রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেকে কিছু কিছু ছাড় দেবে, প্রত্যাশা আলী রীয়াজের
Published: 7th, May 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হবে—এমন প্রত্যাশা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা অবস্থান অবশ্যই থাকবে। কিন্তু পাশাপাশি যেটা দরকার, সবাইকে কতগুলো মৌলিক জায়গায় একমত হতে হবে। তার জন্য নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাঁরা আশা করছেন, প্রত্যেকেই কিছু কিছু ছাড় দেবে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। সংস্কার প্রশ্নের ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা করছে কমিশন। এর অংশ হিসেবে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে আজ আলোচনা হচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, তাঁরা প্রাথমিক পর্যায়ে যে ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। তাঁরা আশা করছেন, ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করতে পারবেন। তারপরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবেন তাঁরা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাসের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুততার মধ্যে সম্ভব একটি জাতীয় সনদের জায়গায় সবাইকে দাঁড় করানো। সেই চেষ্টায় দলগুলো সাহায্য-সহযোগিতা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হবে—এমন প্রত্যাশা করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা অবস্থান অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তার পাশাপাশি যেটা দরকার, সবাইকে কতগুলো মৌলিক জায়গায় একমত হতে হবে। তার জন্য নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাঁরা আশা করছেন, প্রত্যেকেই কিছু কিছু ছাড় দেবে।
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে সহযোগিতা করা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চেষ্টা করছে। আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয় এই অর্থে যে আপনাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, আপনাদের সহযোগী শক্তি যারা, যাদের সঙ্গে আপনাদের ভিন্নমত আছে, তারাও একটু আলোচনা করুন নিজেদের মধ্যে। এটা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, জাতীয় সনদ তৈরির চেষ্টা, শুধু কমিশনের কাজ নয়। এটা জনগণের অর্পিত দায়িত্ব আমাদের ও আপনাদের (দলগুলোর) ওপর। আমাদের কাজটা হচ্ছে কেবল সহযোগিতা করা। তো সেই চেষ্টায় আপনারা অব্যাহত আছেন ও থাকবেন, এটা আশা করি।’
এ সময় নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, প্রায় প্রতিটি দল ১০০টির মতো বিষয়ে একমত হয়েছে। এগুলো নিয়েও একমত হয়ে একটা ঘোষণা দেওয়া যায়। এসব বিষয় নিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা যায়।
শহীদুল্লাহ কায়সারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল প্রতিনিধিদল কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। বৈঠকে অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় সনদ আপন দ র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটে বাধা রাজনৈতিক দলগুলো
নির্বাচন কমিশন, খান ফাউন্ডেশনের ‘‘এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রু রির্জাভড সিট ইন পার্লামেন্ট: ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স?’ (সংসদে সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ণ: লড়াই নাকি পালানোর প্রবণতা?’ শিরোনামের গবেষণা প্রতিবেদন, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন নিউজ লেটার ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ১৯৭৩-১৯৭৫ মেয়াদের প্রথম জাতীয় সংসদে ১৫টি সংরক্ষিত আসনের প্রতিনিধিরাই ছিলেন সংসদের নারী প্রতিনিধিত্ব। ১৯৭৯-১৯৮২ মেয়াদে দ্বিতীয় সংসদে ২ জন নির্বাচিত ও ৩০টি নারী আসন মিলিয়ে মোট ৩২ জন নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৮৮-৯০ মেয়াদে চতুর্থ সংসদে সংরক্ষিত আসন ছিল না। ৪ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৯১-১৯৯৫ মেয়াদে পঞ্চম সংসদে ৫ জন নির্বাচিত সহ ৩৫ জন নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির এক তরফা ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হন। ৩০টি সংরক্ষিত আসন ছিল। ওই নির্বাচনটি বাতিল হয়ে ওই বছরের জুন মাসে (১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে) ৭ম সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে সরাসরি নির্বাচিত ৮ নারীসহ মোট নারী প্রতিনিধি ছিলেন ৩৮ জন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে ৭টি আসনে সরাসরি ও ৪৫টি সংরক্ষিত আসনসহ মোট ৫২ জন নারী সংসদ সদস্য হন। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদের নবম জাতীয় সংসদে ২১ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হন। তবে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মমতাজ ইকবাল মারা গেলে ওই আসনের উপ নির্বাচনে পুরুষ নির্বাচিত হন। ওই মেয়াদে নারী আসন বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়। মোট নারী সংসদ সদস্য হন ৭০ জন। আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এর দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন ছিল একতরফা ও বির্তকিত। দশম জাতীয় নির্বাচনে ১৮ জন সরাসরি সহ মোট নারী সংসদ সদস্য ছিলেন ৬৮ জন, ২০১৮ সালে ২৩ জন সরাসরি নির্বাচিতসহ মোট ৭৩ জন ও ২০২৪ সালে ১৯ জন সরাসরি নির্বাচিতসহ মোট ৬৯ জন নারী প্রতিনিধি ছিলেন।
দলগুলোর মনোভাবনারী আসন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টিতে উন্নীত করতে হবে এবং আগের মতো করে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত আসনসংখ্যার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বিতরণ করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, তাঁরা পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সংসদীয় আসন ৪০০টি এবং এর মধ্যে ১০০টি নারী আসনের বিষয়ে একমত।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরা ১০০ নারী আসনে সারসরি নির্বাচনের পক্ষে। তবে পরে তাঁরা নারী আসনের বিষয়ে একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন। সেখানে বলেছেন, প্রতিটি দল ১০-১৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তাতে ৩৫০-৪০০ নারী প্রার্থী পাওয়া যাবে। যাঁরা নির্বাচনে জয়ী হবেন, তাঁরা সংসদ সদস্য হবেন। আর যেসব নারী প্রার্থী পরাজিত হবেন, তাঁদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া ১০০ জন হবেন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য।
অন্যদিকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল, সংসদে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ করা। এর মধ্যে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা। সেসব আসনে নারী প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পরে জমা হওয়ায় তাদের সুপারিশ কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্স বা কাজের পরিধিতে অর্ন্তভুক্ত করা যায়নি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ফলে দলগুলোর সঙ্গে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আবার সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ করা এবং এর মধ্যে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব দেশের বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও বিভিন্ন দলের নেতারা মনে করেন।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, নারী আসনের বিষয়ে কোনো সম্মানজনক উপায় বের হয়নি, এটা দুঃখজনক। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনব্যবস্থায় দলগুলোর অনাগ্রহের বড় কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা বা বেশিসংখ্যক নারীকে সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া—বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই।
সামান্তা শারমিন বলেন, প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে অস্ত্রের ঝনঝনানির মাধ্যমে, দুর্নীতি করে, প্রচুর অর্থ খরচ করে নির্বাচনে জিতে আসেন অনেকে। আরেকটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক নারীকে সংরক্ষিত আসনে জায়গা দেওয়া হয়। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল, সংসদে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ করা। এর মধ্যে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা। সেসব আসনে নারী প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে।‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে সীমাবদ্ধজাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনগুলোর নাম ‘সংরক্ষিত মহিলা আসন’। ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। সংরক্ষিত আসনের সুবিধা প্রথমে ১০ বছরের জন্য রাখা হয়েছিল। পরে ১৯৭৮ সালে সংরক্ষিত আসনসংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ৩০। একই সঙ্গে ১০ বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়। ১৯৮৭ সালে সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ছিল না।
এরপর ১৯৯০ সালে ১০ বছরের জন্য সংরক্ষিত আসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০০১ সালে অষ্টম সংসদের শুরুতে সংরক্ষিত আসন ছিল না। পরে এই সংসদেই সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর (২০০৪ সালে) মাধ্যমে ১০ বছর মেয়াদে নারী আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়। ওই সময় সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। সংসদে একটি রাজনৈতিক দলের কতজন প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই অনুপাতে ওই সংরক্ষিত আসনের কয়টি দল পাবে, তা নির্ধারিত হয়। দলগুলোর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে নিজ নিজ দলের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের নির্বাচিত করেন। নবম সংসদে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারী আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়।
এবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নারীর আসন নিয়ে পুরুষেরা সিদ্ধান্ত নিলেন। খুব হতাশ হয়েছি যে একটি নারীকে জোগাড় করা গেল না আলোচনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য! এটাকে দলের ব্যর্থতা, নাকি নেতৃত্বের ব্যর্থতা বলব, বুঝতে পারছি না।রুমিন ফারহানা, সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপিআইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মতোই মাসিক বেতন–ভাতা, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি কেনাসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা পান।
বিগত সময়ে সংরক্ষিত আসনে যাঁরা নারী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, দু–একজন ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগের ভূমিকা সংসদে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দলের প্রতি আনুগত থাকা, বিরাগভাজন না হয়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে আবারও মনোনীত হওয়ার সুযোগ খোলা রাখার জন্য বেশির ভাগ নারী সদস্য চুপ থাকাকেই ‘নিরাপদ’ বলে ভেবেছেন। এমনকি নারী নির্যাতনের আলোচিত ঘটনাতেও তাঁদের সংসদে খুব একটা সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।
নারী আসনের বিষয়ে কোনো সম্মানজনক উপায় বের হয়নি, এটা দুঃখজনক। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনব্যবস্থায় দলগুলোর অনাগ্রহের বড় কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা বা বেশিসংখ্যক নারীকে সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া—বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই।এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনএকাদশ সংসদে (২০১৮ মেয়াদে) সংরক্ষিত আসনে বিএনপি মনোনীত একমাত্র নারী সদস্য ছিলেন রুমিন ফারহানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৫৩ বছর ধরে সময়ে–সময়ে নারী আসনসংখ্যা বাড়ানো হলো। কিন্তু নারী আসন কোনোভাবেই নারীর পথকে সুগম করেনি, প্রশস্ত করেনি। অনেক নেতা পরিবারের নারী সদস্যদের সেসব আসনে বসিয়ে সুবিধা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নারীর আসন নিয়ে পুরুষেরা সিদ্ধান্ত নিলেন। খুব হতাশ হয়েছি যে একটি নারীকে জোগাড় করা গেল না আলোচনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য! এটাকে দলের ব্যর্থতা, নাকি নেতৃত্বের ব্যর্থতা বলব, বুঝতে পারছি না।’
নারীর প্রশ্নে গোষ্ঠীস্বার্থ না দেখে নারীর স্বার্থ দেখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তারা বলছে, জুলাইয়ে নারীরা ছিল সামনের সারিতে। এই নারীদের আর হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীকে রাখতে হবে। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ রাখতে হবে।
নারী আসন নিয়ে নারীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সংসদে নারীদের জন্য আসন বাড়ানো ও সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা হলেও তারা তা শোনেনি। কমিশন রাজনৈতিক দলকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। নারী আসন নিয়ে নারীদের দাবি পূরণের আর সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দাবি পূরণে এখন নাগরিক সমাজকে সক্রিয় হতে হবে।