চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায় আলাদা দুটি ঘটনায় একসপ্তাহের ব্যবধানে ছয়টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘাস খাওয়ার পরেই গরুগুলো মারা যায় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা। এতে গ্রামাঞ্চলের পশুপালন করা ব্যক্তিরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। 

শিবগঞ্জের ঘটনাটি তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ভোলাহাটে তা করা হয়নি। তবে খামারিদের মাঠে যত্রতত্র গরুকে ঘাস না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার (১১ মে) দিবাগত রাতে জেলার ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে মাহিদুর ইসলাম নামে এক মাছ বিক্রেতার তিনটি গরু মারা যায়। এরমধ্যে দুটি গরু ছিল কোরবানির যোগ্য। আসন্ন কোরবানি ঈদে সেগুলো বিক্রির জন্য লালনপালন করেছিলেন তিনি। ঘাস খেয়ে মারা যাওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা। 

এরআগে ৪মে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়ায় কচি ঘাস খেয়ে একসঙ্গে তিনটি গাভীর মৃত্যু হয়। সবগুলো গাভী গর্ভবতী ছিল। পশুগুলো হারিয়ে খামারি সাদিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কিমারা বেগম এখন দিশেহারা।

ঘটনা দুটি গ্রামাঞ্চলে পশুপালন করা ব্যক্তিরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শিবগঞ্জে ঘাস খেয়ে গর্ভবতী গাভিগুলো মারা যাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভোলাহাটের ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না উপজেলা প্রাণি সম্পদের কর্মকর্তারা। 

এই প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহে গেলে তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আশ্বাস দেন তারা। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

ভোলাহাটের ক্ষতিগ্রস্ত খামারি মাহিদুর ইসলাম বলেন, “রবিবার দুপুরের দিকে কানসাট বাজার থেকে ঘাস কিনে এনেছিলাম। বিকেলের দিকে ঘাসগুলো কেটে গরু তিনটিকে খাওয়ায়। সন্ধ্যার পর দেখি গোয়ালঘরে গরু তিনটি মরে পড়ে আছে। এরমধ্যে দুটি কোরবানির যোগ্য গরু ছিল। ভেবেছিলাম কয়েকদিন পরেই হাটে তুলব। তার আগেই গরুগুলো মারা গেলো। আমি অর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।” 

তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনার পর আমার গ্রামের অনেকজন গরুকে ঘাস খাওয়ানো নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। তারা গরুকে এখন ঘাস খাওয়াতেই ভয় পাচ্ছে।”

শিবগঞ্জের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কিমারা বেগম বলেন, “প্রতিদিনের মতো সকাল বেলায় গাভিগুলোকে কচি ঘাস খেতে দিয়েছিলাম। সুস্থ-সবল গাভিগুলো ঘাস খেয়ে বেলা ১১টার দিকে একসঙ্গে মারা যায়। স্বামী অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় গাভিগুলো আমিই দেখভাল করতাম। গাভি তিনটি ছিল গর্ভবতী। কয়েক দিনের মধ্যেই দুইটি গাভির বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। গাভিগুলো হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

ঘাস খেয়ে আকস্মিকভাবে কিমারা বেগমের তিনটি গাভীর মৃত্যুর খবর পেয়েই শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

মো. শাহাদৎ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কচি ঘাসে প্রচুর নাইট্রেট জমে থাকে। অধিক পরিমাণে সেই ঘাস খেলে নাইট্রেট পয়জনিং হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম পয়জনিংয়ের কারণে গরুগুলো মারা যেতে পারে। তারপরেও বিষয়টি তদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছে। আমরা উদ্বেগের মতোই কোন কিছু পাইনি।”

ভোলাহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘‘মাহিদুর ইসলামের তিনটি গরু মারা যাওযার বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছ তথ্য থাকলে দেন। লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

সচেতনভাবে পশুপালন করতে হবে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “পশুপালনের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। মাঠের যত্রতত্র স্থানের ঘাস গরুকে খাওয়ানো যাবে না। মাঠের লকলকে ঘাস পরিমানের থেকে বেশি খেয়ে নিলে নাইট্রেট পয়জনিং হয়ে গরু মারা যেতে পারে। এছাড়া আবাদ করা ঘাস খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ সেগুলো বেশি পরিমাণে ইউরিয়া দেওয়া থাকে। এতে করেও গরু মারা যেতে পারে। তবে কম ইউরিয়া দিয়ে আবাদ করা ঘাস গরুকে খাওয়ালে কোন সমস্যা হবে না।”

ঢাকা/শিয়াম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ বগঞ জ বগঞ জ র র ঘটন ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শাড়িতে স্কার্টে বর্ষা

ফ্যাশনের অনুষজ্ঞ হিসেবে নকশা বা শিল্পকর্মের গুরুত্ব অনেক। পোশাকে স্থান পাচ্ছে ষড়ঋতুর নানা রূপ। বৃষ্টিদিনের পোশাকের নকশায়ও দেখা যায় বৈচিত্র্য। শিল্পকর্মে যদি ফুটে ওঠে মেঘ, বৃষ্টি আর পাতার গল্প, তাহলে সাজও হয় হৃদয়ছোঁয়া। এ বছরের বর্ষার পোশাকে কোন ধরনের নকশা চলছে তা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন আশিকা নিগার

‘বর্ষা শুধু আকাশে নামে না/ সে নামে সুতি আর সিল্কের গায়ে/ নকশায়, বুননে, রঙের তালে
/ সে হাসে, কাঁদে, মুগ্ধতায় ভাসায় চুপিসারে।’
বর্ষা মানেই ভেজা ভেজা আবহাওয়া, আকাশজুড়ে ধূসর মেঘ, টুপটাপ বৃষ্টির শব্দে মন ভরে যাওয়া, ভেজা মাটির ঘ্রাণ আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভেজা ভেজা কদমের মাতাল করা সুবাস।  
বৃষ্টিমুখর দিনে বারান্দায় বসে হাওয়ার তালে দোলে যাওয়া ভেজা পাতার দৃশ্য দেখতে দেখতে মানুষ যেন কেবলই নিজের কাছে ফিরে যায়। কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে হয়ে যায় স্মৃতিকাতর। তাই কেউ কেউ বলেন, বর্ষা নাকি বিষণ্নতার ঋতু। তবে ফ্যাশন দুনিয়ায় বর্ষা কিন্তু বেশ রঙিন। এই রঙিনতার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে পোশাকে বৈচিত্র্যের শিল্পকর্ম। 
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের রুচি, ফ্যাশনের সংজ্ঞা। তাই বর্ষার আবহ আর মেজাজকে পোশাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এখন অনেকেই নকশা বা থিমভিত্তিক পোশাক পছন্দ করেন। মেঘ, বৃষ্টি, কদম-শাপলা-বেলি-জবা ফুল, পাতা, জলের ঢেউ, নৌকা, নদী, ছাতা কিংবা ছোট্ট কোনো পাখির নকশা যখন কাপড়ে জায়গা পায়, তখন সাজও হয়ে ওঠে বর্ষার মতো আকর্ষণীয়। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মানেই বর্ষার গল্প।
আমাদের চারপাশের প্রকৃতি থেকেই ধারণাগুলোর জন্ম। যেমন–
মেঘ ও বৃষ্টির গল্প 
সাদা মেঘ, নীল আকাশ, বৃষ্টির ফোঁটার শিল্পকর্ম এখন কুর্তি, ওড়না, স্কার্ট, টপ– এমনকি শাড়িতেও দেখা যায়। দেখতে যেমন সুন্দর, পরতেও তেমনি আরামদায়ক।
কদম ফুলের শিল্পকর্ম
বর্ষায় বৃষ্টিতে কদম ফুলের ভেজা গন্ধ সবার মনে রোমান্টিক আবহ এনে দেয়। কদম ফুলও যেন বর্ষার নিজস্ব প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেই আবেগকে ধারণ করেই এখন ফ্যাশনে জায়গা করে নিচ্ছে কদম ফুলের শিল্পকর্ম। শাড়ি, কুর্তি, স্কার্ফ বা কামিজে কদম ফুলের নকশা যেন এক অন্যরকম নান্দনিকতা তৈরি করে। কখনও হাতে আঁকা, কখনও ব্লক প্রিন্ট আবার কখনও ডিজিটাল প্রিন্টে ফুটে ওঠে হলুদ-সাদা কদমের কোমল সৌন্দর্য। বিশেষ করে সাদা বা হালকা রঙের পোশাকে কদম ফুলের নকশা নজরকাড়া।
এ শিল্পকর্ম শুধু নান্দনিকই নয়, বরং বর্ষার আবেগ পোশাকে ফুটিয়ে তোলার এক অনন্য উপায়। যারা ঐতিহ্য আর চলতি প্রবণতাকে একসঙ্গে ধারণ করতে চান, তাদের জন্য কদম ফুল ধারণা হতে পারে বর্ষার ফ্যাশনে এক দারুণ সংযোজন।
শুধু পোশাকে নয়, সঙ্গে মিলিয়ে কদম ফুলের নকশায় ব্যাগ, জুতা বা অ্যাকসেসরিজ থাকলে দেখতে হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। এই বর্ষায় আপনিও চাইলে বৃষ্টিভেজা কদম ফুলকে ধারণ করতে পারেন আপনার স্টাইলে, একটু আলাদাভাবে নিজেকে প্রকাশের জন্য।
পাতা বা লতাপাতা 
বৃষ্টিতে ভেজা পাতা কিংবা ছোট লতাগাছের নকশা বর্ষার প্রকৃতিকে চোখের সামনে তুলে ধরে। এগুলো কটন বা লিনেন পোশাকে বেশি মানায়।
পাখি, প্রজাপতি বা ছাতা 
বর্ষার দিনে পাখির ডানামেলা ওড়া বা রঙিন ছাতার ছাপ– সবই যেন বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের কথা বলে।
স্থানীয়তার ছাপ
আমাদের দেশীয় পোশাকে বর্ষা নিয়ে শিল্পকর্ম বরাবরই ছিল। জামদানি বা নকশিকাঁথার পুরোনো শিল্পকর্মেও দেখা মেলে বৃষ্টির ছায়া। এখনকার নকশাকাররাও এই ঐতিহ্যকে নতুনভাবে সাজিয়ে আনছেন। বুটিক ঘরানার জামা বা শাড়িতে বৃষ্টির ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে হাতে আঁকা শিল্পকর্মের মাধ্যমে।
স্টাইল টিপস
হালকা প্রিন্টের কুর্তির সঙ্গে সাদামাটা প্যান্ট, আর একটি ছাতার নকশা দেওয়া ওড়না বর্ষার আদর্শ স্টাইল। ডেনিম স্কার্ট বা পালাজ্জোর সঙ্গে রঙিন ছাপা টপ যেন অনন্য কম্বিনেশন। এ ছাড়া ছাতায়, ব্যাগে বা জুতাতেও মিলিয়ে ছোট নকশার কাজ করলে দেখতে ভালো লাগে। 
হরিতকীর ডিজাইনার ও কো-ফাউন্ডার অনিক কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা এই বর্ষায় পদ্ম ফুল ও স্টারি নাইটের একটি নতুন ভার্সন শাড়িতে নিয়ে এসেছি। পাশাপাশি পলো শার্টেও স্টারি নাইট থাকছে নীল রঙের মধ্যে। বর্ষাকালে নীল রংই সবার কাছে আকর্ষণীয় লাগে এবং এই রং যেন বর্ষার সঙ্গে মানানসই। এ ছাড়া নৌকার থিমেও শাড়ি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার আসল সৌন্দর্য বহন করে কদম ফুল। তাই কদম ফুলের শিল্পকর্ম তো থাকবেই। বর্ষার আমেজকে প্রাণবন্ত রাখতে আমাদের সংগ্রহে থাকা শাড়ি, কুর্তি, ওড়না, টি-শার্ট, পলো শার্ট সবকিছুতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বর্ষার একেকটি আকর্ষণীয় শিল্পকর্ম।’
পোশাকে বর্ষার ভাবনা নিয়ে ‘লা রিভ’-এর ডিজাইনার মারুফা শিল্পী বলেন, ‘এবার বর্ষায় আমরা ফুলের শিল্পকর্মকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি ৷ ফুলগুলো বড় আকারের নকশায় ফুটে উঠবে। এ ছাড়া পাতা ও পদ্ম দিয়ে ডিজাইনও থাকছে।’
পোশাকের রঙের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নীল, জলপাই এবং সবুজ রয়েছে। এ ছাড়া বর্ষার ফুলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ আর মেরুনকেও প্রাধান্য দিয়েছি আমরা।’
মারুফা বলেন, ‘ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে ভিসকোস এবং জর্জেটকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে কিছু সিনথেটিক ফেব্রিক, যেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও দ্রুত শুকিয়ে যাবে। শাড়ির মধ্যে কটনই বেশি থাকছে।’
কোথায় পাবেন
রাজধানীসহ দেশের যে কোনো প্রান্তের শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসে মিলবে বর্ষার শিল্পকর্মের পোশাক। স্থান ও মানের ওপর ভিত্তি করে দেখা যায় দামের ভিন্নতা। 
বসুন্ধরা সিটি, জামান টাওয়ার (গুলশান), প্লাজা এ আর (বনানী), সীমান্ত স্কয়ার (ধানমন্ডি), যমুনা ফিউচার পার্ক, জমজম টাওয়ার (উত্তরা)– এসব শপিংমলে প্রায় সব ব্র্যান্ডের বর্ষা কালেকশন পাওয়া যায়।
এ ছাড়া আজিজ সুপারমার্কেট (শাহবাগ), নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটে স্থানীয় ডিজাইনার বা কাস্টম টেইলারদের কাছে থিমেটিক প্রিন্ট ও হ্যান্ডপেইন্ট করা কামিজ, ওড়না, শাড়ি পাওয়া যায় বর্ষা মেজাজে।
ফ্যাশন হাউসগুলোতেও মিলছে বর্ষা-ভাবনার ভরপুর কালেকশন। হরিতকী, লা রিভ, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্ব রঙ ইত্যাদিতে পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের নকশার পোশাক। 
অনলাইন পেজগুলো তো আছেই, যেখান থেকে আপনি ঘরে বসেই পছন্দের পোশাকটি কিনে নিতে পারবেন। 

মডেল: আসিন জাহান; পোশাক: হরিতকী; মেকওভার: রাজিয়া’স মেকওভার ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ