রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বখতিয়ার আলম ওরফে রনি আগে কিছুটা আয়েশেই থাকতেন। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হাসপাতালে। দ্বিতীয় শ্রেণির ডিভিশন (ডিভিশন-২) পাওয়া এই আসামি সে সময় নিজ বাসায় রান্না করা খাবার খেতেন।

তবে গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম (রনি) এখন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন। কারাগারের রান্না করা খাবার খেতে হচ্ছে তাঁকে।

তিনি থাকার জন্য চৌকি, তোশক, বিছানার চাদর, চেয়ার-টেবিল, মশারি ও সরকার অনুমোদিত একটি দৈনিক পত্রিকা পান। একটি কক্ষে একা থাকেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বখতিয়ার সাধারণ বন্দীর চেয়ে বেশি খাবার পান এবং নির্ধারিত খাবারের মধ্য থেকে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী আলাদা রান্না করে দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে একটি প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

জোড়া খুনের এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বখতিয়ারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘বখতিয়ার আলম রনির পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে দুটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেছে, এর দায় আসামি এড়াতে পারেন না। তাই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’

কারাগারে একজন সাধারণ বন্দীকে সকালে রুটি ও ভাজি দেওয়া হয়। দুপুরে খেতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল ও সবজি। আর রাতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ।

যেভাবে জোড়া খুন

ঘটনার রাত পৌনে দুইটার দিকে বখতিয়ারকে বহন করা প্রাডো গাড়িটি নিউ ইস্কাটন রোডে যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় চালকের পাশের আসনে বসা নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার বিরক্ত হয়ে তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে চার–পাঁচটি গুলি করেন। বখতিয়ারের বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ ও মো.

কামাল ওরফে টাইগার কামাল সে সময় গাড়ির পেছনের আসনে ছিলেন। তাঁরা আদালতে জবানবন্দিতে বলেন, বখতিয়ার পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এ ছাড়া ঘটনার আগে বখতিয়ারের সঙ্গে থাকা তাঁর আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমও আদালতে জবানবন্দি দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ব্যালিস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, বস্তুগত প্রমাণ, তদন্ত ও অন্যান্য সূত্র থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নিশ্চিত হয়, বখতিয়ারের এলোপাতাড়ি গুলিতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী (৪০) ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম (২৫) আহত হন। পরে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গাড়ির জানালা খুলে এক ব্যক্তি এলোপাতাড়ি চার থেকে পাঁচটি গুলি ছুড়েছেন। সূত্রবিহীন ওই মামলায় তথ্যপ্রযুক্তি ও দৈনিক জনকণ্ঠ কার্যালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে ঘটনার রাতে একটা প্রাডো গাড়ির (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৬২৩৯) বেপরোয়া চলাচল দেখা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিপত্র দেখে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নিশ্চিত হয়, গাড়িটি সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের। তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্য সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার আগে ও পরে বখতিয়ারের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত হয় ডিবি। পরে একই বছরের ৩০ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

রীতেশ চাকমা বলেন, বখতিয়ারের দাবি, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে তাঁকে কারা চিকিৎসক দেখেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।

কারাগারে যেমন আছেন বখতিয়ার

কারাবিধির ৬১৭ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘নাগরিকত্ব-নির্বিশেষ সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা ও অভ্যাসের কারণে জীবনমান উন্নতমানের, এমন বন্দীরা ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।’

কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক রীতেশ চাকমা ১৩ মে প্রথম আলোকে বলেন, সাজা পাওয়ার পরই বখতিয়ার কারাগারে ডিভিশন পান। তিনি থাকার জন্য চৌকি, তোশক, বিছানার চাদর, চেয়ার-টেবিল, মশারি ও সরকার অনুমোদিত একটি দৈনিক পত্রিকা পান। একটি কক্ষে একা থাকেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বখতিয়ার সাধারণ বন্দীর চেয়ে বেশি খাবার পান এবং নির্ধারিত খাবারের মধ্য থেকে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী আলাদা রান্না করে দেওয়া হয়। বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবার তাঁকে দেওয়া হয় না।

কারাগারে একজন সাধারণ বন্দীকে সকালে রুটি ও ভাজি দেওয়া হয়। দুপুরে খেতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল ও সবজি। আর রাতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ।

কারা সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার দীর্ঘদিন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার-৪-এ ছিলেন। মাসখানেক আগে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে দুবার পরিবারের সদস্যরা বখতিয়ারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

কারা তত্ত্বাবধায়ক রীতেশ চাকমা বলেন, বখতিয়ারের দাবি, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে তাঁকে কারা চিকিৎসক দেখেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।

আরও পড়ুনইস্কাটনে জোড়া খুন: সাবেক সংসদ সদস্যের ছেলে রনির জামিন স্থগিতই থাকছে২৭ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনজেলখানার বদলে তাঁরা হাসপাতালে১২ মার্চ ২০১৬

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বখত য় র র চ ক ৎসক হয় ভ ত অন য য় সদস য বছর র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকামুখী যাত্রায় যমুনা সেতুর পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার যানজট

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে আবারও ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এ কারণে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

যমুনা সেতু সাইট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে চলেছে ৩০ হাজার ৮১৭টি এবং ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন। এ সময় টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন যমুনা সেতুর পশ্চিমের কড্ডার মোড় এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজট চলছে। নলকা সেতু থেকে ঝাঐল উড়ালসড়ক হয়ে যমুনা সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে এই যানজট দেখা গেছে। এ কারণে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে থেমে থেমে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।

রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সেতু পরিবহনের সুপারভাইজার আবদুল আল মামুন বলেন, ‘দিবাগত রাত ১টার দিকে পীরগাছা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। এখন সকাল সাড়ে ১০টায় সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে উড়ালসড়কে যানজটে আটকে আছি। কখন ঢাকায় পৌঁছাব, তা বলা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বগুড়া থেকেই গাড়ি ধীরগতিতে চলছে। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে যানজটের তীব্রতা বেড়ে নলকা সেতু পার হওয়ার পর তা প্রকট আকার ধারণ করে।

ঢাকার উদ্দেশে কড্ডার মোড় থেকে রওনা হওয়া পোশাকশ্রমিক আলী হাসান বলেন, ‘আজই ছুটির শেষ দিন। তাই পরিবার নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। কিন্তু যানজটে সেতু পার হতে পারছি না। তার ওপর গরমে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।’

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঈদের ছুটির শেষ দিনে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় মহাসড়কে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ বলেন, সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিলেও কোথাও কোথাও সাময়িক যানজট তৈরি হচ্ছে, যা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ