বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা ২১ দিন আন্দোলনের পর ঈদ উপলক্ষ্যে বুধবার থেকে বিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তালাবদ্ধই রাখা হয়েছে নগর ভবন। এ কারণে সেবা নিতে এসেও ফিরে গেছেন অনেকে।

ভবন তালাবদ্ধ থাকায় সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রবেশ করতে পারছেন না। পাশের সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল আর ওয়াসা ভবনে বসে জরুরি কাজ সারছেন তারা। 

নগরভবনে গিয়ে দেখা যায়, সেবাপ্রার্থীর পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফিরে যাচ্ছেন। তাঁতীবাজারের বাসিন্দা আব্দুর রসুল সমকালকে বলেন, ছেলের জন্মসনদের জন্য ১৫ দিন ধরে এসেও ফেরত চলে যেতে হচ্ছে। ভেবেছিলাম আন্দোলনে যেহেতু বিরতি দেওয়া হয়েছে, তাই হয়তো অফিস খুলেছে। তবে এসে দেখি ভবনের তালা খুলেনি।

আজ দুপুরে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান ও তথ্য কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন নগর ভবনে এসে ফেরত যাচ্ছিলেন। তারা সমকালকে বলেন, প্রতিদিন অফিসে এসেও ফেরত চলে যেতে হয়। কারণ ভবন তালাবদ্ধ। জরুরি কিছু কাজের জন্য ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী সরকারী কর্মচারী হাসপাতালের একটি কক্ষে বসেছেন, সেখানেই তারা যাচ্ছেন। বর্তমান প্রশাসক ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন। সেখানেও ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে প্রবেশ করছিলেন তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাহী এখানে বসেছেন। তাই এখানেই ফাইলপত্র নিয়ে এসেছি।

গত মঙ্গলবার ইশরাক হোসেন নগর ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ, জনগণের ভোগান্তি ও যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে আমরা নগর ভবনে অবরোধ এবং ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কিছুটা শিথিল, কিছুটা বিরতি দিয়েছি। তবে এই সরকারকে এখন বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, অবিলম্বে মেয়র পদে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা না করলে ভোটারদের নিয়ে নিজেই শপথ পড়ে চেয়ারে বসবো।’

ইশরাকের শপথ আয়োজনের দাবিতে নগর ভবনের মূল ফটকে গত ১৫ মে তালা ঝুলিয়ে দেন তার সমর্থকরা। তারপর থেকে কার্যত বন্ধ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের সেবা কার্যক্রম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এসস স ইশর ক হ স ন নগর ভবন কর মকর ত নগর ভবন ড এসস স সরক র ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটক টানতে ছাড়ের প্রতিযোগিতা 

এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি। বেশ কিছু দেশের ভিসা জটিলতায় বিদেশভ্রমণ সীমিত হয়ে আছে কয়েকটি দেশে। তবু লম্বা ছুটিতে প্রত্যাশিত বুকিং পাচ্ছে না দেশের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্ট। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তাই ছাড়ের ছড়াছড়ি এবার। রুমের ভাড়ায় ৫৫ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি দুই দিন থাকলে তৃতীয় দিন ফ্রি থাকার সুযোগও দিচ্ছে কেউ কেউ।

কয়েক বছর ধরেই বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। লম্বা ছুটির কারণে বিদেশে বেড়ানোর ঝোঁকটা এবারও বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভিসা বন্ধ অনেক দিন ধরে। আরব আমিরাতের ভিসাও বন্ধ। জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে সম্প্রতি। এর ফলে আশপাশের চারটি দেশে বেড়ানোর ঝোঁক বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান।

বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (আটাব), প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতি ও একাধিক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

টোয়াবের সদস্যরা বলছেন, বিদেশে যেতে নানা বাধার কারণেই দেশের ভেতরে এবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন পর্যটকেরা। ঈদে লম্বা ছুটির প্রথম তিন দিন চলে যাবে ঈদ উৎসব পালন করতে। মূলত ঈদের পরদিন থেকে বেড়াতে যাওয়া শুরু করবেন পর্যটকেরা। এবারের বৃষ্টিমুখর আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাড় দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাইছে হোটেল-রিসোর্টগুলো।

টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে যেতে ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। পর্যটনের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ভারত পুরোপুরি বন্ধ। থাইল্যান্ড ভিসা দিতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিচ্ছে। অনেকে ভিসা পাচ্ছেন না। তাই আগ্রহটা দেশের ভেতরেই বেশি দেখা যাচ্ছে।

দেশের মধ্যে বেড়ানোর শীর্ষে আছে সমুদ্র শহর কক্সবাজার। এবারও সবচেয়ে বেশি পর্যটককে সেবা দিতে তৈরি হয়েছে এখানকার হোটেল-রিসোর্ট। বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে আগ্রহ কমেছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে বান্দরবানের লামায় সম্প্রতি ৬০টি রিসোর্ট সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। সুনামগঞ্জের হাওর ও সুন্দরবনে কিছুটা ঝোঁক আছে পর্যটকদের। এর বাইরে মৌলভীবাজার, গাজীপুরের রিসোর্টগুলোতেও ছাড় দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। 

পরিবার নিয়ে কেনিয়ায় বেড়াতে যাচ্ছেন ফারজানা নীলা। তিনি বলেন, ছুটি পেলেই দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে ইচ্ছে করে। উড়োজাহাজের টিকিটের দামের কথা চিন্তা করে সব সময় যাওয়া হয় না। এবার লম্বা ছুটি থাকায় জমানো টাকা খরচ করে আফ্রিকার দেশটিতে যাচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদুল আজহায় বেড়ানোর প্রবণতা একটু কম থাকে। এ ছাড়া জুনে বর্ষার সময় বলে অনেকে বেড়াতে যেতে চান না। এবার তো আগাম বর্ষা শুরু হয়েছে। দেশের পর্যটন এলাকায় অধিকাংশ হোটেল, রিসোর্ট ফাঁকা থাকতে পারে। বিদেশে আগের চেয়ে আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্টে ছাড় চলছে। এর বাইরে নানা রকম প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে তুলনামূলক কম খরচে। ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ছুটির সময়টাতেই এসব অফার দিয়েছে তারা। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা সায়মন বিচ রিসোর্ট ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে ৮ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত। ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বেওয়াচ হোটেল। রুম ভাড়া কমিয়ে অফার দিয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট। 

এবারও ভিড়টা হবে কক্সবাজারে

ঈদের আগের দিন কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছেন ফারহানা হোসেন। তিনি বলেন, মারমেইড বিচ রিসোর্টে তিন দিনের জন্য বুকিং দিয়েছেন। ভালো ছাড় থাকায় পরিবার নিয়ে সমুদ্রসৈকতে কয়েকটা দিন কাটানোর সুযোগটা নিয়েছেন। সুযোগ পেলেই বেড়াতে যান তাঁরা। 

কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট আছে। এসব হোটেলে দিনে ধারণক্ষমতা দুই লাখের বেশি। স্থানীয় হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতি বলছে, ঈদের পরদিন থেকে মূলত বুকিং শুরু হয়। গত বছরের তুলনায় এবার বুকিং অনেক কম। সেন্ট মার্টিন বন্ধ, মহেশখালী ও সোনাদিয়াতেও বেড়ানো যাচ্ছে না এখন। সমুদ্র উত্তাল আছে। তাই আগ্রহ কম থাকতে পারে। 

কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটিতে মূলত ৯ থেকে ১১ জুনের বুকিংয়ে চাপটা বেশি। প্রথম সারির তারকা হোটেলগুলোতে ৪ জুন পর্যন্ত ৮২ শতাংশ বুকিং হয়েছে। অন্যান্য হোটেলে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত রুম বুকিং হয়েছে। সব মিলে এবার ৫ থেকে ৬ লাখ পর্যটক আসতে পারে কক্সবাজারে। 

সিলেটের নাজিমগড় রিসোর্টে দুটি রুম নিলে একটি রুম ফ্রি অফার দিয়েছে। ছাড় দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্ট। কমলগঞ্জের ব্যাকইয়ার্ড রিট্রিট দিয়েছে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, তিন রাতের বুকিং দিলে এক রাত ফ্রি থাকার সুযোগ। ৫৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে গাজীপুরের ছুটি রিসোর্ট। তাদের অন্য দুটি রিসোর্টেও থাকছে একই রকম ছাড়। জুন মাসজুড়েই বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ অফার দিয়েছে হবিগঞ্জের দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট।

প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে আগ্রহ থাকলেও উড়োজাহাজের টিকিটের চড়া দাম ও ভিসা জটিলতায় অনেকে যেতে পারছেন না। নেপালে তো ঈদের পরদিন থেকে ছুটির সময় উড়োজাহাজ টিকিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কোনো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে কক্সবাজারে যাচ্ছেন পর্যটকেরা, অন্য এলাকায় আগ্রহ কম এবার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ