বগুড়া শহরে পাঁচ হাজার প্যাডেল রিকশার অনুমোদন রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে ধারণক্ষমতার ছয় গুণ অর্থাৎ ৩০ হাজারের বেশি ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক সড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। দিনে নতুন করে এ ধরনের প্রায় অর্ধশত যান রাস্তায় নামছে। ধারণক্ষমতার বেশি রিকশা চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা; বাড়ছে যানজট। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরে এখন প্যাডেল রিকশা চলাচল করছে বড়জোর দেড়শ। অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের হিসাবেই ব্যাটারি রিকশা চলছে অন্তত ৭ হাজার; ইজিবাইক ২৩ হাজারের বেশি। পুরো জেলায় ব্যাটারি রিকশা ৯ হাজার ও ইজিবাইক রয়েছে ২৯ হাজারের মতো। জেলা-উপজেলায় দিনে গড়ে ১২ ব্যাটারি রিকশা ও ৩৮টি ইজিবাইক নতুন করে রাস্তায় নামছে। এর মধ্যে গড়ে নষ্ট হচ্ছে ২০টির মতো। থেকে যাচ্ছে অন্তত ৩০টি। রিকশা-ইজিবাইকের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকছে।
শহরের খান্দারের অটোবিতানের কর্ণধার রুহুল আমিন জানান, শুধু শহরেই কমপক্ষে ২০টি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা বিক্রির দোকান রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে আছে দুই থেকে তিনটি। দিনে এসব দোকানে দু-একটি করে ইজিবাইক ও রিকশা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৩৮-৪০টি ইজিবাইক ও রিকশা বিক্রি হচ্ছে। কিস্তির সুযোগ থাকায় প্যাডেল রিকশা ছেড়ে অনেকেই এসব অবৈধ যান কিনছেন।
খান্দারের বাসিন্দা জাহিদ হাসান জানান, পোষাতে না পেরে পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি। গচ্ছিত অর্থে পাঁচটি ব্যাটারি রিকশা কিনে ভাড়া খাটাচ্ছেন। খরচ বাদে দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা থাকছে।
ইজিবাইক চালক শহরের ফুলবাড়ির বাসিন্দা বিপুল হোসেন বলেন, ‘চেষ্টা করেও চাকরি পাইনি। ইজিবাইক চালাচ্ছি। আমাদের কোনো সংগঠন না থাকায় পৌরসভা ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে।’
এদিকে বগুড়ার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ৭০ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনা তিন চাকার অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের কারণে ঘটছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের শেরপুর থানার ওসি আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মহাসড়কে লুকোচুরি করে অটোরিকশা-ইজিবাইক চালানোয় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এগুলো বন্ধ করা গেলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।
পৌরসভার রিকশার লাইসেন্স পরিদর্শক আমির হোসেন বলেন, ‘এখন প্যাডেল রিকশার লাইসেন্স নিতে কেউ আসেন না। লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক সড়ক দখল করে আছে। এসব যান নিয়মের আওতায় আনা ছাড়া দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।’
বিআরটিএ বগুড়ার সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। যান দুটির কারণে সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’ তবে বগুড়া পৌর প্রশাসক মাসুম আলী বেগ জানিয়েছেন, প্রশাসন ও নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমাতে পদক্ষেপ নেবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

নৌযানের অভাবে নদী তীরে ঢাকামুখী যাত্রীদের অপেক্ষা

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-টার্মিনাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী মানুষের ভিড় বাড়লেও পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে তাদের টার্মিনালগুলোতে ছয় থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ভোলা থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষকে ইলিশা ঘাটে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। 

শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত  প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যে মেঘনার তীরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অভিমুখী এসব মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছিল। 

বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, ঈদের ফিরতি যাত্রায় শুক্রবার, শনিবার সবচেয়ে ভিড় হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় যানবাহন কম থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেক যাত্রী প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যেও লঞ্চে উঠে নদী পার হয়ে কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করছেন। 

বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না হবার জন্য বারবার ঘোষণা করা হলেও যাত্রীরা এসব হুঁশিয়ারি মানছেন না। চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা জানান, ইলিশা ঘাটে সকাল থেকে অপেক্ষা করেও চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য দুপুর বারোটা পর্যন্ত কোনো লঞ্চে তারা উঠতে পারেননি। অভিযোগ করে তারা বলেন, ঈদের সময় এই রুটে হাজার হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করে। কিন্তু কখনো ভোলা-চট্টগ্রাম রুটে বড় কোন লঞ্চ দেওয়া হয় না। 

এ ছাড়াও একাধিক যাত্রী জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় ইলিশা লঞ্চ ঘাটে উপস্থিত হয়েও দুপুর বারোটা পর্যন্ত ঢাকাগামী কোন লঞ্চ তারা পাননি। ভোলা নদী বন্দর কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘‘ভোলার ইলিশা নৌ-টার্মিনাল থেকে লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে মোট ছয়টি জলযান চলেছে। এসব নৌযানে কমপক্ষে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত। এছাড়া ঢাকামুখী অন্তত ১৪টি লঞ্চ এই টার্মিনাল দিয়ে যাতায়াত করবে। তবে যাত্রীসংখ্যা বেশি থাকায় এটি পর্যাপ্ত নয়।’’

লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদে এবার ঘরমুখো মানুষদের একটি বড় অংশ লঞ্চে করে ফেরায় দীর্ঘদিন পর তারা লাভের মুখ দেখছেন। এবার ফিরতি যাত্রায়ও ভীড় হচ্ছে টার্মিনালগুলোতে। 

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা  বলেন, ‘‘গত দুই  দিন ধরেই যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে লঞ্চগুলোতে। এই ভিড় আরও বাড়বে।’’

শুক্রবার বরিশাল নদীবন্দর ব্যবহার করে অন্তত ১২টি লঞ্চ চলাচল করছে। এসব লঞ্চে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করেছে বলেও জানান তিনি। 

পলাশ//

সম্পর্কিত নিবন্ধ