বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে কুমিল্লার তিতাসে গোমতী নদীর ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন গ্রামবাসী। তাদের অভিযোগ, বারবার সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করেও বাঁধ সংস্কারে কোনো সাড়া পাননি তারা। এ অবস্থায় নিজেদের টাকায় জিওব্যাগ কিনে বালু ভরে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন নারান্দিয়া ইউনিয়নের গোমতী নদীর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে গোমতীর দুই পাশে ভাঙন দেখা দিলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, তিতাস উপজেলার প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গোমতী নদী। প্রতি বছর ভারতীয় পানির ঢলে গোমতী নদীর দুই তীরে ভাঙন দেখা দেয়। গত ৩০ বছর ধরে গোমতীর ভাঙন চলছে এই এলাকায়। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো স্থায়ী উদ্যোগ। গত ৬-৭ বছরে সামান্য কিছু জিওব্যাগ ও ব্লক নদীর পাড়ে ফেলা হলেও তা সঠিক জায়গায় পড়েনি। ক্রমাগত ভাঙনে বিলীন হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গাছ-গাছালি। অনেকে আবার বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি হারিয়ে অন্য স্থানে নিয়েছেন আশ্রয়। এ অবস্থায় ভাঙনকবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে নিজেদের অর্থে ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, নারান্দিয়া ইউনিয়নের গোমতী নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৩০০ মিটার জায়গায় জিওব্যাগ ফেলেছেন গ্রামবাসী। এভাবে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও ফসলি জমি রক্ষার চেষ্টা করছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। এ বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন গ্রামবাসী।
ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, ভাঙনরোধে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের উদ্যোগেই কাজ করছেন তারা। গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে জিওব্যাগ কিনে বালু ভরে নদীতে ফেলছেন। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা জোগাড় করতে পারছেন না।
নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ের বালিয়াকান্দি গ্রামের হোসেন আলী মাস্টার জানান, গত বন্যার পর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেন তারা। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় গ্রামবাসী নিজেরা টাকা উঠিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন, আপাতত ৩০০ মিটার বাঁধ সংস্কার করছেন। এই সংস্কার করতে ২০-২৫ লাখ টাকা লাগবে, কিন্তু টাকা উঠেছে মাত্র ১৫ লাখ। নদীর মধ্যে বালুভর্তি বস্তা ফেলতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, ভাঙনরোধে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য অনেক আগেই একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এটির কোনো অগ্রগতি নেই। প্রকল্পটি পাস হলে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পাদন করা হবে, বর্তমানে কোনো বরাদ্দ নেই। তারপরও জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করার চেষ্টা থাকবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য গ য গ কর গ র মব স করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ