বিদেশে অর্থপাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। 

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিদেশে অর্থপাচারের যেসব মামলা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আর্থিক সমঝোতা ‘অন্যতম বিকল্প’ হতে পারে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সফরের আগে ঢাকায় দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কথিত কার্যকলাপের প্রকৃতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ নির্ভর করবে। যদি আইন লঙ্ঘনের প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে হালকা ধরনের হয়.

..তবে আমরা দেওয়ানি মামলা করব। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক সমঝোতার কথা বিবেচনা করা হবে। 

তিনি জানান, তাঁর দল আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনায় অর্থ জোগানো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশে এসে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিনিময়ে মামলায় সফল হলে সমঝোতার ভিত্তিতে বা পুরস্কার হিসেবে কিংবা আগেই নির্ধারণ করা অর্থ গ্রহণ করে থাকে তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, ‘আমরা লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের দিকে নজর দিচ্ছি। এ নিয়ে খুবই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আমরা চাই, যতটা সম্ভব অর্থ এ উৎস থেকে জোগাড় করা।’

এদিকে বুধবার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া। তাই এ কাজে গতি আনতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডন সফরে রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

প্রেস সচিব আরও জানান, পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইমস এজেন্সির (এনসিএ) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাচারের অর্থ শনাক্ত, কীভাবে পাচার হয়েছে তা খুঁজে বের করা ও জব্দ করার বিষয়ে ‘এনসিএ’-এর ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ বিষয়ে সংস্থাটি ইতোমধ্যে দুটি পদক্ষেপও নিয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, পাচারকৃত অর্থ কীভাবে ফেরত আনা যায় তা জানতে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও যাচাই করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যেই একাধিক বৈঠক হচ্ছে।

এর আগে ১১ মার্চ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। এ জন্য বিদেশের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। সচিবালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। বিশাল অংকের টাকা। সব অংকের টাকা আনতে, তাদের আইডেন্টিফাই করতে, বিভিন্ন দেশে আছে, এখানে কতগুলো আইনী পদক্ষেপ আছে, আবার সে আইনের পদক্ষেপগুলো বিদেশের সঙ্গে জড়িত। আমরা চেষ্টা করছি ইমিডিয়েটলি যেটা পারি আনতে। অন্যগুলোও আনার চেষ্টা করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এটলিস্ট কিছুটা ইন্ডিকেশন আসুক। এ জন্য আইনের...। আইন মানে কিছু এগ্রিমেন্ট করা বিদেশের সঙ্গে, এগুলো করব। নেক্সট মাসে আর একটু বেটার জানতে পারবেন।’

আপনারা কয়েকশ কোটি ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছেন। এটা কী সম্ভব- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সম্ভব। অনেক সময় দেখা যায় ১১-১২ জন দিয়েছে, ২০০ কোটি টাকার ওপরে অনেকের আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হয়তো আমরা আনতে পারব।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহস ন এইচ মনস র সমঝ ত র উপদ ষ ট পদক ষ প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকৃতির আলোয় সিলেটের বনলতা 

গ্রীনলাইন পরিবহনের রাজারবাগ কাউন্টারে বসা আমরা। বাস ছাড়ার মিনিট পাঁচেক আগেই বাসে উঠে পড়ি। সময় মতোই বাস ছাড়লো। শেষ বিকেলের সোনালি রোদ পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চলছি সিলেটের দিকে। ঢাকার বিখ্যাত যানজট তেমন আজ পেল না আমাদের। শুদ্ধ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের আতিথেয়তায় ঘুমিয়ে পড়েছে। অবশ্য শুদ্ধ যেখানেই যায় না কেন বাসে উঠলেই সে ঘুম দেবে। সে ৩০ মিনিটের যাত্রা হোক আর হোক পাঁচ ঘণ্টার। 

বাস চলছে। আমারো চোখ বন্ধ হবার উপক্রম। এর মাঝে যাত্রাবিরতীর ঘোষণা শোনা গেল। নেমে হালকা খেয়ে নিলাম আমরা। বাস থেকে নামার সময় বলা হলো, যাত্রাবিরতী বিশ মিনিট। কিন্তু এই যাত্রাবিরতী আধ ঘণ্টায় শেষ হলো। আবার যাত্রা শুরু। সন্ধ্যা শেষে রাতের নিস্তব্ধতা। রাত তখন ১০টা ৩০ মিনিট; বাস এসে থামলো সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে। আগে থেকেই আমাদের থাকার স্থান নির্ধারিত ছিল। ইকো রিসোর্ট বনলতা। সিলেট শহর হতে খুব কাছে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ। আমরা বাস থেকে নেমেই বনলতার পথে পা বাড়ালাম। ক্লান্তি এখন দেহজুড়ে। তাই যত তাড়াতাড়ি বনলতায় যাওয়া যায় তত ভালো। 

বনলতা নামে কেমন জানি মায়া জড়িয়ে আছে। জীবনানন্দ দাশের জন্যও হয়তো। আমরা এগিয়ে চললাম বনলতার পানে। শুরুতে দারুণ এক শহীদ মিনার দেখলাম নগরীর চৌহাট্টায়। মনে হলো পাহাড়ের মধ্যে শহীদ মিনারটি  দাঁড়িয়ে আছে। চৌহাট্টা পাড়ি দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। চলতি পথে দুই পাশে চা বাগান। যাওয়ার পথে একবার নয়, দু’দুবার প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু আঁধার রাতে ছবি তুলতে পারলাম না। আঁকাবাকা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছালাম বনলতায়। বনলতায় ঢোকার সাথে সাথে প্রকৃতির উষ্ণ অভ্যর্থনা। শহরের কোলাহল হতে মুক্তি পাওয়ার এ যেন এক বড় পাওয়া। 

আরো পড়ুন:

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিসিকের কন্ট্রোল রুম চালু

প্রথমবারের মতো শাবিপ্রবিতে হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক চা প্রদর্শনী

আমাদের সব ক্লান্তি মুছে গেল বনলতায় ঢুকে। ছোট্ট একটি লেকে নৌকা ভেসে বেড়াচ্ছে। আলো আঁধারের মাঝে ঝিঝি পোকা ছন্দে গেয়ে চলেছে। আমারা পদব্রজে এগিয়ে চললাম। সারি সারি গাছের  ফাঁকে আলো-আঁধারের খেলা অসাধারণ লাগছিল! প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে বনলতা গড়ে উঠেছে। আমি আর শুদ্ধ উঠলাম বাঁশের অরণি কটেজে। বাকিরা উঠলো মাটির কটেজ লাবণ্যে। একটু পরেই আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংক দেওয়া হলো। সারাদিন ক্লান্তি শেষে লেবুর শরবত ক্লান্তি দূর করল। সেখানকার সার্ভিস পারসন বললেন, এই শরবতের লেবু রিসোর্ট থেকেই সংগ্রহ করা। একটু পরেই আমাদের রাতের খাবার দেওয়া হলো। অনেক দিন পর মাটির থালাবাসনে খাবার খেলাম। অসাধারণ স্বাদ! আমি অনেক জায়গায় ঘুরতে যাই কিন্তু বনলতার রান্নার স্বাদ একটু ভিন্ন। যাই হোক চটপট রাতের খাবার খেয়ে আমরা নিদ্রায় গেলাম। 

পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙলো সকালে। দিনের আলোয় এবার আমাদের বনলতাকে দেখার পালা। চারটি কটেজের দেখা পেলাম। সবগুলো ইকো কটেজ। কোনটি বাঁশের, আবার কোনটি মাটির। কটেজগুলোর নামের ভিন্নতা মুগ্ধ করেছে আমাদের! কোন কটেজের নাম অরণী, কোনটা লাবণ্য, কোনটা সূর্যশিশির আবার কোনটা চারুলতা। পাহাড় সমভূমি সমন্বয়ে দারুণ ব্যাপার! শুদ্ধ ঘুম থেকে উঠেই দোলনায় দুলতে লাগলো। অন্য সদস্যরা কেউ ক্যারাম খেলার ঘরে, কেউ আবার লুডু খেলায় মগ্ন হয়ে পড়লো। কিছু সময় পর সকালের নাস্তা দেওয়া হলো ডিম ভাজা আর ভুনা খিচুড়ি, অসাধারণ স্বাদ! আমি মনে মনে ভাবছিলাম রান্নার এতো স্বাদের কারণ কী? একবার বনলতার হেঁশেলে যেতে হবে। সকালের পেট পূজা শেষে আমরা চলে গেলাম রাতারগুল সোয়াম ফরেস্টে। বনলতা থেকে একেবারে হাঁটার দূরত্বে রাতারগুল। ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সময় যে কিভাবে ছুটে চলে! রাতারগুল থেকে ঘুরে এসেই সরাসরি বনলতার হেঁশেলের দিকে পা বাড়ালাম। 

রোসনা খালা নামে একজন খুব মন দিয়ে রান্না করছেন মাটির চুলায়। বনলতার রান্নার এতো স্বাদের কারণ এবার বুঝতে পারলাম।  এবার মধ্যাহ্ন ভোজন। আগে থেকেই আমরা মেন্যু বলে দিয়েছিলাম। খাবার জন্য দারুণ একটি ব্যবস্থা দেখলাম! একসাথে অনেকজন বসা যায়। সেখান থেকে পুরো রিসোর্ট দেখা যায়। বাড়তি পাওয়া হলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের নয়নাভিরাম পাহাড়ের সৌন্দর্য। খাবার টেবিলে খাওয়া যখন এলো আর তর সইছিল না। আগেই বলেছি, মাটির চুলায় রান্নায় অন্যরকম স্বাদ পাওয়া যায়। সেই স্বাদ আমাদের মুগ্ধ করে। খুব যত্নের সাথে আমাদের আপ্যায়ন করা হলো। খরচটাও খুব কম। মোটামুটিভাবে সবার জন্য সহজলভ্য। আজ খাওয়াটা একটু বেশিই হলো। খাওয়া শেষ করে আমরা একটু বিশ্রাম নিয়ে সূর্যাস্ত দেখার জন্য আবার বনলতার ছায়াবিথীতে গেলাম। 

প্রকৃতির অনন্য রূপ বারবার মুগ্ধ করছিল আমাদের! সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বিকালের নাস্তা দেওয়া হলো। খুবই ঘরোয়া পরিবেশে আমরা যেমন বাসাবাড়িতে সন্ধ্যায় মুড়ি মাখা খাই তেমন। রাতে ছিলো বারবিকিউ। ঝিঝি পোকার ডাক আর গ্রামীণ আবহ আমাদের তৃপ্ত করলো। রাতের খাবার খেয়েই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল বেলা উঠেই আমাদের রওনা দিতে হবে নগরজীবনের পথে। এবার যাওয়ার পালা। দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা ফিরছিলাম। বনলতা পুরোটাই প্রকৃতির সাথে নিবিড় হয়ে আছে। যখন ফিরে আসছি, তখন পেছন থেকে সীমান্তের দিগন্ত ছোঁয়া মেঘালয় পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকছে আর বলছে, আরো কিছুক্ষণ থেকে যাও বন্ধু। বনলতার নয়নাভিরাম প্রকৃতি কাউকে নিরাশ করবে না আশাকরি।

যেভাবে যাবেন 

বনলতা সিলেট শহর থেকে ৪০ মিনিট দূরত্বে রাতারগুল সোয়াম ফরেস্টের কাছেই রামনগরে অবস্থিত। একেবারে মূল রাস্তার উপর বনতলার অবস্থান। শহরের আম্বরখানা থেকে সাহেব বাজার অভিমুখী সিএনজি নিয়মিত পাওয়া যায়। ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৩০ টাকা। সাহেব বাজার পৌঁছে রামনগর বনলতা ইকো রিসোর্টে যাবো বললে যে কেউ নিয়ে যাবে।  

খরচ কেমন 

খাবার খরচ ১৫০ টাকা হতে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। খাবার তালিকায় দেশি মাছ, মুরগি, হাঁস পাবেন। শ্রেণীভেদে কটেজ ভাড়া ২৫০০ টাকা হতে শুরু করে ৬০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রতিটি কটেজে এটাচড ওয়াশ রুম আছে। আছে তাবু নিবাসের ব্যবস্থা। তাবু নিবাস মাত্র ৫০০ টাকা। প্রতিটি কটেজের ক্ষেত্রে সকালের নাস্তা এবং বিকালের নাস্তা ফ্রি। যোগাযোগ : ০১৭১৭৬৭৪৩১০ 
 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ