দেশ–বিদেশের প্রেক্ষাগৃহে চলছে ‘বরবাদ’। ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবিটি মাস পেরিয়েছে। ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পেয়েছে। দর্শকের আগ্রহে থাকা ছবিটির আবহসংগীতও প্রশংসা কুড়াচ্ছে। কাজটি করেছেন আরাফাত মহসীন, যে কারণে তিনিও রয়েছেন আলোচনায়। চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনায় আরাফাতের অভিষেক ঘটে ২০১৬ সালে ‘আইসক্রিম’ দিয়ে। এরপর ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ প্রকল্পের ‘চিয়ার্স’ কাজটি করেন। বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে কাজ শুরু করা আরাফাত মহসীন একে একে ‘দামাল’, ‘তুফান’ ও ‘বরবাদ’ ছবির সংগীত পরিচালনার কাজ করেন। জানালেন, ‘তুফান’ ও ‘বরবাদ’ দিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় তিনি। বললেন, ‘“সুড়ঙ্গ” থেকে মিউজিক নিয়ে আলোচনার শুরু হলেও “তুফান” ও “বরবাদ” কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। কারণ, এ ছবিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক যুক্ত হয়। এর আগে এতটা লার্জার দ্যান লাইফ মিউজিক হতো না। কয়েক বছর ধরে গল্প যে আয়োজনে গেছে, মিউজিকেও তাই আলাদা নজর দিতে হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষেরাও হলিউড-বলিউডের সিনেমা নিয়মিত দেখেন। ছবি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে হয়েছে, বড় পরিসরের মিউজিক করা উচিত। পিয়ানো দিয়ে বাজিয়ে দিলে চলবে না। বড় আয়োজনের মিউজিকের কারণে প্রেক্ষাগৃহে গল্পের পাশাপাশি শিল্পীদের অভিনয় এবং উপস্থাপনের একটা দারুণ অভিজ্ঞতা নিচ্ছে।’
প্রেক্ষাগৃহের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্মের আবহসংগীত ও গানের কাজ করেছেন আরাফাত মহসীন।
এ তালিকায় রয়েছে ‘অল টাইম দৌড়ের ওপর’, ‘ইউটিউমার’, ‘মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট’, ‘বিকেল বেলার পাখি’, ‘মাইনকার চিপায়’, ‘বোধ’, ‘কষ্টনীড়’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘ব্ল্যাক মানি’ ও ‘আমলনামা’। নিজের এত কাজের মধ্যে ‘তুফান’ ও ‘বরবাদ’ সবচেয়ে বেশি আলোচনার ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন শাকিব খান, জানালেন আরাফাত মহসীন। বললেন, ‘শাকিব খানের সিনেমা এবং তাঁর রিলেটেড সবকিছু আমজনতার কাছে খুব দ্রুত পৌঁছে যায়। দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর বিশাল ভক্তকুল রয়েছে। সেই ভক্তদের আমারও নতুন এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার বিষয় আছে। পরিচালকেরা তাঁকে নতুনভাবে উপস্থাপনের কারণে তাঁর দিকে সবার নজর আরও বেশি থাকে। যে কাজে সবার নজর থাকে, সেখানে আমাকে আরও নতুনভাবে প্রমাণেরও বিষয় আছে। শাকিব ভাই দিন শেষে আমার মিউজিককে মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই চেষ্টা ছিল নতুন কিছু দেওয়ার।’
সিনেমার পোকা
কয়েক বছর ধরে সিনেমার জন্য গান তৈরি আর সংগীত পরিচালনা করলেও ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি প্রেম ছিল আরাফাত মহসীনের। স্কুল ছুটি শেষে বাসায় ফিরে সিনেমা দেখতে বসে যেতেন। কখনো টেলিভিশনে, কখনো ভিসিডি ভাড়া করে এনে। ছবি দেখতে দেখতে দুপুরে ভাত খেতেন।
অনেকের অনেক রকম শখ থাকলেও আরাফাত মহসীনের শখ ছিল সিনেমা দেখা। ছোটবেলায় চিত্রনায়ক মান্নার সিনেমা বেশি দেখা হতো। এ তালিকায় আছে ‘গরীবের বউ’, ‘বাবার আদেশ’, ‘আম্মাজান’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘মাস্তানের উপর মাস্তান’, ‘তেজী পুরুষ’, ‘রাজনীতির খেলা’। দেখতেন রাজ্জাক, জসিম ও রুবেলদের সিনেমাও। রাজ্জাক অভিনীত ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ছুটির ঘন্টা’, ‘অবুঝ মন’, ‘দ্বীপ নিভে নাই’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’ তাঁর স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল। চিত্রনায়ক আলমগীরের ‘মায়ের দোয়া’ তাঁর প্রিয় সিনেমার একটি। আরাফাত বললেন, ‘স্কুলে থাকতে বাংলাদেশের বাংলা ছবি দেখতে খুব ভালো লাগত। ভারতের বাংলা ছবিও দেখতাম। ওই সময় ছবির মিউজিক বেশ মজার লাগত।’
ঘরে বসে মান্না, রুবেলদের অনেক সিনেমা দেখা হলেও প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দেখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। আরাফাত জানালেন, নিজে সিনেমায় মিউজিক শুরুর পর ছবি দেখার প্রবণতা আরও বেড়েছে। বললেন, ‘আমি প্রতি শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে বসে দুইটা ছবি দেখার চেষ্টা করি, সেদিন যে দেশের ছবিই দেখানো হোক। দেশের বাইরে ঘুরতে গেলেও এ অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার কাছে এ অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্ব বহন করে। “অ্যানিমেল” দেখছি সিঙ্গাপুরে। বিমান থেকে নামার পর দেখি, হোটেল পাব তিনটায়; এরপর আমি প্রেক্ষাগৃহে ঢুকে সাড়ে তিন ঘণ্টার সিনেমাটা দেখি। নেপালে উৎসবে গিয়ে “ডুন”, “শয়তান” দেখেছি। চেষ্টা করি প্রেক্ষাগৃহে প্রতিনিয়ত কী চলছে, দেখার। এরপর ভাবতে থাকি, বাইরের দেশের সিনেমায় এত বড় আয়োজনের মিউজিক হলে আমাদের এখানে কেন হচ্ছে না! চেষ্টা করি নিজের কাজে বড় পরিসরে কিছু যোগ করতে।’
আরাফাত মহসীন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ, চলবে মঙ্গলবারও
ঈদের ছুটির পর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সোমবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দাবি আদায়ে একজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি শেষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসুচী ঘোষণা করেছেন তারা।
এদিকে, আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আরো পড়ুন:
গুম বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন করবে সরকার: আইন উপদেষ্টা
সচিবালয় ও যমুনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
অন্যদিকে নেতারা অভিযোগ করেছেন, আধ্যাদেশ বাতিল না করে সরকার তাদের সঙ্গে সাপ লুডু খেলা খেলছে। দাবি মানা না হলে আন্দোলন কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে।
ঈদের ছুটির পর সোমবার (১৬ জুন) বেলা ১১টার পর সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনের সামনে বাদাম তলায় কর্মচারীরা জড়ো হন। সেখান থেকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির ও মো. নুরুল ইসলাম।
তারা এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘মানি না মানব না’, ‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন’, ‘মানি না মানব না, অবৈধ কালো আইন’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান ধরেন।
এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে এসে সমাবেশ করেন।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আমরা মাঠে ময়দানে ঘুরতেছি। অনেক ক্যাডার সার্ভিস থেকে অনেকেই আন্দোলনে নেমে গেছে। আমরা একটা জিনিস বুঝে গেছি সরকার আমাদের সঙ্গে সাপ-লুডু খেলা খেলছে। আমরা চাইলাম মহার্ঘ ভাতা, পদ-পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা। সেটা ঠেকানোর জন্য সরকার করল অভিন্ন নিয়োগবিধি। তারপর এটা নিয়ে সচিবালয়ে বিশাল হুলুস্থুল শুরু হলে সেটা আমরা থামিয়ে দিলাম।”
তিনি বলেন, “যদি আমাদের কথায় কান না দেন তাহলে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন ডাকতে বাধ্য হব। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, অধ্যাদেশ জারির আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ পর্যন্ত আমরা কেউ কোনো আলোচনার প্রস্তাব পাইনি। তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেও লুকোচুরি আছে। আজ আমরা রোদে পুড়ে আন্দোলন করছি, আপনারা এসিতে বসে আছেন। আমার এক বন্ধু বলেছে উপদেষ্টার দপ্তর, সচিবের দপ্তর, প্রশাসনের শাখায় খবর নেবেন তারা আমাদের মিটিংয়ে আসে কিনা। যদি না আসে আমরা তাদের আসতে বাধ্য করব। আমরা ধরে নেবে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আইন প্রণেতাদের সহযোগী।”
নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এগুলো দেখতে, শুনতে ও বুঝতে চাই না। আমরা শুধু দেখতে চাই এই অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। আমরা সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বুঝি না। আমরা শুধু বুঝি এই অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। আমাদের পিছু হঠার কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাদাম তলায় বেলা ১১টায় জমায়েত হব। প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে আসবেন। যদি না আসেন তাহলে ধরে নেব তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। এরপর যদি আমরা আলোচনার আমন্ত্রণ না পাই, তাহলে আমাদের দাবির সঙ্গে নতুন নতুন দাবি যুক্ত হবে।”
নুরুল ইসলাম বলেন, “এই অধ্যাদেশ বাতিল করলে আমরা নীরবে ঘরে ফিরে যাব। যদি আমাদের আগুনে জ্বালিয়ে আপনারা খেলা করতে চান, তাহলে আমরা এমন খেলা খেলব আপনারা ঘরে ঢুকতে পারবেন না। আপনারা সে কাজ করতে বাধ্য করবেন না।”
এ সময় ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির, কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এরপর নেতারা আধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে দুপুর পৌঁনে ১টার দিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে স্মারকলিপি দেন।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
আন্দোলন চলাকালে গত ৪ জুন ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি সোমবার বিকেলে প্রথম বৈঠকে বসছে। কমিটির সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
এর আগে কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সর্বশেষ ঈদের ছুটির আগে তিন জুন পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সরকারের সাতজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। ১৫ জুনের মধ্যে চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না করলে ১৬ জুন থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ