শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত করছে: ছাত্র ফ্রন্ট
Published: 29th, May 2025 GMT
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল করেছে বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এই মিছিল চলার সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জোটভুক্ত সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। তারা বলেছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। এর আগে দুপুরে এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান বলেন, বামপন্থীরা ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বামপন্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে দুয়োধ্বনি দিয়েছেন বলে তাঁরা দাবি করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম নগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে ছাত্র ফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ মে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারকে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিলের আয়োজন করে। জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবির ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের’ নামে দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে পরের দিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ছাত্র জোটের প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে আবারও ছাত্রশিবির ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে তাঁদের ওপর হামলা চালান।
চট্টগ্রামে হামলায় ছাত্র ফ্রন্টের নগর শাখার সভাপতি ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চট্টগ্রামের অন্যতম সংগঠক রিপা মজুমদার, চট্টগ্রাম নগরের অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধা শ্রীকান্ত বিশ্বাসসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ছাত্র ফ্রন্ট। বামপন্থী এই ছাত্রসংগঠন বলেছে, নারী আন্দোলনকারীদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিততভাবে ন্যক্কারজনক হামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে একজন নারী আন্দোলনকারীকে যেভাবে লাথি মারা হয়েছে, তা সারা দেশের বিবেকবান মানুষকে গভীরভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। গত দুই দিনের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে যাঁদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জোটের মিছিল চলাকালে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা স্পষ্টতই জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী।
ছাত্র ফ্রন্ট বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিভিন্ন মত ও চিন্তাচর্চার জায়গা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছে। শিবিরের সন্ত্রাসসহ সব ধরনের সন্ত্রাস-দখলদারত্বের বিরুদ্ধে সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ছাত্র ফ্রন্ট আরও বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে সন্ত্রাস-দখলদারত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠেছিল। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যেসব সংগঠন নতুন করে সন্ত্রাসের রাজনীতির পথে হাঁটছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষার্থী-জনতার সোচ্চার হওয়া একান্ত জরুরি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট ছ ত র ফ রন ট ব মপন থ পর ব শ ন ত কর স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে ছাত্র ইউনিয়নের মশাল মিছিল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস দিয়ে মুক্তি দেওয়া এবং রাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।
আজ বুধবার রাত পৌনে ৮টায় ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে গিয়ে সমবেত হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এ সময় তারা ‘রাজাকারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘আল বদরের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘রাবিতে হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘আমার সোনার বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের আপিল বিভাগ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার এটিএম আজহারকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। আমরা এই রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তাদেরই বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্যে আল বদরের ভূমিকায় তৎকালীন ছাত্রসংঘের রংপুর বিভাগের সভাপতি এটিএম আজহার সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তিনি কোনোভাবেই নিরপরাধ একজন ব্যক্তি নন। একজন চিহ্নিত আল বদর। তার রায়ের প্রতিবাদে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের নামে শিবিরের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এ সময় এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট হামলাকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, ‘চব্বিশের পতিত স্বৈরাচারী সরকার যেভাবে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে দেশ পরিচালনা করেছিল এবং বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। চব্বিশের গণঅভ্যত্থানের পরেও দেখা যাচ্ছে, একটি মহল একই নীতিতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নির্লজ্জ রায় দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমরা এই দেশ দেখতে চাই না। গতকাল যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করে যারা একই নীতিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে; তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আরেকটি মানুষের ওপরে যদি তারা এ ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি প্রয়োগ করে তাহলে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ থেকে এর প্রতিবাদ শুরু হবে।’