সংস্কার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলতে বাধা নেই। 

তবে আগে জুলাই অভ্যুত্থানসহ বিগত সাড়ে ১৫ বছরের গুম-খুন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত ‘জুলাই, পিলখানা, শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ’ দাবিতে শহীদি সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। এ সময় সরকারের কাছে শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে চার দাবি উত্থাপন করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি এগুলো পূরণে ১০০ দিনের আলটিমেটাম দেন। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান তিনি।

দাবিগুলো হলো– আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু, আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ, শাপলা চত্বরের ঘটনার স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু; পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন এবং সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সমাবেশে শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে আশুলিয়ায় ভ্যানের ওপর যখন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তখনও জীবিত ছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

শহীদ সাইমের মা বলেন, ‘আমার বুকটা শূন্য করে দিয়েছে। ঈদ গেল, আমি করতে পারি নাই। বুকে রক্তক্ষরণ হলেও ছেলে হত্যার বিচার পাইনি। স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসি দেওয়া হোক।’
শহীদ ইমাম হাসানের ভাই বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কেন আমাদের রাস্তায় দৌড়াতে হবে? সংস্কার হবে, নির্বাচনও হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।’
শহীদি সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘সংস্কার না নির্বাচন, আপনারা এ খেলা বাদ দিয়ে বিচার নিশ্চিত করুন। জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগে এ দেশে কোনো কিছু প্রাসঙ্গিক হতে পারে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমরা যখনই তাদের (সরকার) কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তারা আমাদের পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়। যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা ও জুলাইয়ে হাজারো মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল?’
সমাবেশে বক্তৃতা করেন আপ বাংলাদেশের সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণহত য র আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী