চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুশ্চিন্তায় পশু পালনকারীরা
Published: 13th, May 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায় আলাদা দুটি ঘটনায় একসপ্তাহের ব্যবধানে ছয়টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘাস খাওয়ার পরেই গরুগুলো মারা যায় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা। এতে গ্রামাঞ্চলের পশুপালন করা ব্যক্তিরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।
শিবগঞ্জের ঘটনাটি তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ভোলাহাটে তা করা হয়নি। তবে খামারিদের মাঠে যত্রতত্র গরুকে ঘাস না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার (১১ মে) দিবাগত রাতে জেলার ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে মাহিদুর ইসলাম নামে এক মাছ বিক্রেতার তিনটি গরু মারা যায়। এরমধ্যে দুটি গরু ছিল কোরবানির যোগ্য। আসন্ন কোরবানি ঈদে সেগুলো বিক্রির জন্য লালনপালন করেছিলেন তিনি। ঘাস খেয়ে মারা যাওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা।
এরআগে ৪মে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়ায় কচি ঘাস খেয়ে একসঙ্গে তিনটি গাভীর মৃত্যু হয়। সবগুলো গাভী গর্ভবতী ছিল। পশুগুলো হারিয়ে খামারি সাদিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কিমারা বেগম এখন দিশেহারা।
ঘটনা দুটি গ্রামাঞ্চলে পশুপালন করা ব্যক্তিরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শিবগঞ্জে ঘাস খেয়ে গর্ভবতী গাভিগুলো মারা যাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভোলাহাটের ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না উপজেলা প্রাণি সম্পদের কর্মকর্তারা।
এই প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহে গেলে তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আশ্বাস দেন তারা। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
ভোলাহাটের ক্ষতিগ্রস্ত খামারি মাহিদুর ইসলাম বলেন, “রবিবার দুপুরের দিকে কানসাট বাজার থেকে ঘাস কিনে এনেছিলাম। বিকেলের দিকে ঘাসগুলো কেটে গরু তিনটিকে খাওয়ায়। সন্ধ্যার পর দেখি গোয়ালঘরে গরু তিনটি মরে পড়ে আছে। এরমধ্যে দুটি কোরবানির যোগ্য গরু ছিল। ভেবেছিলাম কয়েকদিন পরেই হাটে তুলব। তার আগেই গরুগুলো মারা গেলো। আমি অর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।”
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনার পর আমার গ্রামের অনেকজন গরুকে ঘাস খাওয়ানো নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। তারা গরুকে এখন ঘাস খাওয়াতেই ভয় পাচ্ছে।”
শিবগঞ্জের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কিমারা বেগম বলেন, “প্রতিদিনের মতো সকাল বেলায় গাভিগুলোকে কচি ঘাস খেতে দিয়েছিলাম। সুস্থ-সবল গাভিগুলো ঘাস খেয়ে বেলা ১১টার দিকে একসঙ্গে মারা যায়। স্বামী অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় গাভিগুলো আমিই দেখভাল করতাম। গাভি তিনটি ছিল গর্ভবতী। কয়েক দিনের মধ্যেই দুইটি গাভির বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। গাভিগুলো হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি।”
ঘাস খেয়ে আকস্মিকভাবে কিমারা বেগমের তিনটি গাভীর মৃত্যুর খবর পেয়েই শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
ভোলাহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘‘মাহিদুর ইসলামের তিনটি গরু মারা যাওযার বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছ তথ্য থাকলে দেন। লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
সচেতনভাবে পশুপালন করতে হবে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “পশুপালনের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। মাঠের যত্রতত্র স্থানের ঘাস গরুকে খাওয়ানো যাবে না। মাঠের লকলকে ঘাস পরিমানের থেকে বেশি খেয়ে নিলে নাইট্রেট পয়জনিং হয়ে গরু মারা যেতে পারে। এছাড়া আবাদ করা ঘাস খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ সেগুলো বেশি পরিমাণে ইউরিয়া দেওয়া থাকে। এতে করেও গরু মারা যেতে পারে। তবে কম ইউরিয়া দিয়ে আবাদ করা ঘাস গরুকে খাওয়ালে কোন সমস্যা হবে না।”
ঢাকা/শিয়াম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ বগঞ জ বগঞ জ র র ঘটন ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।