নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
Published: 13th, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কানুরামপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড ও সেখানে থাকা ইজিবাইক স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ছয়জন আহত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কানুরামপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
নান্দাইলের কানুরামপুর বাসস্ট্যান্ডটি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ওপর একটি কোলাহলপূর্ণ এলাকা। বাসস্ট্যান্ড ও সড়কের ওপর ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত রিকশার স্ট্যান্ড থাকায় সেখানে সর্বক্ষণ যানজট লেগে থাকে। এছাড়া সম্প্রতি ঘোষিত জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের বাসস্ট্যান্ড রোড কমিটি নিয়ে কানুরামপুর বাসস্ট্যান্ডের দুইপাশে থাকা পালাহার ও দত্তপুর দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দু’পক্ষই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একপক্ষ অপর পক্ষকে কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চালাতে থাকে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের উপর নির্বিচারে নিক্ষেপ করে। এতে দুই পক্ষের ৬ জন আহত হয়। সংঘর্ষের কারণে মহাসড়কের দুই দিক থেকে আসা যানবাহনের তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম ঘটনাস্থল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে কানুরামপুর বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় গত বুধবার ময়মনসিংহ জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব আলী নান্দাইল উপজেলার কানুরামপুর রোড পরিবহন পরিচালনার জন্য ২৯ সদস্যের একটি কমিটি অনুমোদন দেন। এতে স্থানীয় ১০ জনকে উপদেষ্টা, জাকিয়ারা হোসেন ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক, আসাদুজ্জামান তারা, আলমগীর হোসেন, শফিক মিয়া ও আবু ফজলকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পাঁচজনকে কর্মকর্তা ও নয়জনকে সদস্য করা হয়।
কিন্তু উক্ত কমিটি গঠনের পর থেকেই কানুরামপুর এলাকার উত্তর পালাহার ও দত্তপুর ওই দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট জাহিদের নেতৃত্বে আরও একটি টহল টিম ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে সেখানে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।
নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ পর স থ ত স ঘর ষ সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’