আ.লীগ নিষিদ্ধে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না এলে ‘মার্চ টু যমুনা’: হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 10th, May 2025 GMT
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না এলে শাহবাগের গণজমায়েত থেকে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করা হবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
শাহবাগে এনসিপি ও ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের গণজমায়েতে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর এ ঘোষণা দেন তিনি। এদিন বিকেল ৩টায় এ গণজমায়েত শুরু হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, ছাত্রশিবির, আপ বাংলাদেশসহ বহু সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে। এসব দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন শাহবাগ।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সাড়ে ৮টায় শাহবাগ থেকে এগিয়ে গিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গেটে রাজসিক মোড়ে অবস্থান করব। উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে কোনো গড়িমসি করবেন না। এখনও আমরা আপনাদের বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ প্রশ্নটার মীমাংসা আপনারা করে ফেলেন।’
এসময় ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান বিন হাদিও একই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ হব গ
এছাড়াও পড়ুন:
‘সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়ায়’ ২২ বছর আগে খুন, এখন তদন্ত চায় পরিবার
জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতাকে অপহরণের পর আদায় করা হয় ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ। তবু খুন করা হয় তাঁকে। তাঁর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় দুই বছর পর। এ ঘটনায় আসামিদের জবানবন্দি এবং তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। তবে জবানবন্দিতে নাম আসা বিএনপির এসব নেতাসহ ২৪ জনকে বাদ দিয়েই আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। যার কারণে অভিযোগপত্রের ওপর নারাজি দেন বাদী। তবে আদালত সেটি খারিজ করেই মামলার বিচার শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডটির ২২ বছর পার হলেও সেই বিচার শেষ হয়নি। এখন নিহত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, নতুন করে সেই মামলা তদন্ত করে বিচার শুরু করা হোক।
নিহত সেই বিএনপি নেতার নাম জামাল উদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে তাঁকে অপহরণ করা হয়। এর দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকা থেকে তাঁর কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি জামাল উদ্দিনের। পরিবারের দাবি, সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাওয়ায় খুন করা জামালকে।
বর্তমানে ষষ্ঠ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার চলছে। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় নাম আসা ব্যক্তিদের অনেকেই অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়ায় মামলাটির বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন। তাই তিনি হাজির হচ্ছেন না সাক্ষ্য দিতে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে অপহরণের ঘটনার পর এটি সাজানো নাটক মন্তব্য করে প্রথমে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর পর অপহরণের ‘অন্যতম হোতা’ আনোয়ারা সদরের সাবেক ইউপি সদস্য মো. শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলার ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর পাহাড়ি এলাকা থেকে ২০০৫ সালে জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে অবশ্য প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার, কিন্তু জামাল উদ্দিনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে অপহরণের ঘটনার পর এটি সাজানো নাটক মন্তব্য করে প্রথমে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর পর অপহরণের ‘অন্যতম হোতা’ আনোয়ারা সদরের সাবেক ইউপি সদস্য মো. শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলার ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর পাহাড়ি এলাকা থেকে ২০০৫ সালে জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে অবশ্য প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার।আসামি শহীদুল ইসলাম ও মাহবুব নামের আরেক আসামির আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জামাল উদ্দিনকে অপহরণ ও হত্যার পুরো বিষয়টি উঠে আসে। এতে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ ও অপহরণে কারা কারা জড়িত, সবার নাম আসে। ২০০৫ সালের ৩১ আগস্ট জবানবন্দিতে শহীদুল বলেন, ‘জামাল উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাই। পরে নাজিম, হেলাল (বর্তমানে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব) ও অমর (মৃত) মোবাইল ফোনে বলে ২৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথাবার্তা হয়েছে।’
ওই ঘটনা সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেন পুলিশের ৯ কর্মকর্তা। এরপর ২০০৬ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম (বর্তমানে ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী), তাঁর ছোট ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে ও ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এটির বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। মামলার আসামি মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে লিভ টু আপিল করেন আসামিরা। এটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে।
বিএনপির নেতা সরওয়ার জামাল নিজাম, তাঁর ভাই মারুফ নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিনসহ জড়িত ব্যক্তিদের নাম গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে বলেছেন। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়ায় আমার স্বামীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।নাজমা আক্তার, জামাল উদ্দিনের স্ত্রী২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত সিআইডির দেওয়া (২০০৬ সালে) অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। ইতিমধ্যে মারা যান দুই আসামি। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়।
আদালত সূত্র জানায়, বর্তমানে মামলাটির ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর সাক্ষী না আসায় আগামী বছরের ৩০ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখ রয়েছে। মামলার ১৪ আসামির মধ্যে শহীদুল ইসলাম, আবুল কাশেম চৌধুরী, মাহবুবসহ ১০ জন জামিনে রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন রফিক নামের এক আসামি। পলাতক রয়েছেন মো. মনসুর, মো. ওসমান, ইছহাক ও ইউনুস।
বাবার হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি জামাল উদ্দিনের ছোট ছেলে চৌধুরী আরমান রেজা। গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মারা যান। ২২ বছরেও স্বামীর হত্যার বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশ নিহত জামাল উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মূল আসামিরা আঁতাত করে পার পেয়ে গেছেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হোক।
জামাল উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা আক্তার আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতা সরওয়ার জামাল নিজাম, তাঁর ভাই মারুফ নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিনসহ জড়িত ব্যক্তিদের নাম গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে বলেছেন। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়ায় আমার স্বামীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ওই ঘটনা সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেন পুলিশের ৯ কর্মকর্তা। এরপর ২০০৬ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম (বর্তমানে ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী), তাঁর ছোট ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে ও ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়।মামলার বাদী ফরমান রেজা তাঁর বাবাকে অপহরণ, কঙ্কাল উদ্ধার, তদন্ত, নারাজি আবেদনের শুনানি স্থগিতাদেশসহ আইনি মারপ্যাঁচে ১৪ বছর ঘুরেছেন থানা-পুলিশ, আদালত ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। আট বছর ধরে মামলার খোঁজ নিতে আর আদালতে যান না তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মূল আসামিরা কেউ নেই। তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। বারবার নারাজি দিয়েছি, শেষ পর্যন্ত পারিনি। তাই আদালতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।’
ফরমান রেজা বলেন, ‘আসামির জবানবন্দি ছাড়াও সবাই জানে কারা, কেন আমার বাবাকে মেরেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাকে তিনটি মামলার আসামি করা হয়। ভয়ে তখন কিছু করতে পারিনি। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে মামলাটি আবার তদন্তে পাঠানোর আবেদন করা হবে।’
তদন্তে আমার নাম উঠে আসেনি। এগুলো আওয়ামী দোসরদের ষড়যন্ত্র। সরওয়ার জামাল নিজাম, সাবেক সংসদ সদস্যজামাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম-১৩ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তে আমার নাম উঠে আসেনি। এগুলো আওয়ামী দোসরদের ষড়যন্ত্র।’
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিনও এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র। তদন্তে আমার নাম পাওয়া যায়নি।’
আইনজীবীরা জানান, বাদী অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। মামলার সাক্ষ্য চলাকালে ইতিপূর্বে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দের মামলাসহ বেশ কিছু আলোচিত মামলা অধিকতর তদন্তে গিয়েছিল।