ধারণক্ষমতার ছয় গুণ ব্যাটারি রিকশা রাস্তায় চলাচল
Published: 12th, June 2025 GMT
বগুড়া শহরে পাঁচ হাজার প্যাডেল রিকশার অনুমোদন রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে ধারণক্ষমতার ছয় গুণ অর্থাৎ ৩০ হাজারের বেশি ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক সড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। দিনে নতুন করে এ ধরনের প্রায় অর্ধশত যান রাস্তায় নামছে। ধারণক্ষমতার বেশি রিকশা চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা; বাড়ছে যানজট।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরে এখন প্যাডেল রিকশা চলাচল করছে বড়জোর দেড়শ। অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের হিসাবেই ব্যাটারি রিকশা চলছে অন্তত ৭ হাজার; ইজিবাইক ২৩ হাজারের বেশি। পুরো জেলায় ব্যাটারি রিকশা ৯ হাজার ও ইজিবাইক রয়েছে ২৯ হাজারের মতো। জেলা-উপজেলায় দিনে গড়ে ১২ ব্যাটারি রিকশা ও ৩৮টি ইজিবাইক নতুন করে রাস্তায় নামছে। এর মধ্যে গড়ে নষ্ট হচ্ছে ২০টির মতো। থেকে যাচ্ছে অন্তত ৩০টি। রিকশা-ইজিবাইকের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকছে।
শহরের খান্দারের অটোবিতানের কর্ণধার রুহুল আমিন জানান, শুধু শহরেই কমপক্ষে ২০টি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা বিক্রির দোকান রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে আছে দুই থেকে তিনটি। দিনে এসব দোকানে দু-একটি করে ইজিবাইক ও রিকশা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৩৮-৪০টি ইজিবাইক ও রিকশা বিক্রি হচ্ছে। কিস্তির সুযোগ থাকায় প্যাডেল রিকশা ছেড়ে অনেকেই এসব অবৈধ যান কিনছেন।
খান্দারের বাসিন্দা জাহিদ হাসান জানান, পোষাতে না পেরে পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি। গচ্ছিত অর্থে পাঁচটি ব্যাটারি রিকশা কিনে ভাড়া খাটাচ্ছেন। খরচ বাদে দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা থাকছে।
ইজিবাইক চালক শহরের ফুলবাড়ির বাসিন্দা বিপুল হোসেন বলেন, ‘চেষ্টা করেও চাকরি পাইনি। ইজিবাইক চালাচ্ছি। আমাদের কোনো সংগঠন না থাকায় পৌরসভা ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে।’
এদিকে বগুড়ার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ৭০ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনা তিন চাকার অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের কারণে ঘটছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের শেরপুর থানার ওসি আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মহাসড়কে লুকোচুরি করে অটোরিকশা-ইজিবাইক চালানোয় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এগুলো বন্ধ করা গেলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।
পৌরসভার রিকশার লাইসেন্স পরিদর্শক আমির হোসেন বলেন, ‘এখন প্যাডেল রিকশার লাইসেন্স নিতে কেউ আসেন না। লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক সড়ক দখল করে আছে। এসব যান নিয়মের আওতায় আনা ছাড়া দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।’
বিআরটিএ বগুড়ার সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। যান দুটির কারণে সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’ তবে বগুড়া পৌর প্রশাসক মাসুম আলী বেগ জানিয়েছেন, প্রশাসন ও নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমাতে পদক্ষেপ নেবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’