ভারত কোন স্বার্থে ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাচ্ছে না
Published: 16th, June 2025 GMT
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও); কিন্তু এ সংস্থার সদস্য হলেও ইসরায়েলকে নিন্দা জানানোর আলোচনা থেকে ভারত নিজেদের দূরে রেখেছে—নিন্দা জানানোর সিদ্ধান্তেও সমর্থন দেয়নি।
এতে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই সংঘাত নিয়ে ইউরেশীয় অঞ্চলের প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক জোটের ভেতর মতপার্থক্যের ইঙ্গিত মিলেছে।
ইসরায়েল নিজের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের ওপর যে নজিরবিহীন হামলা চালাচ্ছে, তা গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ কারণে বিশ্বনেতারা বারবার এ যুদ্ধ উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছেন।
গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর চলমান এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়।
এর আগে ২০২৪ সালে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দুই দফা সরাসরি সামরিক সংঘাত হয়, যার শুরু হয়েছিল ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে। জবাব দিতে ইরান প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালিয়েছিল।
এবার রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন শহরের আবাসিক ও সামরিক এলাকাগুলো ইসরায়েলি হামলার নিশানা হয়েছে। এসব হামলায় অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরান।
হামলায় ইরানের কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
পরদিন শনিবার ইরানের বিভিন্ন তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তেল মজুতের স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল।
পাল্টা জবাবে তেহরান ইসরায়েলের তেল আবিব ও হাইফা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
এসসিও একটি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্লক। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির সদস্য চীন, বেলারুশ, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান। সবচেয়ে নবীন সদস্য ইরান ২০২৩ সালে এসসিওতে যোগ দেয়, সে সময়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছিল ভারত।এ সংঘাতের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত করেছে তেহরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বাকি বিশ্ব নিজেদের অবস্থান জানাতে শুরু করছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থাও এ সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছে এবং ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে; কিন্তু ভারত ওই আলোচনা এবং ইসরায়েলের নিন্দা জানানো থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে। তবে কি ভারত ইসরায়েলকে সমর্থন করছে?
এসসিও কী বলেছে
সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) একটি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্লক। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির সদস্য চীন, বেলারুশ, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান।
সংস্থাটির সবচেয়ে নবীন সদস্য ইরান। দেশটি ২০২৩ সালে এসসিওতে যোগ দেয়। সে সময়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছিল ভারত।
বর্তমানে এসসিওর চেয়ারম্যান চীন। গত শনিবার এসসিওর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার তীব্রতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক হামলার কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামোসহ বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের মারাত্মক লঙ্ঘন। এ হামলা বেসামরিক প্রাণহানির কারণ হয়েছে।
ভারত সূক্ষ্মভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখছে।শান্তি ডি’সুজা, ম্যাসাচুসেটস-অ্যামহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলোবিবৃতিতে আরও বলা হয়, (ইসরায়েলের হামলা) ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণ এবং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকির সৃষ্টি করেছে।
ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এসসিও সদস্য রাষ্ট্রগুলো জোর দিয়ে বলেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সমাধান শুধু শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে হওয়া উচিত।
ভারত কি কূটনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করছে
তেহরানে ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই ফোনালাপে জয়শঙ্কর বলেন, পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিয়েছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি যেকোনো ধরনের উত্তেজনাকর পদক্ষেপ এড়িয়ে চলা এবং দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনায় ফেরার আহ্বানও জানিয়েছেন।
শুক্রবার এক পৃথক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও তাদের উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘পরিস্থিতির অগ্রগতি যেভাবে হচ্ছে, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা–সম্পর্কিত প্রতিবেদনের দিকে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছি। উভয় পক্ষকে আলোচনা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে পরিস্থিতি উত্তরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানও জানানো হচ্ছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত উভয় দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং সব সম্ভাব্য সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান নিহত: রাষ্ট্রীয় টিভির খবর১৩ জুন ২০২৫ম্যাসাচুসেটস-অ্যামহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শান্তি ডি’সুজা আল–জাজিরাকে বলেন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত একটি বিশেষ অবস্থানে আছে। কারণ দেশটিকে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখতে হয়।
ইসরায়েলের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। আল–জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৪ সালে গাজা যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলের কাছে রকেট ও বিস্ফোরক বিক্রি করেছে।
ইসরায়েলের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। অন্যদিকে ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন করে এটিকে মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানে নিজেদের পণ্য রপ্তানির একটি প্রধান দ্বার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে।অন্যদিকে ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন করে এটিকে মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানে নিজেদের পণ্য রপ্তানির একটি প্রধান দ্বার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে।
শান্তি বলেন, ভারত সূক্ষ্মভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখছে।
এসসিও ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর নয়াদিল্লি বলেছে, তারা ওই বিবৃতি–সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নেয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের আগের বিবৃতির কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ভারত এসসিও-র অন্যান্য সদস্যের কাছে নিজের সামগ্রিক অবস্থান উল্লেখ করেছে।
আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত১৩ জুন ২০২৫ভারত কি তবে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে
স্পষ্টভাবে না বললেও নয়াদিল্লি নিজেদের দূরে রাখায় এসসিওর ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দার প্রভাবকে দুর্বল করে দিয়েছে।
এসসিওর নিন্দা জানানোর অবস্থান থেকে নিজেকে দূরে রাখার এক দিন আগে ভারত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গাজায় ‘তাৎক্ষণিক, শর্তহীন ও স্থায়ী’ যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত ছিল।
দিল্লিভিত্তিক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের উপপরিচালক কবির তানেজা বলেন, জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভারতের ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তিকর।
তানেজার মতে, হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার ইচ্ছা থেকে ভারত এটা করছে।
এ বিষয়ে তানেজা বলেন, ভারত ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছে পৌঁছে গেছে। এমন একটি চুক্তি যা তারা জুলাইয়ের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহারের আগেই করার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভারতের ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তিকর।কবির তানেজা, দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের উপপরিচালককবির তানেজা ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি এক পাশে সরিয়ে রেখে ইসরায়েল বিষয়ে নয়াদিল্লির অবস্থানের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে এসসিও জোটের প্রকৃত কাঠামো প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে ভারত অনেকটাই একজন ব্যতিক্রমী সদস্য হিসেবে অবস্থান করছে। চীন ও রাশিয়া ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লির জন্য এসসিওর বিবৃতিতে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ভাষা ও অবস্থানে সম্মতি দেওয়া খুব কঠিন হতো।
আরও পড়ুনআগেই ইরানে ঢুকে কীভাবে হামলার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ১৪ জুন ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী চাপ কি ভারতের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে
ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ইরান ছিল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশ।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানকে চাপে রাখতে তিনি অর্থনৈতিক চাপের কৌশল আরও জোরালো করেন। এর অংশ হিসেবে তিনি ওই সব নিষেধাজ্ঞা ছাড়ের সুবিধা স্থগিত করেন, যেগুলো ইরানকে আর্থিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছিল। এর মধ্যে ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্প–সংক্রান্ত ছাড়ও ছিল।
এই বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে ইরানের মাধ্যমে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চাবাহার বন্দর প্রকল্পে কাজ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞা ছাড়ও আদায় করেছিল ভারত।
এখন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নে নয়াদিল্লির কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
কিন্তু ইরানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের আগ্রহ শুধু চাবাহার বন্দর প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
কবির তানেজা বলেন, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার মতো অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রভাব বিস্তারের দিক থেকে ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প১৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র হ ই সহয গ ত আফগ ন স ত ন র ইসর য় ল পর স থ ত ক টন ত ক র জন ত ক নয় দ ল ল অবস থ ন ত হয় ছ র প রক প রস ত র জন য য় ইসর এসস ও সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ছুটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর লম্বা মিছিল
তিন দিন পর অবশেষে শুক্রবার ১৩ জুন দুই বোনের লাশ মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীতে ভেসে ওঠে। রাইসা ও জান্নাত মামাতো-ফুফাতো বোন। তারা আর হাসবে না। বই–খাতা, স্কুলড্রেস সব আছে, শুধু তারা তারা হয়ে গেছে দূর আকাশে। ১৩ বছরের জান্নাত ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ গিয়েছিল ঈদের ছুটিতে। তার এক বছরের ছোট মামাতো বোন রাইসার সঙ্গে খুব খাতির। ঈদ উপলক্ষে একসঙ্গে হাতে মেহেদিও দিয়েছিল দুজন। নানার বাড়ির কাছেই গজারিয়া নদী। সেখানে তারা বুধবার ১১ জুন যায় গোসল করতে। বলা হচ্ছে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে তারা নিখোঁজ হয়। ঈদের ছুটির আগে-পরে (৫ জুন-১৪ জুন) এ রকম প্রায় ৬৬টি ঘটনায় ৭৮ জন ডুবে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মর্মান্তিক সব মৃত্যুর খবর এখনো আসছে।
যেকোনো বড় ছুটিতে ‘বাড়ির’ জন্য রওনা দিলেই সবাই পৌঁছাতে পারে না, আবার পৌঁছালেও সবার আর ফেরা হয় না কর্মস্থলে, স্কুলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলার মাঠে বন্ধুদের কাছে। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানি ঘটে। শিশুরা এ সময় বেশি মারা যায় পানিতে ডুবে। এবার সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে পানিতে ডুবে মৃত্যুর মিছিল। গণমাধ্যমের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত উল্লিখিত ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় হাসপাতাল আর পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
৭৮টি মৃতদেহের মধ্যে মাত্র ১২টি হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের। বাকি ৬৬ জনই শিশু–কিশোর। এদের বয়স ১০ মাস থেকে ১৭ বছর। ৬৬ জনের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ৫ বছরের নিচে। বাংলাদেশে এখন ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) হচ্ছে পানিতে ডুবে মৃত্যু।
ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুসারে, দেশটিতে প্রতিবছর ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ ডুবে মারা যায়। এটি সে দেশের মোট দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর প্রায় ৯ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছর ইউনিসেফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ হাজারের বেশি শিশু ডুবে মারা যায়। অর্থাৎ দিনে মারা যায় প্রায় ৪০ জন।
এটা জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে বাংলাদেশে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা ভারতের চেয়ে বেশি।
বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি) বাংলাদেশের ডিরেক্টর ড. আমিনুর রহমান মনে করেন, সবাই বলে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় বেশি শিশু মারা যায়। আসলে বেশি শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে।
টিকা দিয়ে বা সময়মতো চিকিৎসায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের অকালমৃত্যু ঠেকানো গেলেও ‘লাভের গুড় পিঁপড়ে’ মানে পানিতে খেয়ে যাচ্ছে। শিশুরা ডুবে মারা যাচ্ছে পানির বালতিতে, ডোবায়, পুকুরে, খালে, নদীতে।
একে অপরকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুরাইসা আর জান্নাতের মতো কমপক্ষে ১৬ জন মারা গেছে, যারা একে অপরের বোন বা ভাই। মেহেন্দিগঞ্জে রাইসা ও জান্নাতের ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানা না গেলেও ফরিদপুরের সালথায় তানহা নিজের ভাই তালহাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিল। তখন তানহা নিজেও পানিতে ডুবে যায়। যে কজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডুবে মারা গেছেন, তাঁদের অনেকেই প্রিয়জনদের বাঁচাতে গিয়ে মারা গেছেন। যাঁরা সাঁতার জানেন, তাঁদের বিশ্বাস, তাঁরা ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করতে পারবেন। আসলে ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধারের কৌশল জানা না থাকলে শুধু সাঁতারের জ্ঞান দিয়ে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রাণঘাতী প্রচেষ্টার নামান্তরমাত্র। একইভাবে আমি সাঁতার জানি বলেই আরেকজনকে সাঁতার শেখাতে পারব, এমন ভাবনার কোনো মানে নেই। সব খেলোয়াড় যেমন কোচ হতে পারেন না, তেমনি সব সাঁতারুই সাঁতারের প্রশিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত নন। এবার যে চারজন অভিভাবক ডুবে মারা গেছেন, তাঁরা সবাই সাঁতার শেখাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। সাঁতার শেখানো কোনো তামাশা বা ফান নয়। এটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে।
এত মৃত্যুর কারণ কীএই প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর পেতে হলে আমাদের ধারাবাহিক গবেষণা দরকার।
যেসব কারণ কথিত বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করে থাকেন, তা নিতান্তই অনুমাননির্ভর। গত শুক্রবার (১৩ জুন) দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় তিন শিশু (রাফা (২), তাসিব (২) ও তুহিন (৫) ডুবে মারা গেলে সংবাদকর্মীরা স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুমাননির্ভর ধারণা থেকে জানান, শিশুর মৃত্যুর জন্য মূলত অভিভাবকেরাই অনেকটা দায়ী। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হওয়ায় অভিভাবকেরা শিশুদের প্রতি তেমন নজর দিতে পারেন না। এ ছাড়া প্রতিটি ঘরের পাশেই পুকুর বা ডোবা রয়েছে। শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের নজরদারির অভাবে প্রায় পুকুরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
এবারের মৃত্যুতালিকা দেখলে জানা যাবে অনেকেই তাঁদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন। কাজেই ছেলেমেয়ে বেশি, তাই নজরদারি নেই, এমন সরলীকরণ করা ঠিক হবে না। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত হওয়া উচিত। ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত। ওয়ারিশজনিত জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে খুনখারাবি, শিশুহত্যা এ দেশে নতুন কিছু নয়। বড় ছুটির সুযোগ কেউ নিচ্ছে না তো?
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর নানা কারণ আমাদের প্রকল্পনির্ভর গবেষকেরা খুঁজে বের করেছেন। মা ও অভিভাবকদের গাফিলতি আর সাঁতার না জানাকেই মূল কারণ হিসেবে শনাক্ত করে ব্যবস্থাপত্র জারি হয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে গ্রামে গ্রামে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা, ছয় বছর বা তার চেয়ে বড় শিশুদের জন্য সাঁতার শিক্ষার ব্যবস্থার কথাও বলা হচ্ছে। দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলো কি বড় ছুটিতে খোলা থাকবে? ছুটিতে যখন গ্রামে শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাবে তখন কি তাদের দিবাযত্ন কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে? এসব প্রশ্নের কেউ জবাব দেওয়ার নেই।
গত কয়েক বছরের পানিতে ডোবার ঘটনাগুলো একটু খতিয়ে দেখলে অন্য একটা কারণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুঃখজনকভাবে সেই কারণটি আমাদের নজর এড়িয়ে গেছে। বেসরকারি সংস্থা দুর্যোগ ফোরাম জানাচ্ছে, হঠাৎ খিঁচুনি দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝোঁক আছে, এমন শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা একেবারেই কম নয়। খিঁচুনির নানা ধরন থাকলেও আমাদের দেশে সাধারণভাবে এটা মৃগীরোগ নামে পরিচিত। বেসরকারি সংস্থা দুর্যোগ ফোরাম ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত ২২ জনের বিস্তারিত খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখে এদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজনের খিঁচুনি বা মৃগীরোগের প্রভাব ছিল।
গত মে মাসে বড় জোয়ারের সময় মহেশখালীতে যে তিনজন (জামাল মিয়া, দানু মিয়া, ঝুমু) পানিতে ডুবে মারা যান, তাঁদের প্রত্যেকের মৃগীরোগের প্রভাব ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির বিখ্যাত নিউরোলজিস্ট ড. লে সানডার এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত যে মৃগীরোগের উপসর্গ থাকলে শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। ২০১৪ সালে তিনি ও তাঁর দল ৮৮টি পানিতে ডোবার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, পাঁচজন ছাড়া বাকি সবাই মৃগী বা মৃগীরোগ-সংক্রান্ত কোনো না কোনো জটিলতায় ভুগছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন পত্রিকা মেডপেজ টুডে লে সানডার–এর গবেষণার সূত্র ধরে জানিয়েছে, অন্যদের চেয়ে মৃগীরোগীদের পানিতে ডোবার আশঙ্কা ২০ গুণ বেশি। আবার বিশেষ ধরনের মৃগীরোগীর ক্ষেত্রে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ গুণ।
মৃগীরোগীর সংখ্যা কম নয়বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মৃগীরোগের উপসর্গ নিয়ে অনেক শিশু আমাদের পরিবারে, পাড়ায়, সমাজে অবহেলায় বেঁচে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কম বয়সের শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ—সবাই মৃগীরোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আগ্রহে এবং আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত একটি জরিপ চালানো হয়। এটাই ছিল মৃগীরোগীর সংখ্যা নিরূপণের প্রথম জরিপ। কাকতালীয়ভাবে এই জরিপের ফলাফলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মৃগীরোগীর তথ্য হুবহু মিলে যায়। শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশেও প্রতি হাজারে ৯ জন মৃগীরোগী আছে বলে এই জরিপে জানা যায়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে মোট মৃগীরোগীর সংখ্যা কমপক্ষে ২০ লাখের মতো। বলে রাখা ভালো, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মৃগীরোগীর গড় সংখ্যার ব্যাপক তারতম্য আছে।
শিশুর মধ্যে কী কী আলামত দেখলে প্রাথমিকভাবে মৃগীরোগের সন্দেহ করা করা যায়:
এক. হঠাৎ করে কোনো শিশু চোখ-মুখ উল্টিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে আর তার সঙ্গে সারা শরীরে ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি শুরু হলে।
দুই. কোনো শিশু যদি চোখের পলক না ফেলে হঠাৎ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে বা অন্যমনস্ক হয়ে গেলে। অনেক ক্ষেত্রে হাতে কিছু থাকলে হঠাৎ করেই পড়ে যায়। (অভিভাবকেরা অনেক সময় ভাবেন, এটা শিশুর কাব্যিক ভাব। সন্তান তার কবি হয়ে উঠছে।)
তিন. আপাতদৃষ্টে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ এক শিশু যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ব্যবহার শুরু করে। মুখভঙ্গির পরিবর্তনসহ অস্বাভাবিক হাঁটাচলা করে। আবোলতাবোল কথা বলতে শুরু করে। আবার কয়েক মিনিট পর আগের মতো সুস্থ হয়ে যায়।
চার. পানি বা আগুনের কাছে গেলেই হঠাৎ খিঁচুনি ওঠে।
পাঁচ. শিশু চোখেমুখে অন্ধকার দেখার কথা বলে। চোখে আলোর ঝিলিক দেখে, তারপর আর কিছু বলতে পারে না।
এসবের কোনোটাই আমাদের উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। মনে রাখতে হবে, মৃগী কোনো অভিশাপ নয় বা দৈব কোনো রোগ নয়। মৃগীরোগ মস্তিষ্কের একটি অসুখ, যা মাথায় কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের তারতম্যের কারণে হয়। কোলের শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের শিশু এমনকি বয়স্ক মানুষেরও এটা হতে পারে।
পানিতে নামতে না দেওয়া ছাড়াও এ ধরনের শিশুদের গাছে চড়তে দেওয়া ঠিক নয়। যেসব শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছে, তাদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সময় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর স্রোত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কিনিয়ত ঠিক থাকলে অবশ্যই সম্ভব। ২০১৯ সালে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। ৮৮ শতাংশের বেশি কমিয়ে আনা কোনো কঠিন কাজ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে তিনটি কৌশল সবচেয়ে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশুযত্নের সুযোগ সৃষ্টি করা। পানিতে সুরক্ষা ও নিরাপদ উদ্ধারের ওপর জোর দিয়ে ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শেখার সুযোগ বৃদ্ধি করা। শিশুদের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং তা হ্রাস করার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ ও মা-বাবাদের সচেতনতা বাড়ানো।
গ্রামে আগে শিশুদের কোমরে পিতলের একটা ছোট্ট ঘণ্টি বেঁধে দেওয়া হতো। এটা কোনো অলংকার ছিল না। কর্মব্যস্ত মায়ের কান থাকত সেই ঘণ্টির দিকে। সচেতন অভিভাবকেরা বাড়ির আশপাশের পুকুরে বাঁশের বা টিনের ঘেরা দিতে পারেন। এতে একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, যেটা পেরিয়ে শিশু পুকুরে যেতে পারবে না।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ২০২২ সালে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ শিশুকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে শিশুযত্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনা, ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের জন্য ১ হাজার ৬০০টি ভেন্যুতে সাঁতার প্রশিক্ষণ সুবিধার ব্যবস্থা এবং সুইমসেফ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানোর কথা। দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলাকে এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন প্রয়োজন এসব প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে স্থানীয় অভিভাবক ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে তাদের নেতৃত্বে একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
লেখক গবেষক: [email protected]