কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খান।

তিনি বলেন, “কারণ ভোগান্তির বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।”

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

সড়কে পরিবহন সংকট, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির
তেলের দাম কমানো হয়েছে, বাসে বাড়তি ভাড়া নিলেই ব্যবস্থা

উপদেষ্টা বলেন, “অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করছে সরকার। ঈদে সবাই যেন ঠিকভাবে গ্রামের বাড়ি যেতে পারেন, আমরা এ বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। ট্রেনে বিনা টিকিটি ভ্রমণের বিষয়ে কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়েছে। কমলাপুর রেল স্টেশনে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

ট্রেনে ছাদে ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা নিরুৎসাহিত করেছি। তারপরও ঈদের কারণে হয়তো অনেকে যেকোনোভাবে বাড়ি যেতে চায়। তাই অনেক সময় মানবিক কারণে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। তারপরও বিষয়টি দেখতে তিনি রেলওয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।”

“সড়ক পথে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় কিনা সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করা হয়েছে,” বলেও জানান তিনি।

উপদেষ্টা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সায়েদাবাদে তার উপস্থিতিতে লাল সবুজ পরিবহনের একটি বাসকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এর আগে, কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখেন তিনি। এ সময় যাত্রীদের টিকিট চেকিং ও তাদের সুবিধা-অসুবিধার খবর নেন।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন র ল স ট শন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও