নবীগঞ্জ গার্লস স্কুলে এডহক কমিটি নিয়ে বিতর্ক
Published: 29th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের নবীগঞ্জ গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের নবগঠিত এডহক কমিটি শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চার সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয়।
এই এডহক কমিটিতে অভিভাবক সদস্য হিসেবে ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন নামের একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন নামের ওই ব্যক্তি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা এক শিক্ষার্থীর বাবা। অকৃতকার্য শিক্ষার্থী হিসেবে তার সন্তান এ বছর আবারও এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যালয়ের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে কিভাবে একজন দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবককে এডহক কমিটির সদস্য করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এখানে পুরোপুরি অযৌক্তিকভাবে এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমনকে সদস্য করা হয়েছে। তার উপর সেই শিক্ষার্থী গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। তারা মনে করেন, এমন একজন ব্যক্তি কমিটিতে থাকলে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব দেখা দিতে পারে।
যেখানে বিদ্যালয়ের উন্নতি ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞ ও শিক্ষানুরাগী অভিভাবকদের সদস্য করা প্রয়োজন, সেখানে একজন দশম শ্রেণীর ফেল করা শিক্ষার্থীর অভিভাবককে অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হতাশাজনক।
অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আরও বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে এমন ব্যক্তিদের থাকা উচিত যারা শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিবেদিত থাকবেন।
অভিভাবক সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নবীগঞ্জ গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের ভবিষ্যৎ পরিচালনা এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে অভিভাবকরা গভীর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে এই বিতর্কিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে তা পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সারাদেশে পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অবশেষে তার সীমাহীন অনিময়-দুর্নীতির কারণে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পেছনে বিএনপির বড় অবদান রয়েছে বলে বারবার নিজেদের জাহির করা বিএনপি নেতাদের অনেকেই আবার পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির দিকে হাটছে। বিশেষ করে বন্দরের সর্বত্র পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে চাইছে একটি পরিবার।
তারা হাট, ঘাট, মাঠ, স্ট্যান্ডের মতো করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে চাইছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই স্কুল এন্ড কলেজেও নিজেদের লোকদের ধরে এনে এডহক কমিটির অন্তর্ভুক্ত করেছে। অনেকটা যেমন খুশী, তেমন সাজো স্টাইলে যাকে খুশী ধরে এনে বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করছে তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সায়মা খানমের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি, ফলে তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে অভিভাবকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং অবিলম্বে তারা এই বিতর্কিত কমিটি ভেঙ্গে দিতে শিক্ষা অফিসার, ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এবং জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.
বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা এডহক কমিটির সদস্য হতে পারবেনা এমন কোনো নিয়ম নেই।
পরবর্তী ২০২৪ সালে ২৫ এপ্রিল গেজেটে বিষয়টি স্পষ্ট আকারে উল্লেখ করা আছে জানালেন তিনি বলেন, তাহলে আমাকে সেই গেজেটটি পাঠান, আমি দেখি। আপনার কাছে সেই গেজেট নেই? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি এই কর্মকর্তা।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ দশম শ র ণ র র সদস য কম ট র কম ট ত পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’