ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। মে মাসে এ বছরের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, রয়েছে ভ্যাপসা গরমও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন আবহাওয়া এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য খুবই অনুকূল। ঈদুল আজহার আগে বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ঠিকঠাক হবে না। ফলে ঈদের পর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.

মুশতাক হোসেন বলেন, গত বছর বা তার আগের বছর সক্রিয় ছিল ডেঙ্গুর সেরোটাইপ ডেন-২ এবং কিছু এলাকায় ডেন-৩ ধরন। এ বছরও এ দুটি থাকলে তত বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেরোটাইপ ডেন-১, ৪ কিংবা ৩ বেশি সক্রিয় থাকলে শুধু রোগী নয়, গুরুতর রোগী বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর বাহক নিধনে অভিযান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকারের পক্ষে একা কিছু করা সম্ভব নয়, জনগণকে যুক্ত করে সারাদেশে অভিযান চালাতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ঈদের পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগী গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ। গত বছর মে মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৬৪৪, মারা যান ১২ জন। গত ৩১ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তিনজন। এ বছর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। মারা গেছেন ২৩ জন, যার ১১ জনই ঢাকা মহানগরীর। এর মধ্যে জানুয়ারিতে শনাক্ত ১ হাজার ১৬১, মৃত্যু ১০ জনের। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৭৪, মারা যান তিনজন। আর এপ্রিলে ৩৩৬ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয় সাতজনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আছেন ৩৬৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩ হাজার ৯৮২ জন। বর্তমানে ঢাকা মহানগরে ভর্তি রয়েছেন ৯০ জন। সর্বোচ্চ ২০ জন রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুম একটু আগেভাগে আসায় দুটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অতিবৃষ্টি হলে এডিস মশার লার্ভা ও ডিম ভেসে যাওয়ায় ঝুঁকি কমবে। কিন্তু বৃষ্টি থেমে গেলে যেসব জায়গায় পানি জমে থাকবে, সেসব স্থানে লার্ভা জন্মের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এ জন্য শুধু মশক নিধন নয়, পানি নিষ্কাশনেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মাসভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
এখন পর্যন্ত এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বড় কর্মসূচি দেখা যায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করায় কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, আমরা সপ্তাহে একবার কীটনাশক সরবরাহ করি। নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কর্মীদের বলা হয়েছে, হাতে থাকা ওষুধ যেন তারা রেশন করে চলেন।

ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালে রোগী কম আসায় অনেকটাই উপেক্ষিত সেই নির্দেশনা। ঢাকার কোনো হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট করা হয়নি।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সার্ভেতে আমরা দেখেছি, গত বছরের মে মাসের তুলনায় এবার চলতি মাসে মশার ঘনত্ব বেশি। এবার রোগীও বেশি। মনে হচ্ছে, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে। ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের ছুটি আছে। বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যেতে পারে।

ঢাকার বাইরের চিত্র

চট্টগ্রামে মৌসুমের আগেই মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গু। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মাসে এ পর্যন্ত ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এপ্রিলে ৩৩, মার্চে ২২ ও ফেব্রুয়ারিতে ২৮ রোগী শনাক্ত হয়। গত বছর মে মাসে ডেঙ্গু হয়েছিল মাত্র ১৭ জনের।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪১টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখন বছরজুড়েই থাকছে মশার উপদ্রব। অথচ গত ছয় মাসে মশক নিধন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সর্বশেষ পরিচালিত জরিপে ডেঙ্গুর হটস্পট চিহ্নিত এলাকায়ও মশক নিধন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ তাদের।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করছি। পরীক্ষিত পদ্ধতি হিসেবে বিটিআই লার্ভিসাইড নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত গত বছর মশক ন এ বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ