একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল করেছে বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এই মিছিল চলার সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জোটভুক্ত সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। তারা বলেছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। এর আগে দুপুরে এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান বলেন, বামপন্থীরা ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বামপন্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে দুয়োধ্বনি দিয়েছেন বলে তাঁরা দাবি করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম নগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে ছাত্র ফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ মে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারকে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিলের আয়োজন করে। জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবির ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের’ নামে দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে পরের দিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ছাত্র জোটের প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে আবারও ছাত্রশিবির ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে তাঁদের ওপর হামলা চালান।

চট্টগ্রামে হামলায় ছাত্র ফ্রন্টের নগর শাখার সভাপতি ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চট্টগ্রামের অন্যতম সংগঠক রিপা মজুমদার, চট্টগ্রাম নগরের অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধা শ্রীকান্ত বিশ্বাসসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ছাত্র ফ্রন্ট। বামপন্থী এই ছাত্রসংগঠন বলেছে, নারী আন্দোলনকারীদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিততভাবে ন্যক্কারজনক হামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে একজন নারী আন্দোলনকারীকে যেভাবে লাথি মারা হয়েছে, তা সারা দেশের বিবেকবান মানুষকে গভীরভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। গত দুই দিনের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে যাঁদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জোটের মিছিল চলাকালে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা স্পষ্টতই জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী।

ছাত্র ফ্রন্ট বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিভিন্ন মত ও চিন্তাচর্চার জায়গা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছে। শিবিরের সন্ত্রাসসহ সব ধরনের সন্ত্রাস-দখলদারত্বের বিরুদ্ধে সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ছাত্র ফ্রন্ট আরও বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে সন্ত্রাস-দখলদারত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠেছিল। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যেসব সংগঠন নতুন করে সন্ত্রাসের রাজনীতির পথে হাঁটছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষার্থী-জনতার সোচ্চার হওয়া একান্ত জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট ছ ত র ফ রন ট ব মপন থ পর ব শ ন ত কর স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে