কোরবানির ঈদ এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ৩ জুন থেকে রাজধানীতে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
পোস্তগোলা, ধোলাইপাড়, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আফতাবনগরসহ অন্তত ২০টি জায়গায় ইতোমধ্যেই গরু চলে এসেছে। কোথাও কোথাও শুরু হয়ে গেছে বেচাকেনাও। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
রাস্তা নয়, যেন গরুর খামার
আরো পড়ুন:
সমন্বয় বাড়িয়ে আর্থিক বিবরণীর মানোন্নয়নে ৩ সংস্থাকে দিকনির্দেশনা
৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ: স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বিএসইসির স্পষ্টকরণ
অনেক জায়গায় হাটের নির্ধারিত সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তা, গলিপথ এমনকি আবাসিক ভবনের সামনেও পশু রাখা হচ্ছে। ইসলামবাগ ও হাজারীবাগ এলাকায় রিকশা চলাচল প্রায় অচল।
দয়াগঞ্জের বি-ব্লকের বাসিন্দা রবিউল হক বলেন, “গলির মুখ থেকে মসজিদের পাশ পর্যন্ত গরু দাঁড়িয়ে আছে। এতে শিশু, রোগী ও পথচারীদের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
রবিবার শনির আখড়ার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, “রাস্তায় গরু দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মাইকে সারাদিন বিক্রি-বিক্রির চিৎকার। ঘরে বয়স্ক মানুষ, শিশুরা আছে—এমন পরিবেশে থাকা দায় হয়ে উঠেছে।”
নিয়ম শুধু কাগজে
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে হাট চালুর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ৩ জুন থেকে হাট চালুর নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু আগেভাগেই পশু এসেছে, কিছু বিক্রিও হচ্ছে। খোলা জায়গার ওইভাবে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে।”
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো.
দক্ষিণে রাজনীতি, উত্তরে উদাসীনতা
ডিএসসিসি এ বছর ১১টি অস্থায়ী হাট বসানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে মেরাদিয়া ও আফতাবনগরের হাট স্থগিত করা হয়। তবুও সেসব জায়গায় সরাসরি নিয়ম ভঙ্গ করেই হাট বসেছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান বলেন, “অনেক জায়গায় এখনো দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করায় কার্যাদেশ জারি করতে দেরি হচ্ছে।”
অন্যদিকে উত্তরে, যেখানে রাজনৈতিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে আগেভাগেই হাট বসে যাচ্ছে তদারকির অভাবে। পর্যাপ্ত নজরদারির ঘাটতি স্পষ্ট।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি- বিক্রির জন্য দরকার প্রস্তুতি
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগেভাগে গরু আনার কারণ একটাই, ক্রেতাদের আগে থেকে দেখানোর সুযোগ তৈরি করা। এতে হাটে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ে, বিক্রির সম্ভাবনাও বাড়ে। যদিও তারা স্বীকার করেন, এখনো বিক্রির হার কম।
শনির আখড়া হাটের বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, “১৫ লাখ চাচ্ছি, এখন পর্যন্ত ৮ লাখ বলছে। দাম পেতে সময় লাগে। আগেভাগে এলে দরকষাকষির সময় পাওয়া যায়।”
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হাট যেন তাদের জীবনে এক আতঙ্কের নাম। গরু, ট্রাক, মাইকিং, ময়লা, দুর্গন্ধ—সব মিলিয়ে এক অস্থির পরিবেশ।
রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, “দনিয়া কলেজ মাঠের হাটের অনুমতি দেওয়া হলেও গরু চলে এসেছে ৩ কিলোমিটার ভেতরে রায়েরবাগ পর্যন্ত। অলিগলি পর্যন্ত গরু। আমরা কোথায় যাব? কিভাবে চলবো?”
বিশৃঙ্খলা রোধে করণীয়
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, “নগরের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় হাট ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা জরুরি। প্রতি বছর একই বিশৃঙ্খলা দেখছি, অথচ কার্যকর পদক্ষেপ নেই।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি হাট নির্ধারিত সময় ও স্থানে চালু করতে হবে। আবাসিক এলাকায় হাট নিষিদ্ধ করতে হবে। মাইকিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আনতে হবে। ডিজিটাল বা অনলাইন পশুর হাট জনপ্রিয় করতে পারলে চাপ অনেকটাই কমবে। হাট ব্যবস্থাপনায় যেসব সমস্যা প্রতিবছরই দেখা দেয়, তার পেছনে রয়েছে দুর্বল প্রশাসনিক সমন্বয়, রাজনৈতিক চাপ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ। হাট ইজারা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকলে কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। আবার যাদের ইজারা দেওয়া হয়, তারা নির্ধারিত নিয়ম মানে না।”
তিনি আরো বলেন, “কিছু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিয়ম অমান্য করেই আগে হাট বসিয়ে দেন। পরে প্রশাসন বাধ্য হয় বিষয়টি মেনে নিতে। এতে করে আইনের শাসন বিঘ্নিত হয়।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গর র জন ত ক ব যবস য় আগ ভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?
এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?
অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?
তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।
তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।
এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।
এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।