‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
Published: 14th, June 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহের নান্দাইলের ইমরান হোসেনের (২৬) বুক, পিঠ, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছররা গুলি বিদ্ধ হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার তিনি অনেকটা নীরবেই চলে গেলেন। আজ শনিবার তাঁকে দাফন করা হয় নিজ গ্রামে।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আওয়ামী লীগ কখনো ফিরে এলে সমস্যা হবে—এমন আশঙ্কায় সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা নেননি কিংবা সরকারি তালিকাভুক্তও হননি ইমরান।
ইমরানের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার গ্রামের বাড়িতে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমরান জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি; কিন্তু সরকারি কোনো তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আন্দোলনে আহত হওয়ার বিষয়টিও ইমরান কাউকে বলেননি। এখন আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।’
ইমরান হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশলী ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। স্বজনেরা জানান, স্ত্রী ও ১৮ মাসের সন্তান নিয়ে গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় বসবাস করতেন ইমরান। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি পাশের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২৮ জুলাই গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে শরীর থেকে বেশ কিছু ছররাগুলি বের করলেও যন্ত্রণা কমছিল না। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের ভাড়া বাসায় বুকে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ইমরানের স্ত্রী রিতা আক্তার জানান, জুলাই আন্দোলনে তাঁর স্বামী আহত হলেও ভয়ে সরকারি তালিকায় নাম তোলেননি। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করানো যায়নি। তাঁর সঙ্গে যাঁরা আহত ও নিহত হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই তালিকাভুক্ত হওয়া ছাড়াও সরকারের সব ধরনের অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন; কিন্তু তাঁর স্বামীর কেউ খবর নেয়নি।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.
ইমরানকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে পোস্ট করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব মো. আলী হোসেন বলেন, ‘ইমরান আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সে ছবি আমাদের কাছে রয়েছে। অনেকটা নীরবে বিনা চিকিৎসায় একজন জুলাইযোদ্ধা আজ মারা গেছেন; কিন্তু সরকারি কোনো তালিকায় তাঁর নাম নেই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ ধ হয় ছ ল হয় ছ ল ন ইমর ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু এখন কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপদাহ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে আজ রোববার থেকে টানা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাসহ চারটি জেলা ও পাঁচটি বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রোববার বৃষ্টি হবে। পরদিন থেকে বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত সারাদেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হবে। ফলে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। এ সময় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে কখনও কখনও হতে পারে বজ্রপাত। বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানি হচ্ছে ইদানীং। সে জন্য বজ্রধ্বনি শুনলেই ঘরে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রংপুরের ডিমলায়। এ ছাড়া বান্দরবানে সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর শনিবার ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কয়েক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববার রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।