মার্কিন ডলারের দর তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির জের
Published: 22nd, April 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করেছেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। এই ঘটনার জেরে মার্কিন ডলারের মান গতকাল সোমবার তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
ট্রাম্প আগেও ফেডারেল রিজার্ভের সমালোচনা করেছেন। গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই সমালোচনার ধার আরও বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। বলেন, ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বড় পরাজয় ঘটেছে; এই বলে ট্রাম্পের দাবি, অবিলম্বে নীতি সুদহার কমানো হোক। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে সৃষ্টি অনিশ্চয়তার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
সোমবার ইউএস ডলার ইনডেক্সের (বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের অবস্থান) মান ৯৭ দশমিক ৯২৩-এ নেমে আসে, যা ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর সর্বনিম্ন। এ ছাড়া সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের মান গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। সেই সঙ্গে ইউরোর মানও বেড়েছে; প্রতি ইউরোর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১ দশমিক ১৫ ডলার।
হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট শুক্রবার বলেন, প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সাগরেদরা এখন খতিয়ে দেখছেন, ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে দেওয়া যায় কি না। কদিন আগেই ট্রাম্প বলেছেন, জেরোম পাওয়েলকে চাকরিচ্যুত করতে তাঁর আর তর সইছে না। তাঁর মূল লক্ষ্য একটাই, নীতি সুদহার কমানো।
ইস্টার সানডের ছুটির পর বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজার গতকাল তেমন একটা জমেনি। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তিনটি সূচকেরই পতন হয়েছে ২ শতাংশের বেশি। প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর সূচক নাসডাকের পতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান হিসেবে জেরোম পাওয়েল সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে নন। যে কারণে প্রেসিডেন্ট তাঁকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করতে পারেন না। শুধু নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফেডের চেয়ারম্যানকে সরানো যায়। অর্থাৎ তাঁকে সরানো সহজ কাজ নয়। তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ফেডের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
গতকাল সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতেও ডলারের দরপতন হয়েছে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ দশমিক ৬৬ ইয়েন। ১৫ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে জাপানি ইয়েনের লং পজিশনও (দরবৃদ্ধিজনিত বাজি) রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে।
সেই সঙ্গে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মান সেপ্টেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। প্রতি পাউন্ডে এখন ১ দশমিক ৩৪ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। অস্ট্রেলীয় ডলারের মানও চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে; প্রতি অস্ট্রেলীয় ডলারে পাওয়া যাচ্ছে শূন্য দশমিক ৬৪ মার্কিন ডলার। নিউজিল্যান্ডের ডলারের মানও বেড়েছে।
কানাডার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান করপের প্রধান বাজার বিশেষজ্ঞ কার্ল স্কামোটা এক গবেষণা নোটে বলেন, এই বাস্তবতায় ফেডারেল রিজার্ভের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য খর্ব করে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় তাদের পক্ষে নাটকীয়ভাবে নীতি সুদহারের রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ দুটি, বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও শতভাগ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
ডলার অবশ্য কয়েক মাস ধরেই শক্তি হারাচ্ছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারের শেষ কর্মদিবসে (১৮ এপ্রিল) ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ছিল ৯৯ দশমিক ২৩। অথচ জানুয়ারি মাসে এই সূচকের মান ছিল ১১০। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসের পর ডলার ইনডেক্সের মান কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ১১ এপ্রিল এই সূচকের মান ২০২৩ সালের জুলাই মাসের পর এই প্রথম ১০০-এর নিচে নেমে যায়। খবর দ্য গার্ডিয়ান
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ডলার অনেকটা সোনার মতো। বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে খ্যাতি আছে ডলারের। যে কারণে ডলার এত রমরমা। বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলেই যারা শেয়ার-ঋণপত্র ছেড়ে সোনা বা ডলারে ঝোঁকে, তারা হঠাৎ আমেরিকার মুদ্রা থেকে মুখ ফেরাল কেন। ট্রাম্প প্রথমে ভেবেছিলেন, পাল্টা শুল্কের ঘোষণা আসার পর শেয়ারবাজারে সূচকের পতন হবে বা ডলারের বিনিময় হার কমে যাবে এবং বছরের শেষ ভাগে শুল্কের অর্থ দিয়ে কর হ্রাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এর অর্থ হলো, মার্কিন সরকার বন্ড ছাড়ার পরিমাণ সীমিত করে দেবে অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সামগ্রিকভাবে সরকারের ঋণে লাগাম পরাবে।
কিন্তু শুল্ক ঘোষণার পর যেভাবে মন্দার আশঙ্কা জেঁকে বসে, তাতে মার্কিন সরকারকে ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে যেভাবে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমে যাওয়ার অর্থ হলো, ডলারে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। পরিণতিতে ডলারের বিনিময় হার কমে যায়, এখন ঠিক তা–ই হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব পর ত ম স র পর হ র কম স মব র পর য য় দশম ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা দাবিতে প্রশাসনকে ‘সালাম’
‘২ জুন কি পেলাম? কি পাওয়ার কথা ছিল? সালাম প্রশাসন!’- লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি- অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের কমিশন গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
সোমবার (১৬ জুন) বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিতব্য হতে যাওয়া সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভূক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামীকালের এ সভায় যেকোনোভাবে যেন ডাকসু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো পাশ হয়, সেজন্যই তাদের এমন তোড়জোড়।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে নামাজের কক্ষ নিয়ে বিতর্ক
ছাত্রদলের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রতিবাদ ডুজার
ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, একটি পক্ষ ডাকসু নির্বাচন চায় না এবং এই পক্ষ বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে।
অনশনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে শক্তিশালী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী বলার চেষ্টা করছে যে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের দোসর আছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পুরোপুরি সক্ষম নয়; সুতরাং ডাকসু নির্বাচন দেওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব কি কেবল প্রশাসন-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের? কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাসহ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ব্যর্থতাগুলো লক্ষণীয়, সেগুলো ঘোচানোর জন্যই ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন।”
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, ছাত্রলীগ যেভাবে হল নিয়ন্ত্রণ করা, দখলদারিত্ব কায়েম করা, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভিতর ক্ষমতার বলয় তৈরি করত-ঠিক এখনো আমরা এই প্রক্রিয়া দেখছি। আর এই প্রক্রিয়ার যারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, তারাই মূলত ডাকসু নির্বাচনে বাঁধা দিতে চায়।”
এর আগে, ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিন আমিন মোল্লার নেতৃত্বে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকজন শিক্ষার্থী।
গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ ২ জুনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওয়াদা করলে অনশন ভাঙ্গেন তারা। সে সময় অনশন শেষে ইয়ামিনসহ দুই শিক্ষার্থীকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছিল।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী