বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
Published: 10th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে যমুনার সামনে রাত ১১টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আসিফ নজরুল। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
এতে বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
এর পাশাপাশি, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশকে ভারতের অংশ বলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করলেন রাজনাথ সিং
ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত ও কূটনৈতিক অচলাবস্থার মুখে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ কোনো এক দিন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এর কড়া জবাব দিয়েছে পাকিস্তান।
প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্য না করার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, ‘ভারত বরং তার নাগরিকদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুক। দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের মানুষের অভাব–অভিযোগের সমাধান করুক।’
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘সম্প্রসারণবাদী ও বিভ্রান্তিকর’ মনোভাব বলে জানিয়ে পাকিস্তান বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’।
রাজনাথ সিং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ নিয়ে ওই মন্তব্য করেছিলেন গতকাল রোববার। দিল্লিতে সিন্ধি সমাজ আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির বলা কিছু কথা তুলে ধরেন। আদভানি নিজে সিন্ধি ছিলেন। সিন্ধু সমাজ নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেনও।
আদভানির সেই রকম এক লেখার কথা উল্লেখ করে রাজনাথ বলেন, ‘এক বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুরা, বিশেষ করে যাঁরা তাঁর প্রজন্মের মানুষ, তাঁরা ভারত থেকে ওই প্রদেশের আলাদা হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি। শুধু সিন্ধিরাই নয়, গোটা দেশ সিন্ধু নদকে পবিত্র মনে করে।’
এর পরেই রাজনাথ বলেছিলেন, ‘সিন্ধু প্রদেশ আজ ভারতের অংশ নয়। কিন্তু তাতে কী? সভ্যতার বিচারে সিন্ধু প্রদেশ সব সময় ভারতের অংশ হিসেবেই বিবেচিত। বাকি রইল ভূখণ্ডের কথা। সীমান্ত তো বদলাতেই পারে। কে বলতে পারে, কোনো এক দিন সিন্ধু প্রদেশ ভারতের অংশ হবে না?’
রাজনাথের মন্তব্যের পর পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নষ্ট করেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রাতেই এক কড়া বিবৃতি জারি করে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নাম করে তাতে বলা হয়েছে, ‘ওই মন্তব্য শুধু ভ্রান্তই নয়, মারাত্মকভাবে সংশোধনবাদী। এ ধরনের মন্তব্য হিন্দুত্ববাদী সম্প্রসারণবাদ মানসিকতার প্রকাশ এবং তা স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতাকে চালেঞ্জ করে। এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইন, স্বীকৃত সীমান্তের লঙ্ঘন ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটুকু বলেই থেমে থাকেনি। রাজনাথ সিং ও অন্য ভারতীয় শীর্ষ নেতাদের এমন ধরনের উসকানিমূলক ও আঞ্চলিক শান্তির পরিপন্থী মন্তব্য না করার অনুরোধ জানিয়েছে। বিবৃতিতে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থান প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে।
বিবৃতিতে জম্মু–কাশ্মীর প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও কাশ্মীরি মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে ভারতকে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাকিস্তান তার নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রস্তুত।
কাশ্মীর প্রসঙ্গের উত্থাপন নতুন কিছু নয়। কিন্তু রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে এই প্রথম পাকিস্তান ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে টেনে আনল।
পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের মানুষেরা নিপীড়িত, যাঁদের অনেককে প্রান্তিক থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে, পরিচিতির ভিত্তিতে নিপীড়ন এবং সময়ে সময়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত বরং এই দিকে নজর দিক।
আরও পড়ুনসিন্ধু নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ‘বিভ্রান্তিকর ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’: পাকিস্তান১ ঘণ্টা আগে