জুনেই ব্রাজিলের ডাগআইউটে আনচেলত্তি
Published: 29th, April 2025 GMT
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) কার্লো আনচেলত্তির সাথে কথাবার্তা পাকা করে ফেলেছ। আসন্ন জুনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ব্রাজিল জাতীয় দল ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে লড়াইয়ে নাম্বে। সিবিএফ আশা ব্যক্ত করেছে এই সময় ডাগ আউটে তারা ইতালিয়ান ম্যানেজার আনচেলত্তিকে পাবেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে আনচেলত্তির চুক্রি ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এই ইতালিয়ান কোচ চলমান মৌসুম শেষে আর মাদ্রিদে থাকছেন না। সিবিএফ এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি করেনি আনচেলত্তির সঙ্গে। তবে কোপা দেল রে ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে রিয়াল হেরে যাওয়ার পর, সিবিএফের দুই প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
ইসপিএন তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আনচেলত্তি ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনকে প্রাথমিক সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন। সিবিএফ তাই আশা করছে ৬৫ বছর বয়সী এই কোচ ২৬ মে রিও ডি জেনেইরোতে আসবেন। ঠিক লা লিগার শেষ ম্যাচের দুই দিন পর। রবিবার (২৭ এপ্রিল) ইএসপিএন জানায়, আনচেলত্তি ক্লাব ছাড়ার বিষয়ে রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে শেষ হাসি বার্সার
বার্সার বিপক্ষে ফাইনালের আগে রিয়ালের শঙ্কা সাম্প্রতিক ফর্ম
রিয়ালের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচদের একজন আনচেলত্তি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দুই মেয়াদে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও দুটি লা লিগা শিরোপা জিতেছেন। তবে চলতি মৌসুম রিয়ালের জন্য হতাশাজনক। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের কাছে হারে। শনিবার কোপা দেল রে’র ফাইনালে বার্সার বিপক্ষে পরাজিত হয়। বর্তমানে লা লিগার টেবিলে বার্সা অপেক্ষা চার পয়েন্ট পিছিয়ে আছে রিয়াল; হাতে আছে পাঁচটি ম্যাচ।
অন্যদিকে ব্রাজিল মার্চ মাস থেকে কোচবিহীন। কনমেবল বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে লজ্জাজনকভাবে হেরে যাওয়ার পর কোচ ডোরিভাল জুনিয়রকে বরখাস্ত করে সিবিএফ। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা বর্তমানে বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
আগামী ৪ জুন ইকুয়েডরের এবং ৯ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বাছাইপর্বের ম্যাচে মাঠে নাম্বে ব্রাজিল। যদি আনচেলত্তি ওই সময়ের মধ্যে রিয়াল ছাড়েন, তাহলে ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে লস ব্ল্যাঙ্কসদের অংশগ্রহণের জন্য নতুন কোচ বা একজন অন্তর্বর্তী কোচ নিয়োগ দিতে হবে। শনিবার কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সার বিপক্ষে হারের পর আনচেলত্তি বলেন, “আমি রিয়ালে থাকব কি না, সেটা এখন আলোচনার বিষয় নয়, তা আগামী কয়েক সপ্তাহে নির্ধারিত হবে।”
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ছ ইপর ব ফ ইন ল স ব এফ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫