সন্তানকে কোচিংয়ে পৌঁছে দিতে বের হয়েছেন খুলনা শহরের বড় বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন আলী। তাদের রিকশাটি পিটিআই মোড়ে এসে থমকে গেছে। ওপাশে আহসান আহমেদ সড়ক তলিয়ে রয়েছে হাঁটুপানিতে। ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ভয়ে ওই সড়কে যেতে চাইছেন না রিকশাচালক। বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করে সন্তান নিয়ে বাসায় ফিরে গেলেন হোসেন আলী।
অপেক্ষারত অবস্থায় হোসেন আলী বলছিলেন, ১৯৯০ সালে সেন্ট জোসেফস স্কুলে পড়ার সময় বৃষ্টি হলেই আহসান আহমেদ সড়ক পানিতে তলিয়ে যেত। তারা কোমরপানি মাড়িয়ে বই-খাতা ভিজিয়ে বাড়িতে ফিরতেন। তিন দশক পর একই স্কুলে তাঁর ছেলে পড়ছে। এখনও বৃষ্টি হলে সড়কটি ডুবে যায়। তাহলে এই ৩০/৩৫ বছর ধরে কী উন্নয়ন হলো?
গতকাল মঙ্গলবার সকালে যারা খুলনা শহরে বের হয়েছেন, সবার মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ, সঙ্গে সেই একই প্রশ্ন। মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে সকাল থেকেই নগরীর অধিকাংশ সড়ক ছিল পানির নিচে। লবণচরা, বান্দাবাজার, টুটপাড়া এলাকার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িও পানিতে ডুবে যায়। ভোগান্তির শেষ ছিল না মানুষের।
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) গিয়ে জানা গেল, ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পের কাজ চলছে গত ৭ বছর ধরে। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন হওয়ায় প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত ৭ বছরে এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৮টি ড্রেন পুনর্নির্মাণ করেছে কেসিসি। খনন করা হয়েছে ময়ূর নদীসহ ১০ খাল। গত মে পর্যন্ত এসব খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৩৪ কোটি টাকা। 
খুলনা আবহাওয়া অফিসের উপসহকারী আবহাওয়াবিদ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৬ মিলিমিটার। এতে নগরীর ছোট-বড়, মাঝারি প্রায় সব সড়কই পানিতে তলিয়ে গেছে।
নগরীর তালতলা মোড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী। রয়েল মোড় তখন হাঁটুপানির নিচে। গাড়ি চলার কারণে তৈরি হওয়া ঢেউয়ে তাদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস। পাশে দাঁড়ানো সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমরাও ছোটবেলা থেকে দেখছি বৃষ্টি হলে রয়েল মোড়ে পানিতে ডুবে যায়। জলাবদ্ধতা দূর করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কী লাভ হচ্ছে?’
এ বিষয়ে কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, রয়েল মোড়, আহসান আহমেদ সড়কের পানি যে ড্রেন দিয়ে রূপসা নদীতে যায় সেই দুটি ড্রেনের কাজ চলছে। দুটি ড্রেনের কাজ শেষ হলে এই দুটি পয়েন্টে আর পানি আটকে থাকবে না। 
কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, নগরীর বড় বড় কয়েকটি ড্রেনের কাজ চলছে। বাঁধ দিয়ে ড্রেনের কাজ করায় পানি নামতে পারেনি। কেসিসির কর্মীরা বাঁধ কেটে দেওয়ার পর পানি নেমে গেছে। এছাড়া নির্মাণকাজের জন্য লবণচরা, মতিয়াখালীসহ বেশকিছু স্লুইস গেট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পানি নামতে দেরি হয়েছে।
তবে শুধু ড্রেন নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান। তিনি বলেন, বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম। তদারকির অভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ দিনে হিলি বন্দরে ১ লাখ মেট্রিকটন চাল আমদানি

গত ৩৫ দিনে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দুই হাজার ২৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে এক লাখ চার হাজার ৮৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের চালের বাজারে। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি চালের দাম কমেছে প্রকার ভেদে ৪ থেকে ৬ টাকা।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় হিলি বন্দর ঘুরে জানা যায়, দেশের অস্থির চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ২ শতাংশ শুল্কে ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। 

প্রতি টন চাল ৫২০ থেকে ৫৩০ ডলার, কিছু ক্ষেত্রে ৫৪০ ডলার মূল্যে আমদানি হচ্ছে। এসময় সবচেয়ে বেশি আসছে শম্পা কাটারি জাতের চাল।

হিলির খুচরা ব্যবসায়ী স্বপন পাল বলেন, “ভারত থেকে চাল আসায় বাজারের অস্থিরতা কমছে। প্রতিটি জাতের চাল কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা করে কমেছে। ৫৫ টাকা কেজি দরের মোটা চাল বিক্রি করছি ৫১ থেকে ৫২ টাকা, আবার ৭৪ টাকার শম্পা কাটারি চাল খুচরা বিক্রি করছি ৬৮ কেজি হিসেবে। আশা করছি আগামীতে আরো কমবে।”

আমদানিকারক নুর ইসলাম বলেন, “২ শতাংশ শুল্কে আমরা চাল আনছি। ৫২০-৫৪০ ডলার দরে আমদানি হচ্ছে। এতে বাজারে দামের প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়ছে।”

হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, গত ১২ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ৩৫ দিনে ভারত থেকে ২৪২১টি ট্রাকে এক লাখ চার হাজার ৮৫৯ মেট্রিকটন চাল এসেছে। দেশের বাজারে চালের চাহিদা থাকায় দ্রুত খালাস প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হচ্ছে।

ঢাকা/মোসলেম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ