ফতুল্লায় মাদক ব্যবসায়ী সাদিকের বিরুদ্ধে বড় ভাইকে মারধরের অভিযোগ
Published: 4th, May 2025 GMT
ফতুল্লা বটতলা রেললাইন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মামলার আসামি সাদিক সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আপন বড় ভাইকে মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী বড় ভাই মেহেদী সাজ্জাদ। রবিবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এবিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই আতিকুর রহমান বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মামলা রয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই আমি তদন্ত করে দেখছি।
লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করা হয় - সাদিক সাজ্জাত (২৪), পিতা- মৃত মোঃ সাজ্জাদ আলী, স্বর্না আক্তার (২৫), স্বামী- সাদিক সাজ্জাত, নিহার বানু শিল্পি (৫৩), স্বামী- মৃত মোঃ সাজ্জাদ আলী, বোরহান (৫০), পিতা- অজ্ঞাত, মনি (৫০), স্বামী- বোরহান, সর্ব সাং- কুতুবাইল রেললাইন বট তলা, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়ণগঞ্জ দের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, উক্ত ১নং বিবাদী আমার আপন ছোট ভাই ২নং বিবাদী ১নং বিবাদীর স্ত্রী, ৩নং বিবাদী আমার মাতা, ৪ ও ৫নং বিবাদী ১নং বিবাদীর শশুর শাশুরী।
আমি সহ উক্ত ১ ও ৩নং বিবাদী আমার উল্লেখিত ঠিকানায় আমার বাবার পৈত্রিক সম্পত্তির বাড়ীতে অবস্থান করিতাম। আমার ভাই এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। উক্ত ৩নং বিবাদীর ইন্দনে ১নং বিবাদী ২নং বিবাদীকে আমাদের অজ্ঞাত সারে বিগত ৪ মাস পূর্বে বিবাহ করে।
পরবর্তীতে ২নং বিবাদী সহ ৪ ও ৫ নং বিবাদীরা আমার বাড়ীতে আসিয়া অবস্থান শুরু করে সহ ১নং বিবাদীকে মাদক ব্যবসা করিতে সাহায্য করে। আমি আমার মাতা উল্লেখিত ৩নং বিবাদীকে বিষয়টি জানাইলে আমার মাতা বিষয়টি আমলে না নিয়া উল্টা ১নং বিবাদীকে সাপোর্ট করিতেছে।
আমি বিবাদীদের এহেন কর্মকান্ডে বাধা নিষেধ করিলে বিবাদীরা আমার সহিত অকারনে ঝগড়া করিয়া আমাকে মারধরের করে। আমি বিবাদীদের বিষয় আইনের ব্যবস্থা নিব জানাইলে উক্ত ২নং বিবাদী আমার নামে মিথ্যা ঘটনা সাজাইয়া আমার নামে মিথ্যা মামলা প্রদান করিয়া আমাকে হয়রানি করিবার হুমকি প্রদান করে।
বিবাদীরা আমার উল্লেখিত ঠিকানায় মাদক বিক্রয় সহ বিভিন্ন লোকজন আমার বাড়ীতে আসিয়া বিবাদীদের সহিত এক সঙ্গে মাদক সেবন করিত। গত ১ লা মে ১ ও ২নং বিবাদীরা বাড়িতে অজ্ঞাত ৪/৫ জনের সহিত মাদক সেবন কালে বাড়ীর পরিবেশ নষ্ট হয় বিধায় আমি ১ ও ২নং বিবাদীকে বাধা নিষেধ করিলে উল্লেখিত বিবাদীরা আমাকে এলোপাতাড়ী মারধর করিতে থাকে।
আমি কারণ জিজ্ঞাসা করিলে বিবাদীরা জানায় আমি তাহাদের পথের কাটা আমাকে জীবনে শেষ করিয়া উক্ত বিবাদীরা আমার বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ দখল করিবে।
আমি বিবাদীদের বিষয় আইনের ব্যবস্থা নিব জানইলে বিবাদীরা আমাকে উল্লেখিত ঠিকানা হইতে বাহির করিয়া দেয় সহ পুনরায় আমি আমার বাড়ীতে ফিরিলে আমাকে জীবনে মারিয়া ফেলার হুমকি প্রদান করে। বিবাদীদের হুমকিতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছি।
জানাগেছে, ফতুল্লা থানাধীন কাঠেরপুল থেকে রেললাইন পর্যন্ত গাঁজা ও ইয়াবার নিয়ন্ত্রক মাদক সম্রাট সাদিক সাজ্জাদ। তার নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে অন্তত দুই ডজন সেলসম্যান। যাদের দিয়ে ফতুল্লার কাঠেরপুল, কোতালেরবাগ, রামারবাগ, লামাপাড়া, শিবু মার্কেট এলাকায় মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে চিহ্নিত এই মাদক কারবারী।
সরাসরি টেকনাফ ডিলারদের যোগসাজস্বে পাইকারি দরে মাদক সাপ্লাই করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন এই মাদক সম্রাট। কিছুদিন পূর্বেও সাদিক নামধারী এই মাদক কারবারীর বাড়িতে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছিল ফতুল্লা থানা পুলিশের একটি টিম। যদিও সেসময় সেলসম্যানদের মাধ্যমে আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায় সে।
এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সময়ে নিরীহ ছাত্র - জনতার আন্দোলনে সরাসরি হামলা চালিয়েছে সাকিদ সাজ্জাদ ও তার বাহিনী। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ন র য়ণগঞ জ উল ল খ ত আম র ব ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
দুপুর ১টা বাজলেই ছুটির ঘণ্টা
ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা পেরোলেই ঢংঢং করে বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। খানিক বাদেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোলাহলের পরিবর্তে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার চিত্র।
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলে প্রধান শিক্ষকের খেয়ালখুশিমতো। সেখানে নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা বাজলেই পড়ে ছুটির ঘণ্টা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা
বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান যে যাঁর মতো।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হোসেন জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাম ডাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা খাতুনের ভাষ্য, প্রতিদিনই একটা-দুটো ক্লাস নেন শিক্ষকরা। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দেওয়া হয়। সামনে পরীক্ষা তবুও অন্যান্য ক্লাস হয় না। একই ভাষ্য ওই শ্রেণির অনন্যা খাতুনেরও।
অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আগের মতো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা সবাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের দোকান। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আব্দুর রহিম জানান, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রতিদিন দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়মে জড়িত। স্কুলের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিগগিরই ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
বিদ্যালয়ের পাশেই সহকারী শিক্ষক আবু খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার।’
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পতাকা নামাচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। শিক্ষক কক্ষে শূন্য চেয়ার-টেবিল।
বিকেল ৪টার আগে ছুটি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) সঙ্গে কথা বলেন।’
এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো. নুর উদ্দিন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বিকেল ৪টার আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।