দেশের কৃষি খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একটি গবেষণা প্রকল্প। প্রচলিত ইউরিয়ার বিকল্প হিসেবে উদ্ভাবিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব ও খরচ-সাশ্রয়ী ‘ন্যানো ইউরিয়া’, যা ব্যবহার করলে ইউরিয়া সারের খরচ ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এ প্রযুক্তি শুধু কৃষিকেই নয়, বরং দেশের অর্থনীতিকে আরো টেকসই করার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন এ ন্যানো ইউরিয়া উদ্ভাবন করেছেন যবিপ্রবির কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ল্যাবরেটরি অব ন্যানো বায়ো অ্যান্ড অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (নেম ল্যাব) প্রধান গবেষক ড.

জাভেদ হোসেন খান। তার দীর্ঘ ৭ বছরের নিরবচ্ছিন্ন এই গবেষণার ফলে তৈরি হওয়া এ সারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈব সার প্রতিষ্ঠান ‘কোলা বায়ো’ এর সঙ্গে যৌথ চুক্তির মাধ্যমে।

আরো পড়ুন:

ডিএপি সার ও ফসফরিক কিনতে ব্যয় ৩০৭ কোটি টাকা

উৎপাদনে ফিরল আশুগঞ্জ সার কারখানা 

ন্যানো ইউরিয়া সরাসরি গাছের পাতায় স্প্রে করে প্রয়োগ করা হয়। এ সারের কণাগুলো এতটাই ক্ষুদ্র যে, গাছ তা দ্রুত শোষণ করতে পারে। ফলে অপচয় ও কম হয় এবং মাটির গুণগত মানেও কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।

ড. জাভেদ হোসেন খান বলেন, “এই ন্যানো ইউরিয়া প্রচলিত ইউরিয়ার চেয়ে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত খরচ সাশ্রয়ী হবে। এক বিঘা জমিতে যেখানে প্রচলিত ইউরিয়া সারের জন্য প্রায় ৪ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়, সেখানে এই ন্যানো ইউরিয়া ব্যবহারে খরচ হবে মাত্র ২৩০ টাকা।”

এ প্রযুক্তির মাঠপর্যায়ের কার্যকারিতা এরই মধ্যে বগুড়ার শেরপুর, যশোরের আব্দুলপুর ও ঢাকার গাজীপুর অঞ্চলে বিভিন্ন ফসলের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। কৃষকদের দাবি, চাষাবাদে এ ন্যানো ইউরিয়া প্রয়োগের ফলে প্রচলিত ইউরিয়ার চেয়ে বিঘাপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া খরচ কমেছে প্রায় ৯৪ শতাংশ।

ন্যানো প্রযুক্তি নিয়ে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল যবিপ্রবির ল্যাবরেটরি অব ন্যানো বায়ো অ্যান্ড অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোলাবায়ো এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কোলাবায়োর পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ফ্রেডেরিক কেন্ডিরগি এবং যবিপ্রবির পক্ষে ড. জাভেদ হোসেন খান।

এ চুক্তির আওতায় কোলাবায়ো যবিপ্রবির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি গ্রহণ করবে এবং নিজেদের জৈব সারবিষয়ক প্রযুক্তিও নেম ল্যাবেরর সঙ্গে বিনিময় করবে। আগামী ৫ বছর এই দুই প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে গবেষণা ও উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টন ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়, যার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। শুধু ২০২৪ অর্থবছরেই ইউরিয়া আমদানিতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। ন্যানো ইউরিয়া ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে এই খাতের ব্যয় ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবও অনেকাংশেই কমবে। অতিরিক্ত সার জমিতে না পড়ার ফলে জমির দূষণও রোধ হবে। 

গবেষক ড. জাভেদ হোসেন খান জাপানের ওয়াসিদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তার ১৩০টিরও বেশি গবেষণাপত্র ও ছয়টি পেটেন্ট রয়েছে। এছাড়া গবেষণার সম্মাননাস্বরূপ ২০২২ সালে তিনি জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ