ইস্কাটনে জোড়া খুন: পিনু খানের ছেলে রনিকে কারাগারের রান্না করা খাবারই খেতে হচ্ছে এখন
Published: 13th, June 2025 GMT
রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বখতিয়ার আলম ওরফে রনি আগে কিছুটা আয়েশেই থাকতেন। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হাসপাতালে। দ্বিতীয় শ্রেণির ডিভিশন (ডিভিশন-২) পাওয়া এই আসামি সে সময় নিজ বাসায় রান্না করা খাবার খেতেন।
তবে গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম (রনি) এখন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন। কারাগারের রান্না করা খাবার খেতে হচ্ছে তাঁকে।
তিনি থাকার জন্য চৌকি, তোশক, বিছানার চাদর, চেয়ার-টেবিল, মশারি ও সরকার অনুমোদিত একটি দৈনিক পত্রিকা পান। একটি কক্ষে একা থাকেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বখতিয়ার সাধারণ বন্দীর চেয়ে বেশি খাবার পান এবং নির্ধারিত খাবারের মধ্য থেকে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী আলাদা রান্না করে দেওয়া হয়।২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে একটি প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।
জোড়া খুনের এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বখতিয়ারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘বখতিয়ার আলম রনির পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে দুটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেছে, এর দায় আসামি এড়াতে পারেন না। তাই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’
কারাগারে একজন সাধারণ বন্দীকে সকালে রুটি ও ভাজি দেওয়া হয়। দুপুরে খেতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল ও সবজি। আর রাতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ।যেভাবে জোড়া খুন
ঘটনার রাত পৌনে দুইটার দিকে বখতিয়ারকে বহন করা প্রাডো গাড়িটি নিউ ইস্কাটন রোডে যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় চালকের পাশের আসনে বসা নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার বিরক্ত হয়ে তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে চার–পাঁচটি গুলি করেন। বখতিয়ারের বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ ও মো.
মামলার এজাহারে বলা হয়, গাড়ির জানালা খুলে এক ব্যক্তি এলোপাতাড়ি চার থেকে পাঁচটি গুলি ছুড়েছেন। সূত্রবিহীন ওই মামলায় তথ্যপ্রযুক্তি ও দৈনিক জনকণ্ঠ কার্যালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে ঘটনার রাতে একটা প্রাডো গাড়ির (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৬২৩৯) বেপরোয়া চলাচল দেখা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিপত্র দেখে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নিশ্চিত হয়, গাড়িটি সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের। তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্য সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার আগে ও পরে বখতিয়ারের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত হয় ডিবি। পরে একই বছরের ৩০ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
রীতেশ চাকমা বলেন, বখতিয়ারের দাবি, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে তাঁকে কারা চিকিৎসক দেখেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।কারাগারে যেমন আছেন বখতিয়ার
কারাবিধির ৬১৭ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘নাগরিকত্ব-নির্বিশেষ সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা ও অভ্যাসের কারণে জীবনমান উন্নতমানের, এমন বন্দীরা ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক রীতেশ চাকমা ১৩ মে প্রথম আলোকে বলেন, সাজা পাওয়ার পরই বখতিয়ার কারাগারে ডিভিশন পান। তিনি থাকার জন্য চৌকি, তোশক, বিছানার চাদর, চেয়ার-টেবিল, মশারি ও সরকার অনুমোদিত একটি দৈনিক পত্রিকা পান। একটি কক্ষে একা থাকেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বখতিয়ার সাধারণ বন্দীর চেয়ে বেশি খাবার পান এবং নির্ধারিত খাবারের মধ্য থেকে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী আলাদা রান্না করে দেওয়া হয়। বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবার তাঁকে দেওয়া হয় না।
কারাগারে একজন সাধারণ বন্দীকে সকালে রুটি ও ভাজি দেওয়া হয়। দুপুরে খেতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল ও সবজি। আর রাতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ।
কারা সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার দীর্ঘদিন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার-৪-এ ছিলেন। মাসখানেক আগে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে দুবার পরিবারের সদস্যরা বখতিয়ারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।
কারা তত্ত্বাবধায়ক রীতেশ চাকমা বলেন, বখতিয়ারের দাবি, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে তাঁকে কারা চিকিৎসক দেখেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।
আরও পড়ুনইস্কাটনে জোড়া খুন: সাবেক সংসদ সদস্যের ছেলে রনির জামিন স্থগিতই থাকছে২৭ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনজেলখানার বদলে তাঁরা হাসপাতালে১২ মার্চ ২০১৬উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বখত য় র র চ ক ৎসক হয় ভ ত অন য য় সদস য বছর র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
আরো পড়ুন:
নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের
কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের
শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।”
শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।
মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।
তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি। ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।
ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ