ছাঁটাই লিংকডইনেও, চাকরি হারালেন ২৮১ জন
Published: 3rd, June 2025 GMT
সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাইয়ের ধারাবাহিকতা এবার এসে ঠেকেছে চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় অনলাইন মাধ্যম লিংকডইনে। প্রতিষ্ঠানটি ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৮১ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সফটওয়্যার প্রকৌশলী। চাকরি হারিয়েছেন পণ্য ব্যবস্থাপক ও নিয়োগ বিষয়ক পদে থাকা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
লিংকডইনের পক্ষ থেকে ছাঁটাইয়ের বিষয়টি জানানো হয় গত ১৩ মে। ছাঁটাই হওয়া অনেকেই পরে নিজের লিংকডইন প্রোফাইলে ‘ওপেন টু ওয়ার্ক’ ট্যাগ ব্যবহার করে নতুন চাকরির সন্ধান করছেন। মাইক্রোসফটের মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৮ হাজার ৪০০ জনকে কর্মসংস্থান দিচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে মাইক্রোসফট নিজেই বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রায় ছয় হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। যা তাদের মোট কর্মী বাহিনীর প্রায় ৩ শতাংশ। সেই বড় ছাঁটাইয়ের অংশ হিসেবেই লিংকডইনের এই কর্মী ছাঁটাই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালেও এক দফা ছাঁটাই করেছিল লিংকডইন। তখন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রায়ান রসলানস্কি একটি আবেগপূর্ণ বার্তায় সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। তবে এবারের ছাঁটাই নিয়ে তাঁর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য আসেনি। এতে কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে—এই ছাঁটাই কেবল শুরু, নাকি আরও বড় কিছু আসন্ন?
বিশ্বের অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্রও খুব আলাদা নয়। চলতি বছরেই কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে মেটা, গুগল, অ্যামাজন, অটোডেস্কসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। কেউ বলছে খরচ কমানো, কেউ বলছে কাঠামোগত রূপান্তর বা কর্মীর সংখ্যা পুনর্মূল্যায়নের কথা।
এই পরিবর্তনের পেছনে একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন এমন সব এআই টুল ব্যবহার করছে, যেগুলো নিজেরাই কোড লিখতে, ত্রুটি শনাক্ত করতে, এমনকি পণ্যের উন্নয়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে সহায়তা করতে পারছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, একটি প্রকৌশলী দল যেখানে আগে অপরিহার্য ছিল, সেখানে এখন কি অল্পসংখ্যক জনবল দিয়েই কাজ চালানো সম্ভব নয়?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রযুক্তি খাতে একধরনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটছে। সেখানে একদিকে এআই উদ্ভাবনের গতি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে অনেকের চাকরিকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে। লিংকডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, ‘আমি মনে করি না, এখনকার কোনো এআই টুল সত্যিকারের বন্ধু হতে পারে। যদি তা–ই ভাবা হয়, তাহলে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষতিকর।’
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।