মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই খুলনায় অনেক সড়ক পানির নিচে
Published: 17th, June 2025 GMT
সন্তানকে কোচিংয়ে পৌঁছে দিতে বের হয়েছেন খুলনা শহরের বড় বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন আলী। তাদের রিকশাটি পিটিআই মোড়ে এসে থমকে গেছে। ওপাশে আহসান আহমেদ সড়ক তলিয়ে রয়েছে হাঁটুপানিতে। ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ভয়ে ওই সড়কে যেতে চাইছেন না রিকশাচালক। বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করে সন্তান নিয়ে বাসায় ফিরে গেলেন হোসেন আলী।
অপেক্ষারত অবস্থায় হোসেন আলী বলছিলেন, ১৯৯০ সালে সেন্ট জোসেফস স্কুলে পড়ার সময় বৃষ্টি হলেই আহসান আহমেদ সড়ক পানিতে তলিয়ে যেত। তারা কোমরপানি মাড়িয়ে বই-খাতা ভিজিয়ে বাড়িতে ফিরতেন। তিন দশক পর একই স্কুলে তাঁর ছেলে পড়ছে। এখনও বৃষ্টি হলে সড়কটি ডুবে যায়। তাহলে এই ৩০/৩৫ বছর ধরে কী উন্নয়ন হলো?
গতকাল মঙ্গলবার সকালে যারা খুলনা শহরে বের হয়েছেন, সবার মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ, সঙ্গে সেই একই প্রশ্ন। মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে সকাল থেকেই নগরীর অধিকাংশ সড়ক ছিল পানির নিচে। লবণচরা, বান্দাবাজার, টুটপাড়া এলাকার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িও পানিতে ডুবে যায়। ভোগান্তির শেষ ছিল না মানুষের।
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) গিয়ে জানা গেল, ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পের কাজ চলছে গত ৭ বছর ধরে। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন হওয়ায় প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত ৭ বছরে এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৮টি ড্রেন পুনর্নির্মাণ করেছে কেসিসি। খনন করা হয়েছে ময়ূর নদীসহ ১০ খাল। গত মে পর্যন্ত এসব খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৩৪ কোটি টাকা।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের উপসহকারী আবহাওয়াবিদ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৬ মিলিমিটার। এতে নগরীর ছোট-বড়, মাঝারি প্রায় সব সড়কই পানিতে তলিয়ে গেছে।
নগরীর তালতলা মোড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী। রয়েল মোড় তখন হাঁটুপানির নিচে। গাড়ি চলার কারণে তৈরি হওয়া ঢেউয়ে তাদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস। পাশে দাঁড়ানো সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমরাও ছোটবেলা থেকে দেখছি বৃষ্টি হলে রয়েল মোড়ে পানিতে ডুবে যায়। জলাবদ্ধতা দূর করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কী লাভ হচ্ছে?’
এ বিষয়ে কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, রয়েল মোড়, আহসান আহমেদ সড়কের পানি যে ড্রেন দিয়ে রূপসা নদীতে যায় সেই দুটি ড্রেনের কাজ চলছে। দুটি ড্রেনের কাজ শেষ হলে এই দুটি পয়েন্টে আর পানি আটকে থাকবে না।
কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, নগরীর বড় বড় কয়েকটি ড্রেনের কাজ চলছে। বাঁধ দিয়ে ড্রেনের কাজ করায় পানি নামতে পারেনি। কেসিসির কর্মীরা বাঁধ কেটে দেওয়ার পর পানি নেমে গেছে। এছাড়া নির্মাণকাজের জন্য লবণচরা, মতিয়াখালীসহ বেশকিছু স্লুইস গেট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পানি নামতে দেরি হয়েছে।
তবে শুধু ড্রেন নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান। তিনি বলেন, বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম। তদারকির অভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ওভালে ১৬ উইকেটের দিন
টেস্ট ক্রিকেট ভিন্ন রকম একটি দিনের দেখা পেল। ব্যাট-বলের সমানে-সমান লড়াই হলো। ওভালে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে চরম রোমাঞ্চও ছড়াল। কিন্তু দিন শেষে কে এগিয়ে সেটা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
দলগতভাবে কে এগিয়ে সেটা পরিস্কার না হলেও নিশ্চিতভাবে বোলাররা আপারফ্রন্টে। কেননা ২২ গজে তাদের পকেটে গেছে ১৬ উইকেট। আগের দিনের ৬ উইকেটে ২০৪ রানের সঙ্গে মাত্র ২০ রান যোগ করতে শেষ ৪ উইকেট হারায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ডের ১২ ওভারেই রান বিনা উইকেটে ৯২। অথচ তারাই কি না পরের ১৫৫ রান তুলতে হারায় ১০ উইকেট। ২৪৭ রানে অলআউট হয়ে লিড পায় ২৩ রানের। পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত ২ উইকেটে ৭৫ রান তুলে দিন শেষ করেছে। তাদের লিড ৫২ রানের।
ভারতের প্রথম ইনিংসের রান কতদূর যাবে তা নির্ভর করছিল করুন নায়ারের ওপর। আগের দিন ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। গতকাল দিনের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ৫৭ রান করে। ভালো করতে পারেনি ওয়াসিংটন সুন্দর। ২৬ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। বাকিরা তেমন কিছু করতে পারেনি। ভারতের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেছে অতিরিক্ত রান। ইংল্যান্ডের বোলাররা ৩৮ রান দিয়েছেন অতিরিক্ত। যেখানে ওয়াইড বলই ছিল ১৬টি। নো বল ৪টি।
পেসার গুস আটিকসন ৩৩ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। আরেক পেসার টং পেয়েছেন ৩ উইকেট।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ছিল উড়ন্ত। দুুই ওপেনার জ্যাক ক্রয়লে ও বেন ডাকেট সামনে যাকে পেয়েছেন তাকেই পিটিয়েছেন। বাউন্ডারির ফোয়ারা ছুটিয়েছেন ২২ গজে। বেন ডাকেট ৪৩ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। আরেক ওপেনার ক্রয়লে অবশ্য ফিফটি তুলে নেন। ৫৭ বলে ১৪ চারে ৬৪ রান করে আউট হন।
ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরান পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। ওলি পোপে (২২), জো রুট (২৯) ও হ্যারি ব্রুককে (৫৩) আউট করেন এ পেসার। তাকে সঙ্গ দেওয়া প্রসিদ্ধ কৃষ্ঞা নেন ৪ উইকেট। দুই পেসারের ভয়ংকর আক্রমণে ইংল্যান্ড ভালো অবস্থানে থেকেও বড় কিছু করতে পারেনি।
দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত রাহুল (৭) ও সুদর্শনের (১১) উইকেট হারায়। ফিফটি তোলা জয়সওয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। একটি টেস্ট ড্র হয়েছে। এই ম্যাচ ভারত জিতলে সিরিজ বাঁচাতে পারবে। ইংল্যান্ড জিতলে নিশ্চিত করবে সিরিজ। তৃতীয় দিন শেষে বোঝা যেতে পারে কারা শেষ হাসি হাসবে।
ঢাকা/ইয়াসিন