শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
Published: 30th, April 2025 GMT
শেয়ারবাজারের সূচক খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। আশার ভিত্তি হিসেবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধসহ অর্থনীতিতে অনেক ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে। এসবের প্রভাব শিগগিরই শেয়ারবাজারে পড়বে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে আজ বুধবার শেয়ারবাজার নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নিয়োজিত এই বিশেষ সহকারী বলেন, আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা থাকবে। ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনতে করছাড় সুবিধা দেওয়া হবে। তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করহারের ব্যবধান বাড়ানো হবে। তবে করহারের ব্যবধান কত বাড়ানো হবে, তা এখনই বলছেন না জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ ব্যবধান বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাজারে আমরা এই মুহূর্তে লোক বদল করে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চাই না। সমস্যার সমাধান না করে শুধু লোক বদল করে বাজারের উন্নয়ন হবে না। এ কারণে আমরা সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পথে রয়েছি। চাইলেও আমরা রাতারাতি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ, সব সিদ্ধান্তের ভালো-খারাপ দিক থাকে। এ জন্য আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন যাতে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজার থেকে হয়, সে জন্য নতুন বিধান করা যায় কি না, তা–ও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বহুজাতিক যেসব কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে, সেগুলোকে এবং সরকারি-বেসরকারি কিছু ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে চাই।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বিএসইসির কমিশনের সঙ্গে বাজার উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে জরুরি সভা করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। ওই বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ তিন কমিশনার ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, সেগুলো বাজার তদারকির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজারবিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশি লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়ার কথাও জানান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ব্যাংক খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত রাখা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ ষ সহক র শ য় রব জ র ব এসইস র করছ ড় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হওয়ায় এবং ওইসব কোম্পানির আবেদনের আলোকে সময়সীমা বাড়িয়েছে বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এক বছর সময় দিয়ে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কমপক্ষে এক জন করে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কোম্পানি এ শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব কোম্পানি থেকে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যার আলোকে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।