মিয়ানমারকে করিডোর দিয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয়ের জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এটা করা হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। কিন্তু এই প্রস্তাবটি প্রস্তাবের পর্যায়েই রয়ে গেছে।
 
শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের দেশে এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর সময়কালে, যখন রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। সেখানে চলমান সংঘাত ও মানবিক পরিস্থিতির কারণে এখনও অনেকে আসতে চেষ্টা করছেন। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করতে এবং যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম, তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে প্রায় মৃত অবস্থায় পেয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে ইস্যুটি ঝরে পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ইস্যুটিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টির সম্মুখভাগে নিয়ে আসতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আপনারা জেনে খুশি হবেন, জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে একমত হয়েছে এবং তারা একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করতে পেরেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরেকটি বড় অগ্রগতি হচ্ছে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক প্রত্যাবাসনযোগ্য রোহিঙ্গাদের সর্বপ্রথম তালিকার ঘোষণা। গত এপ্রিল মাসে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে আলোচনার সময় মিয়ানমার সরকার প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ও আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সরকারসহ সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমরা যত দেশেই সফর করেছি সব দেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় নেতা ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও ইতিবাচকভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরকালে রাখাইন‌ রাজ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মোকাবেলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প। যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম। আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচার সত্ত্বেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হবো না। এই জটিল সমস্যাটি সমাধানে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ড র প রস ত ব আম দ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যান্টার্কটিকার পর্বতমালার রহস্য উন্মোচন

৫০ কোটি বছর ধরে লুকানো এক পর্বতের রহস্য উন্মোচন করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই বরফাচ্ছন্ন অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে বিজ্ঞানীদের রহস্যের শেষ নেই। সেই অ্যান্টার্কটিকার বরফের গভীরে থাকা গ্যাম্বুরতসেভ পর্বতমালার বৈচিত্র্য খোঁজার কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।

পুরোনো পৃথিবীর বরফ সংরক্ষিত আছে, এমন পর্বত বলয়ের একটি অ্যান্টার্কটিকাতে আছে। বরফের নিচের থাকা গ্যাম্বুরতসেভ পর্বতমালা সাধারণভাবে ইউরোপীয় আল্পসের মতো। বিজ্ঞানীরা বরফের কয়েক কিলোমিটার নিচে গাম্বুরতসেভ উপহিমবাহনির্ভর পর্বতমালা সনাক্ত করেছেন। পর্বতমালা কয়েক কিলোমিটার বরফের নিচে অবস্থিত। ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে এই পর্বতমালা। ১৯৫৮ সালে একটি অভিযানের সময় ভূমিকম্প কৌশল ব্যবহার করে এই পবর্তমালার তথ্য প্রথম জানা যায়। ৫০ কোটি বছর ধরে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে এই পর্বতমালা।

বরফের নিচের লুকিয়ে থাকা গাম্বুরতসেভ পর্বতমালা পূর্ব অ্যান্টার্কটিক বরফের সর্বোচ্চ বিন্দুর নিচে চাপা পড়ে আছে। যেখানে বেশির ভাগ পর্বতশ্রেণি ক্ষয় বা টেকটোনিক ঘটনার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়, সেখানে গাম্বুরতসেভ পর্বতমালা বরফের গভীর স্তরে বহু বছর ধরে সংরক্ষিত আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত পর্বত বলয় বলা হচ্ছে এই পবর্তমালাকে।

দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে পর্বতমালা তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব কাঠামো পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের পর হিমালয় পবর্তমালা তৈরি হয়। হিমালয় পর্বতশ্রেণির এখনো উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকার পবর্তমালা এত দিন ধরে কীভাবে স্থিতিশীল আছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করছেন বিজ্ঞানীরা।

আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটারস জার্নালে অ্যান্টার্কটিকার পবর্তমালা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানা সুপার মহাদেশ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয়। তখন থেকে অ্যান্টার্কটিকার পর্বতশ্রেণি বিকাশ লাভ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই সংঘর্ষের ফলে পাহাড়ের নিচে গরম ও আংশিকভাবে গলিত শিলার প্রবাহ শুরু হয়েছিল। পর্বত আকার ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভূত্বক ঘন হয়ে ওঠে। অনেক সময় পবর্তের নিজস্ব ওজনের কারণে ভেঙে পড়ে পর্বতকাঠামো।

বিজ্ঞানী জেফ বেনোভিটজ বলেন, অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর অ্যান্টার্কটিকার ভূতত্ত্বকে ঢেকে রেখেছে। ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিকা বেসমেন্ট শিলা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বরফের নিচের ভূপ্রকৃতির বিকাশ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রদান করতে পারে। প্রাচীন সময়ের ল্যান্ডস্কেপ কেমন ছিল, তা জানার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। গবেষকেরা পবর্তের তথ্য আহরণের জন্য জিরকন নামের খনিজের তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই খনিজ ভূতাত্ত্বিক স্টপওয়াচের মতো কাজ করে। এই ক্ষুদ্র স্ফটিক কোটি কোটি বছর ধরে টিকে থাকতে পারে। জিরকনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম ধারণ করতে পারে। ইউরোনিয়ামের ক্ষয় থেকে বিজ্ঞানীরা নির্ভুলতার সঙ্গে বয়স নির্ধারণ করতে পারে। এসব খনিজের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৫৮ কোটি বছর আগে পর্বতশৃঙ্গ তৈরি হয়। আর ৫০ কোটি বছর আগে সেখানে কাঠামোগত পতনের শুরু হয়েছিল।

বরফের মধ্য দিয়ে খনন করে শিলার নমুনা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। সেখানে খনিজের উপস্থিতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও তথ্য সংগ্রহ করতে নতুন মডেল নিয়ে কাজ করছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ