ভোলার চরফ্যাসনে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি থামছেই না। দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লাখো মানুষ। দিনে-রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তির পাশাপাশি বরফকলসহ কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে মৎস্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাসপাতালে রোগীর কষ্ট বেড়েছে।
ভোলার চরফ্যাসনে দিন রাত মিলিয়ে দু-তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ মিলছে না। লাগামহীন বিদুৎ বিভ্রাটের কারণে ৩৫টি বরফকলের মধ্যে ২০টি বন্ধ হয়েছে। বাকি ১৫টি সীমিত পরিসরে চলছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন বরফকলসহ ছোট-বড় কারখানার কয়েকশ শ্রমিক। বরফ উৎপাদন না থাকায় উপকূলের মাছঘাটগুলোতে পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। চলতি মৌসুমে বরফকল, আড়ত ও ট্রলার মালিক ছাড়াও এ পেশায় সংশ্লিষ্টদের প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। একই কারণে দুটি অটো রাইস মিলসহ ছোট-বড় অর্ধশত কারখানাও বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিকস সামগ্রী অকেজো হয়ে পড়ছে। পৌরসভাসহ উপজেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদুৎ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে আছে।
সামরাজ আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাছ সংরক্ষণ নিয়ে বিপদে পড়েছেন তারা। বরফ সংকটের কারণে মাছ মোকামে চালান করতে সমস্যা হচ্ছে। আড়তেই পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। গত কয়েক দিন দুই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।
বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, ৫৮ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরফ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন বরফকল সচল হলেও দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এরই মধ্যে ২০টি বরফকল বন্ধ হয়ে গেছে।
একই অভিযোগ ট্রলার মালিক ছালাউদ্দিনের। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ উৎপাদন বন্ধ। ট্রলারে মাছ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বরফ না থাকায় সাগরে যেতে পারছে না জেলেরা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক জেলে। আর ভরা মৌসুমে লোকসানের মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরা।
অটো রাইস মিল মালিক কামাল গোলদার জানান, লাগামহীন লোডশেডিংয়ে অনেক রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, চরফ্যাসন সাব-স্টেশনের ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) টানাপোড়েন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শীত মৌসুমের আগে চলমান এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, কোরবানি ঈদের আগে থেকেই ভোলার ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টালের দুটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি বিকল। বোরহানউদ্দিন উপজেলার রেন্টালের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। তাই ভোলায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। সচল ১৪ মেগাওয়াট ট্রান্সফরমার দিয়ে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় রাখার চেষ্টা চলছে। একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে ৩৩ কেভি ফিডার লাইনের মাধ্যমে সীমিত আকারে ছয় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
ওজোপাডিকোর চরফ্যাসন আবাসিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের ৩৩ কেভি রেন্টালের দুটি ট্রান্সফরমার একটি বিকল। এ কারণে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। দিনে-রাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) জিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের দুটি রেন্টাল প্লান্টের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। দ্রুত সেটি সংস্কারে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ ট র ন সফরম র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।