রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হবে—এমন প্রত্যাশা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা অবস্থান অবশ্যই থাকবে। কিন্তু পাশাপাশি যেটা দরকার, সবাইকে কতগুলো মৌলিক জায়গায় একমত হতে হবে। তার জন্য নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাঁরা আশা করছেন, প্রত্যেকেই কিছু কিছু ছাড় দেবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। সংস্কার প্রশ্নের ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা করছে কমিশন। এর অংশ হিসেবে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে আজ আলোচনা হচ্ছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, তাঁরা প্রাথমিক পর্যায়ে যে ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। তাঁরা আশা করছেন, ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করতে পারবেন। তারপরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবেন তাঁরা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাসের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুততার মধ্যে সম্ভব একটি জাতীয় সনদের জায়গায় সবাইকে দাঁড় করানো। সেই চেষ্টায় দলগুলো সাহায্য-সহযোগিতা করছে।

রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হবে—এমন প্রত্যাশা করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা অবস্থান অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তার পাশাপাশি যেটা দরকার, সবাইকে কতগুলো মৌলিক জায়গায় একমত হতে হবে। তার জন্য নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাঁরা আশা করছেন, প্রত্যেকেই কিছু কিছু ছাড় দেবে।

আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে সহযোগিতা করা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চেষ্টা করছে। আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয় এই অর্থে যে আপনাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, আপনাদের সহযোগী শক্তি যারা, যাদের সঙ্গে আপনাদের ভিন্নমত আছে, তারাও একটু আলোচনা করুন নিজেদের মধ্যে। এটা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, জাতীয় সনদ তৈরির চেষ্টা, শুধু কমিশনের কাজ নয়। এটা জনগণের অর্পিত দায়িত্ব আমাদের ও আপনাদের (দলগুলোর) ওপর। আমাদের কাজটা হচ্ছে কেবল সহযোগিতা করা। তো সেই চেষ্টায় আপনারা অব্যাহত আছেন ও থাকবেন, এটা আশা করি।’

এ সময় নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, প্রায় প্রতিটি দল ১০০টির মতো বিষয়ে একমত হয়েছে। এগুলো নিয়েও একমত হয়ে একটা ঘোষণা দেওয়া যায়। এসব বিষয় নিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা যায়।

শহীদুল্লাহ কায়সারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল প্রতিনিধিদল কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। বৈঠকে অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় সনদ আপন দ র সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার পক্ষে এনসিপি

দেশে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে নতুন করে বিভাগ ঘোষণা করার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিপির সঙ্গে ‘বর্ধিত আলোচনায়’ বসে। আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।

জেলা পরিষদ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বাতিলের বিপক্ষে এনসিপি মত দিয়েছে উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়টিতে তাঁরা জোর দিয়েছেন। কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা বলেছে, কিন্তু এনসিপি জনগণের সরাসরি ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান করার কথা বলেছেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিপক্ষে এনসিপির অবস্থান জানিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সহিংসতা ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। এই নিয়ম আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তাদের স্বার্থে চালু করেছিল, যেটা সমাজে ভয়াবহ সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। দলীয় প্রতীক না থাকলে সমাজের ভালো মানুষগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সেটা তদন্ত করার প্রস্তাব দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এনসিপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত জানায়। সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা মনে করি, সংসদীয় কমিটির কাছে এই ক্ষমতা দেওয়া হলে রাজনীতিকীকরণ হতে পারে; বরং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটি তদন্ত করা যেতে পারে।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এনসিপি আগে অর্থ বিল এবং অনাস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার পক্ষে মত দেয়। আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে এনসিপির অবস্থানকে পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বান জানায়।

সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার পক্ষে আমরা এখনো অনড় রয়েছি। তবে এই অবস্থানের বিষয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করব।’

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে বিরোধী দলের সদস্যকে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। সারোয়ার তুষার বলেন, সব মন্ত্রণালয় না হলেও জনপ্রশাসন, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্বে বিরোধী দলের সদস্যদের রাখতে আলোচনা হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের প্রসঙ্গে সারোয়ার তুষার বলেন, এনসিপি এই প্রস্তাবের পক্ষে। তবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া সংবিধানের ছোট সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা রাখার প্রয়োজন নেই। কোন ধারায় গণভোটের বাধ্যবাধকতা থাকবে, সেটাও সুনির্দিষ্ট হতে হবে।

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে মত দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের ভোটের কথা বলেছে। এনসিপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সারোয়ার তুষার বলেন, ভোটারের আওতা আরও বাড়ানো জরুরি। সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদেরও ভোটার হিসেবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

এনসিপির পক্ষ থেকে বৈঠকে যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ছাড়াও অংশ নেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জাবেদ রাসিন ও আরমান হোসাইন। এর আগে সকালে বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা তুলে দেন এনসিপির প্রতিনিধিরা।

সকালে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করতে এই আলোচনা কার্যকরী হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

এনসিপির দেওয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সেই পথরেখা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আশা করছি, এই পথরেখা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাও এগিয়ে যাবে।’

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেয় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায় না ইসলামী আন্দোলন
  • ঐকমত্য কমিশনকে যেসব প্রস্তাব দি‌ল ইসলামী আন্দোলন
  • আনুপা‌তিক উচ্চকক্ষ চায় না‌গরিক ঐক্যও 
  • ঐকমত্যে পৌঁছাতে নাগরিক ঐক্য ছাড় দেবে
  • কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে: আলী রীয়াজ
  • মৌলিক সংস্কারে এনসিপির রূপরেখা, মূল লক্ষ্য তিনটি
  • ভোটারের বয়স ১৬ আর এমপি প্রার্থীর বয়স ২৩ বছর চায় এনসিপি
  • সংস্কার বিষয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরলেন এনসিপি নেতারা
  • কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার পক্ষে এনসিপি