতে কাজ করার সুযোগ পেলেন?
তৃতীয়ত, তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাদা প্রাডো গাড়ি নিয়ে যেতেন, কারা কারা তার গাড়ির অপেক্ষায় থাকতেন, সেটি ছবি দেখে বোঝার চেষ্টা করুন। চতুর্থত, যখন গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি ফারুক হাসানের ওপর শহীদ মিনারে আহত লীগের সদস্যরা হামলা করেন, এদের জামিন করাতে সহযোগিতা করেন সারজিস আলম ও জুলাই ফাউন্ডেশনের স্নিগ্ধ। গ্রেপ্তারের ১১ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পান তারা। এই জামিনের নেপথ্যেও ছিলেন সারজিস আলম।
এ ছাড়া গণমাধ্যমে সারজিসের বিষয়ে সেসব তথ্য এসেছে, আমি সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। এমনকি এনসিপির কয়েকজন নেতাও আমাকে বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী পুনর্বাসনের অভিযোগ (একজন সাংবাদিক প্রমাণসহ পোস্ট করেছেন) এবং বিভিন্ন সময় ডা. জারাসহ তাদের নেতাদের পোস্টের আলোকে মন্তব্য করেছি। সারজিসের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব তার দল ও সরকারের। তার যদি চ্যালেঞ্জ করতে এতই মন চাইত, তবে সংবাদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। কিন্তু ৭ মাসেও তিনি সেই চ্যালেঞ্জ করেননি! অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন তিনি এত আশ্রয়-প্রশয় দেন? কার সহযোগিতায় তানভীর সচিবালয়ে ও এনসিটিবিতে ঢুকলেন? এসবের তদন্তে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন তদন্ত কমিটি গঠন করছে না? তাহলেই তো জানা যাবে, সারজিস আলম দোষী না নির্দোষ?