ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করেছেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। এই ঘটনার জেরে মার্কিন ডলারের মান গতকাল সোমবার তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

ট্রাম্প আগেও ফেডারেল রিজার্ভের সমালোচনা করেছেন। গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই সমালোচনার ধার আরও বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। বলেন, ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বড় পরাজয় ঘটেছে; এই বলে ট্রাম্পের দাবি, অবিলম্বে নীতি সুদহার কমানো হোক। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে সৃষ্টি অনিশ্চয়তার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

সোমবার ইউএস ডলার ইনডেক্সের (বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের অবস্থান) মান ৯৭ দশমিক ৯২৩-এ নেমে আসে, যা ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর সর্বনিম্ন। এ ছাড়া সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের মান গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। সেই সঙ্গে ইউরোর মানও বেড়েছে; প্রতি ইউরোর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১ দশমিক ১৫ ডলার।

হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট শুক্রবার বলেন, প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সাগরেদরা এখন খতিয়ে দেখছেন, ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে দেওয়া যায় কি না। কদিন আগেই ট্রাম্প বলেছেন, জেরোম পাওয়েলকে চাকরিচ্যুত করতে তাঁর আর তর সইছে না। তাঁর মূল লক্ষ্য একটাই, নীতি সুদহার কমানো।

ইস্টার সানডের ছুটির পর বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজার গতকাল তেমন একটা জমেনি। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তিনটি সূচকেরই পতন হয়েছে ২ শতাংশের বেশি। প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর সূচক নাসডাকের পতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান হিসেবে জেরোম পাওয়েল সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে নন। যে কারণে প্রেসিডেন্ট তাঁকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করতে পারেন না। শুধু নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফেডের চেয়ারম্যানকে সরানো যায়। অর্থাৎ তাঁকে সরানো সহজ কাজ নয়। তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ফেডের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

গতকাল সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতেও ডলারের দরপতন হয়েছে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ দশমিক ৬৬ ইয়েন। ১৫ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে জাপানি ইয়েনের লং পজিশনও (দরবৃদ্ধিজনিত বাজি) রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে।

সেই সঙ্গে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মান সেপ্টেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। প্রতি পাউন্ডে এখন ১ দশমিক ৩৪ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। অস্ট্রেলীয় ডলারের মানও চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে; প্রতি অস্ট্রেলীয় ডলারে পাওয়া যাচ্ছে শূন্য দশমিক ৬৪ মার্কিন ডলার। নিউজিল্যান্ডের ডলারের মানও বেড়েছে।

কানাডার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান করপের প্রধান বাজার বিশেষজ্ঞ কার্ল স্কামোটা এক গবেষণা নোটে বলেন, এই বাস্তবতায় ফেডারেল রিজার্ভের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য খর্ব করে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় তাদের পক্ষে নাটকীয়ভাবে নীতি সুদহারের রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ দুটি, বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও শতভাগ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

ডলার অবশ্য কয়েক মাস ধরেই শক্তি হারাচ্ছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারের শেষ কর্মদিবসে (১৮ এপ্রিল) ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ছিল ৯৯ দশমিক ২৩। অথচ জানুয়ারি মাসে এই সূচকের মান ছিল ১১০। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসের পর ডলার ইনডেক্সের মান কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ১১ এপ্রিল এই সূচকের মান ২০২৩ সালের জুলাই মাসের পর এই প্রথম ১০০-এর নিচে নেমে যায়। খবর দ্য গার্ডিয়ান

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ডলার অনেকটা সোনার মতো। বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে খ্যাতি আছে ডলারের। যে কারণে ডলার এত রমরমা। বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলেই যারা শেয়ার-ঋণপত্র ছেড়ে সোনা বা ডলারে ঝোঁকে, তারা হঠাৎ আমেরিকার মুদ্রা থেকে মুখ ফেরাল কেন। ট্রাম্প প্রথমে ভেবেছিলেন, পাল্টা শুল্কের ঘোষণা আসার পর শেয়ারবাজারে সূচকের পতন হবে বা ডলারের বিনিময় হার কমে যাবে এবং বছরের শেষ ভাগে শুল্কের অর্থ দিয়ে কর হ্রাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এর অর্থ হলো, মার্কিন সরকার বন্ড ছাড়ার পরিমাণ সীমিত করে দেবে অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সামগ্রিকভাবে সরকারের ঋণে লাগাম পরাবে।

কিন্তু শুল্ক ঘোষণার পর যেভাবে মন্দার আশঙ্কা জেঁকে বসে, তাতে মার্কিন সরকারকে ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে যেভাবে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমে যাওয়ার অর্থ হলো, ডলারে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। পরিণতিতে ডলারের বিনিময় হার কমে যায়, এখন ঠিক তা–ই হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব পর ত ম স র পর হ র কম স মব র পর য য় দশম ক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

৭ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির পরিচালনার পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

কোম্পানিগুলো হলো- কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসি, রংপুর ডেয়ারি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, মনোস্পুল বাংলাদেশ পিএলসি, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স পিএলসি ও একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলো পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কনফিডেন্স সিমেন্ট: কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১১.২৩ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮৮.৬৮ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৮ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২৫ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

রংপুর ডেয়ারি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস: কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৬১ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৯২ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ৭ ডিসেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

মনোস্পুল বাংলাদেশ: কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩.৭৬ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৫.০৫ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২৩ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২.২১ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩.৪৭ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ১৮ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২০ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২.০৯ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫৪.০৮ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৪ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারনে আগামী ২০ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩.৬০ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৪.৭৯ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২৩ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

একমি পেস্টিসাইডস: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ০.০১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১.১৪) টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৪১ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২০ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ