গত বছর পাকিস্তানে নাজমুল হোসেন শান্তরা যখন টেস্ট ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছিলেন, সেদিনই বিসিবির সভাপতি হিসেবে অভিষেক হয় ফারুক আহমেদের। নাজমুল হাসান পাপনের উত্তরসূরি হিসেবে একজন ক্রিকেটারকে বেছে নেওয়ায় প্রশংসার রোল পড়ে গিয়েছিল চারদিকে। ৯ মাসের ব্যবধানে উল্টে গেছে অনেক কিছু । বৃহস্পতিবার রাতে পরিচালক পদের মনোনয়ন বাতিল করে ফারুককে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি যে পথে এসেছিলেন, সে পথেই চলে গেলেন। বিসিবির নতুন সভাপতি হলেন ফারুকের এক সময়ের মাঠের সতীর্থ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমিনুল ইসলাম বুলবুল। 

আইসিসির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট পরিচালক বুলবুল ছুটি নিয়ে দেশের ক্রিকেটের সেবা করতে এসেছেন। তিনি আগামী তিন-চার মাসে কতটা সেবা দিতে পারবেন, সে প্রশ্ন উঠে গেছে। কারণ ফারুককে পরিকল্পিত আয়োজনে ছুড়ে ফেলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের নীতিনির্ধারকরা আস্থার জায়গা হারিয়েছেন। গভীর রাতে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে বুলবুলকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল দেশের ক্রিকেটে।
অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনে আগের কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে। আইসিসির বাধ্যবাধকতা থাকায় বিসিবির নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করতে না পারলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় মনোনীত পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুসকে সরিয়ে ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে পরিচালক করা হয়। আগের বোর্ডের আটজনকে রেখে দেওয়া হয় মিটিংয়ের কোরাম পূরণ করতে। 

ফারুক সভাপতি হয়ে মাহাবুবুল আনাম, ফাহিম সিনহাদের কাজে লাগাতে পারেননি। এমনকি নাজমুল আবেদীন ফাহিমকেও তাঁর চাওয়া মতো ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান করেননি প্রথম দিকে। উল্টো নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে সমালোচিত হয়েছিলেন ফারুক। এভাবে নিজের অজান্তেই শত্রু বাড়িয়েছেন তিনি। বিসিবির কাউকে আস্থায় নিতে না পেরে একক সিদ্ধান্তে চালাচ্ছিলেন বোর্ড। ফলে ভালো কাজের পাশাপাশি ভুলও করতে থাকেন তিনি। বিশেষ করে, নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে ক্লাব দখলের লড়াইয়ে নেমেছিলেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়া  ১১ মাস হয়ে গেলেও বিসিবির বাজেট অনুমোদন করাননি তিনি। স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি চেক অনুমোদন করতে না দেওয়া, টেবিলে ফাইলের স্তূপ করে রেখে সহকর্মীদের বিরাগভাজন হয়েছেন। বিপিএল চলাকালে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে বেশি কিছু কাজ করে ক্রীড়া উপদেষ্টার বিরাগভাজন হয়েছেন বলেও শোনা যায়। সুযোগ বুঝে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে আগের ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়া হলো হয়তো। 

ফারুককে অপসারণ ও বুলবুলকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। বিসিবির গঠনতন্ত্র মেনেই সদ্য বিদায়ী সভাপতির পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এরপরও কিছু কিন্তু থেকোই যায়। আইনানুগ অপসারণ হওয়ায় ফারুকের পক্ষে দাঁড়াতে পারছে না আইসিসি। কারণ একই আইনে বিসিবির পরিচালক ও সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। সাজ্জাদুল আলম ববির মনোনয়ন বাতিলে যেহেতু আইসিসি আপত্তি করেনি, বুলবুলের অন্তর্ভুক্তিতেও কিছু হবে না। এ ছাড়া বুলবুল আইসিসি সব কিছু জানিয়ে, ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিতে। সেদিক থেকে বলা যায় বিসিবি সভাপতির পরিবর্তনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হবে না। তবে ফারুক বিভাগ বা ক্লাব থেকে নির্বাচিত পরিচালক হলে এনএসসি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকত না। হস্তক্ষেপ করলেই রুখে দাঁড়াত আইসিসি। 
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্রিকেটে বড় সাফল্য ছিল পাকিস্তানকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। এই দুটি সাফল্য বাদ দিলে বাকিটা ব্যর্থতার গল্পে ভরা। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে প্রধান কোচের পদ থেকে বহিষ্কার করা এবং কোচিং সেটআপ ঢেলে সাজানোয় লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। গত ৯ মাসে বিসিবির নানা বিতর্কে ক্রিকেটারদের ফোকাস নড়ে গেছে। ফারুক হস্তক্ষেপ না করলেও বিসিবির অন্দরের গোলমাল বিচলিত করেছে তাদের। গতকাল জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার ফোন করে জানতে চাচ্ছিলেন, সভাপতির পালাবদলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে কিনা। 

ক্রিকেট প্রশাসনে পরিবর্তন যখন ক্রিকেটারদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়, তখন মাঠের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার কারণ অনুধাবন করা যায়। ফারুককে সরিয়ে যখন বুলবুলকে সভাপতি করা হচ্ছিল লিটন কুমার দাসরা তখন লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিসিবির পরিবর্তনের খবর মুহূর্তে জেনেছেন তারা। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে থাকা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিমও তো ফারুককে অপসারণের তৎপরতার অংশ। এর পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। গতকাল বিসিবির সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে তাঁকে। বিসিবি পরিচালক হওয়ার পর থেকে যিনি বিদেশ সফর করায় ব্যস্ত। নারী-পুরুষ জাতীয় দলের খেলা ছাড়াও বয়সভিত্তিক দলের সিরিজ দেখতেও বিদেশে গেছেন নিয়মিত। হংকংয়ে গেছেন সেমিনারে। ফারুকের কাছ থেকে এত সুবিধা নেওয়া নাজমুল আবেদীনও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। প্রথম নামটিই তাঁর। 

স্পোর্টস পলিটিকস করে এই মানুষগুলো নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারলেও দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রবাসে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন উপভোগ করা বুলবুলই বা কেন দেশের ক্রিকেটের রাজনীতির অংশ হলেন? আইসিসির চাকরিতে ভালো বেতন পাওয়া বুলবুল হয়তো নামের পাশে সভাপতির লেখার লোভে প্রলুব্ধ হয়েছেন। ফলে কুশীলবদের প্রস্তাবে সভাপতি হতে রাজি হয়েছেন। গতকাল সভাপতি নির্বাচিত হলেন। গঠনতন্ত্র সংশোধন, দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব ছাড়তে চান বুলবুল। তবে তাঁর এই সংক্ষিপ্ত পথচলা মসৃণ নাও হতে পারে। কারণ বিসিবির সভাপতি হতে আগ্রহী প্রার্থী, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার কড়া নজর থাকবে তাঁর ওপর।  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হয় ছ ন আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ সফরের সময়সূচি ঘোষণা

বছরের শেষভাগটা ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাতে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষ করেই এবার তারা পাড়ি জমাবে বাংলাদেশে। অক্টোবর-নভেম্বরে নির্ধারিত এই সফরে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলবে ক্যারিবীয়রা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ইতোমধ্যেই আসন্ন তিনটি সিরিজের সূচি চূড়ান্ত করেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ মাঠে গড়াবে অক্টোবরের ১৮, ২০ ও ২৩ তারিখে। এরপর শুরু হবে সমান সংখ্যক টি-টোয়েন্টি, যা অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবরের ২৭, ৩০ ও নভেম্বরের ১ তারিখে।

আরো পড়ুন:

৭ উইকেটের হার, সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ

শান্তর পরিবর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছেন দিপু, ভিসা হয়নি অঙ্কনের

তবে এর আগেই শারজাহতে নেপালের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেপ্টেম্বরের ২৭, ২৯ ও ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এই ম্যাচগুলো হবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

বাংলাদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরের ভেন্যুগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দুটি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তৃতীয় ওয়ানডে ও প্রথম টি-টোয়েন্টি হবে চট্টগ্রামে। বাকি দুটি টি-টোয়েন্টি আয়োজন করা হবে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল টাইগারদের। ক্যারিবীয়দের মাটিতে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার ঐতিহাসিক কীর্তি গড়লেও ওয়ানডে সিরিজে উল্টো হোয়াইটওয়াশের শিকার হতে হয়। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়।

বাংলাদেশ সফর শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অক্টোবরেই পাড়ি দেবে ভারতে। যেখানে দুটি টেস্ট খেলবে তারা। প্রথম টেস্ট শুরু হবে ২ অক্টোবর আহমেদাবাদে। আর দ্বিতীয় টেস্ট হবে ১০ অক্টোবর দিল্লিতে। এরপর নভেম্বর-ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ সফরে যাবে নিউ জিল্যান্ডে। যেখানে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি, তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টেস্ট খেলবে তারা।

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ম্যাচ সূচি:

ওয়ানডে সিরিজ:
১ম ওয়ানডে – ১৮ অক্টোবর,
২য় ওয়ানডে – ২০ অক্টোবর,
৩য় ওয়ানডে – ২৩ অক্টোবর।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ:
১ম টি–টোয়েন্টি – ২৭ অক্টোবর,
২য় টি–টোয়েন্টি – ৩০ অক্টোবর,
৩য় টি–টোয়েন্টি – ১ নভেম্বর।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ সফরের সময়সূচি ঘোষণা