বাগেরহাটের শরণখোলায় পথ ভুলে লোকালয়ে চলে আসা একটি চিত্রা হরিণ উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বকুলতলা গ্রাম থেকে হরিণটি উদ্ধার করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, বেলা ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের বাড়ির পাশে হরিণটি দেখতে পান স্থানীয় কয়েকজন যুবক। পরে তারা হরিণটি ধরে বন বিভাগের উদ্ধারকারী দল ‘ওয়াইল্ড টিমকে’ খবর দেন।

ওয়াইল্ড টিমের সদস্য আলম হাওলাদার বলেন, ‘‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হরিণটি উদ্ধার করে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হরিণটিকে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত হরিণটির ওজন প্রায় ৩০ কেজি।’’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, ‘‘পথ ভুলে লোকালয়ে চলে আসা হরিণটিকে ওয়াইল্ড টিম ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।’’

ঢাকা/শহিদুল/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন অবম ক ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রলার থেকে নামলেন কয়রার ঘাটে। তিন দিন পর তিনি ফিরেছেন সুন্দরবনের গভীর দুবলারচরের আলোরকোল থেকে। চোখে–মুখে ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে প্রশান্তি।

বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘গতকাল বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে আমরা ফিরতি পথ ধরে আজ লোকালয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার মা আর দিদি—দুজনেই অসুস্থ। তাঁরাও ছিলেন, খুব ভয়ে ছিলাম।’

৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব শেষ হয় গতকাল ভোরে। পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুণ্যস্নান। আলোরকোলের দুই কিলোমিটারজুড়ে তখন শুধু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একসঙ্গে নেমে পড়েন সমুদ্রের জলে। শঙ্খধ্বনি, কীর্তন, ঢাকের বাদ্য আর ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।

কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনোজিত কুমার রায় বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করলে পাপমোচন হয়—এ বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। সৈকতের পাড়ে চোখ বুজে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।’

বন বিভাগের হিসাবে, এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। পূজা-অর্চনা, ভজন ও লীলাকীর্তন শেষে গতকাল ভোরে তাঁরা সাগরে স্নান করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। উৎসব চলাকালে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। গত মঙ্গলবার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে সুমন নামের এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হলেও কোস্টগার্ড পরে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করে।

রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে সাধু হরিভজন প্রথম দুবলারচরের আলোরকোলে রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই আয়োজন লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ আছে।

রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার বেড়ে যায়—এ অভিযোগ পুরোনো। তবে এ বছর বন বিভাগ বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা দমন করতে পেরেছে।

পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাস উৎসবের দ্বিতীয় দিন কেওড়াবনে টহলের সময় বনরক্ষীরা প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করেন। এবার উৎসবের সময় ৩২ জন শিকারি আটক হয়েছেন। শিকারের ফাঁদগুলো আগেভাগে না সরাতে পারলে শতাধিক হরিণ মারা যেত।’

দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতাব্দীকাল ধরে আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত থেকেও অনেক ভক্ত অংশ নেন। এটি শুধু পূজা নয়, এক আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।

সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা সব নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। আগাম প্রস্তুতি ও যৌথ টহলের কারণে অপরাধও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব