২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের ওপর গত ১৫ মে শুনানি শুরু হয়। এরপর ২৮ মে ও আজ রোববার শুনানি নিয়ে লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেওয়া হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা এবং আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানিতে ছিলেন।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ লিভ দিয়েছেন। আগামী ১ জুলাই আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে বলা হয়েছে।’

দুই দশক আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা পৃথক মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। এই রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিরা খালাস পান।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭৯ পৃষ্ঠা করে পৃথক দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। গত ১৩ মার্চ আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার আদালত সেদিন আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি একসঙ্গে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে ও শুনানি হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলটির শতাধিক নেতা-কর্মী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপ ল ব ভ গ র র ষ ট রপক ষ ব চ রপত

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দী অধ্যাপক আনোয়ারা চার বছর আগে অবসরে যান

চার দিন আগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম অসুস্থ। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হাড়ক্ষয়ের কারণে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। চার বছর আগে অবসর নেওয়ার পর তিনি রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি দলীয় কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। আদালতের কাছে এসব দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম।

অবশ্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

অধ্যাপক আনোয়ারার বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬ বছরের নিচে) হয় এবং কোনো নারী হন কিংবা অসুস্থ হন, সে ক্ষেত্রে আদালত ওই ব্যক্তির জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। যেহেতু আনোয়ারা বেগম অসুস্থ এবং বয়স্ক। তাঁর জামিনের বিষয়টি আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন।

নাবিলা মাহজাবিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের বয়স ৬৯ বছর, খুবই অসুস্থ। হাড়ক্ষয়ের কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না।

২০২১ সাল থেকে অবসরে

অধ্যাপক আনোয়ারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে অবসরে যান। একই বছর তাঁর স্বামী সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান মারা যান। এর পর থেকে তিনি কলাবাগানের বাসায় অবস্থান করছেন। তাঁর মেয়ে নাবিলা মাহজাবিন ও ছোট ছেলে জানিয়েছেন, অবসরের পর থেকে তাঁদের মা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেই।

নাবিলা মাহজাবিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের বয়স ৬৯ বছর, খুবই অসুস্থ। হাড়ক্ষয়ের কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না।

নাবিলা মাহজাবিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে পটুয়াখালীতে বসবাস করেন। আনোয়ারার ছোট ছেলে মায়ের সঙ্গে কলাবাগানের বাসায় থাকেন। তাঁর ছোট ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের সময় তাঁর মা বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। চার বছরের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। জগন্নাথের শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও তাঁর মা জড়িত নেই।

মামলার বাদী সুজন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছেন।

মা আনোয়ারাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ছোট ছেলে বলেন, গত বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি একাডেমিক সভায় যোগ দিতে তাঁর মাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন, তখন একদল যুবক তাঁর মাকে ঘিরে ধরেন। খবর পেয়ে সূত্রাপুর থানা–পুলিশ তাঁর মাকে থানায় নিয়ে যায়।

সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, অধ্যাপক আনোয়ারা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলার তদন্ত চলমান।

সূত্রাপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৯ জুলাই রায়সাহেব বাজারের কাছে স্টার হোটেলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে গুলি চালানো হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটান। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার চোখে গুলি লাগে। বাঁ চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এ ঘটনায় সুজন মোল্লা বাদী হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।

মামলার বাদী সুজন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছেন। সুজন মোল্লা বলেন, ‘যেসব শিক্ষক আমাদের অত্যাচার করেছেন, তাঁদের মধ্যে আনোয়ারা বেগম অন্যতম।’

অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় বহুজনকে আসামি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বশত্রুতা, বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্য থেকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করার কারণে জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বলা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মামলা হওয়ার অর্থ যত্রতত্র গ্রেপ্তার নয়।

অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক আনোয়ারার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (আনোয়ারা) কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। হয়রানির জন্য তাঁকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন
  • তিন মামলায় আইভীর জামিন আবেদন না মঞ্জুর
  • বুলবুলের কার্যক্রম স্থগিতাদেশ চেয়ে ফারুক আহমেদের রিট বাতিল
  • আমিনুলকে বিসিবির পরিচালক মনোনীত করার বৈধতা নিয়ে ফারুকের রিট তালিকা থেকে বাদ
  • রাশেদ খান মেননের আরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মামলায় গ্রেপ্তারে অনুমতির সিদ্ধান্ত স্থগিতের আদেশ আপাতত বহাল
  • কারাবন্দী অধ্যাপক আনোয়ারা চার বছর আগে অবসরে যান
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে চলে যাবেন: জয়নুল আবেদীন 
  • চট্টগ্রামে ছাত্র জোটের সমাবেশে হামলা নিয়ে ৩২ নাগরিকের বিবৃতি