‘আমি যুদ্ধ নিয়ে আতঙ্কিত একটাই কারণে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ। আমি-আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ আজ নিজের ফেসবুকে এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে নন্দিত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। ওই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে সংবাদও প্রকাশ কয়েছেন ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যম।
স্ট্যাটাসে এ বিশ্বাস নামে একজন লেখেন ‘এসব নচিকেতাদের জন্য আজ পশ্চিমবঙ্গের এই অবস্থা’।
সোমনাথ ঘরামী লিখেছেন,‘এই মানুষটাকে একসময় শিল্পী ও মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করতাম,এখন মানুষ হিসেবে ঘৃণা করি।’ প্রেম কুমার বিশ্বাসের মন্তব্য ‘যখন সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারলো তখন কোথায় ছিলে। ’
এরকম হাজারো প্রতিক্রিয়ায় ভরে যায় মন্তব্যের ঘর। এরপরই তোপের মুখে পড়েনে এই কণ্ঠশিল্পী । পরে বাধ্য হয়ে স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নেন নচিকেতা।
পশ্চিমবঙ্গের জীবনমুখী শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। তার সুরে উঠে এসেছে ফুটপাতের গল্প, সাধারণ মধ্যবিত্তের মানসিকতা। শুধু তাই নয়, গানে গানে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও ছিল নচিকেতার। তার সেই গানের কথায় আশ্বস্তের শব্দগুলো ছিলো এমন- ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে’।
এদিকে ভারতে কাশ্মীরে হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বেড়ে যায়। এরপর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থানে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ভারতীয়রা যাকে বলছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এতে সব মিলিয়ে দুই দেশেই ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। আর এসকল ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ
প্রকাশ করেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী আনন্দবাজারকে বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে, যত হিংসা ছড়িয়েছে সব কয়টি যুদ্ধের নেপথ্যে বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। সব যুদ্ধ নাকি ‘স্পন্সর’ করা! আমি প্রমাণ করে দেব।’
গায়কের মতে, এগুলো যুদ্ধের হিড়িক। এক শ্রেণি এর থেকে লাভবান হচ্ছে। নচিকেতা নিজের কথাপ্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।
তার কথায়, ‘মনে রাখবেন, রকফেলারদের তেল প্রস্তুতকারী সংস্থা সেই সময় জার্মানি এবং ইতালি, দুই দেশকেই পেট্রোল সরবরাহ করেছিল। এই সরবরাহ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, এটি শুধুই ব্যবসা।’
আর প্রাচীন ইতিহাস থেকেই গায়কের উপলব্ধি, যুদ্ধ মানেই মুনাফার খেলা। কাদের মুনাফা, সেটা বুদ্ধিমানেরা সহজেই বুঝে যান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।