ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে কাতারের ‘কূটনৈতিক বিজয়’
Published: 24th, June 2025 GMT
তেহরান থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক আলী হাশেম লিখেছেন, এটা স্পষ্ট যে গত রাতে (২৩ জুন) কাতারের আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে ইরান আগেই কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিল।
ইরান জোর দিয়ে বলছে, কাতারের সঙ্গে তাদের ভ্রাতৃসুলভ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং এই হামলা কাতার রাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে ছিল না।
তবু কাতারের দৃষ্টিতে এটি তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত; এ কারণেই দোহার পক্ষ থেকে যে নিন্দা জানানো হয়েছে এবং তা যৌক্তিক।
আরো পড়ুন:
ন্যাটোর হেগ সম্মেলন: থাকছেন কারা? আলোচ্যসূচিতে প্রধান্য কীসে কীসে
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ইরান
আলী হাশেম লিখেছেন, কাতার এই সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিরসনে সাহায্য করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আল উদেইদে হামলা সত্ত্বেও কাতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছে।
এটি অবশ্যই কাতারের জন্য আরেকটি কূটনৈতিক বিজয়।
অবশ্য আল উদেইদে ইরানের হামলার জন্য আবার নিন্দা জানিয়েছেন কাতারেন প্রধানমন্ত্রী।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই নিন্দা জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সফররত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম।
শেখ মোহাম্মদ সোমবার রাতে (২৩ জুন) কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “কাতার রাষ্ট্রের ওপর হামলা একটি অগ্রহণযোগ্য কাজ, বিশেষ করে যখন কাতার পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরো জানান, দোহা এই হামলায় ‘আচমকা বিস্মিত’ হয়েছে। কারণ ইরানকে তারা প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ দেশ হিসেবে দেখে।
শেখ মোহাম্মদ কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, “তারা হামলা প্রতিহত করেছে। ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, তার সবকটি প্রতিরোধ করা হয়েছে, শুধু একটি ব্যতীত।”
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। সিইসির তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জোয়াল ভেঙে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার যে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই হবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেন। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। নির্বাচনের যে রোডম্যাপ তিনি ঘোষণা করেছেন, সে অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, বাছাই, আপিল নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে আগামী ২১ জানুয়ারি। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, আইনবিধি সংস্কার, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ ও বড় কাজগুলো শেষ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত কেনাকাটা, পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন শেষ করেছে। বর্তমানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশে বড় রদবদল হয়েছে। সব মিলিয়ে তফসিল–পূর্ব ইসির প্রস্তুতিকে সন্তোষজনকই বলা যায়। তবে আমাদের নির্বাচনী ইতিহাস বলে, তফসিল ঘোষণার পরই মূল চ্যালেঞ্জটা দেখা যায়। এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পুলিশ এখনো পুরোপুরি আগের সক্রিয়তায় ফিরতে পারেনি। যদিও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব কটি বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ সংখ্যা নিশ্চিত করেই বিপুল কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা কতটা সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন, তা অনেকখানি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিচক্ষণ ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর। ইতিমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও) সংশোধন আনা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আগের চেয়ে ক্ষমতায়িত হয়েছে। আমরা আশা করি, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগে সাহসী ও নিরপেক্ষ থাকবে।
জাতি আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালেও যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না। পরপর তিনটি জালিয়াতির নির্বাচন ও কর্তৃত্ববাদী শাসনে শেখ হাসিনা সরকারের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নেমেছিল। গত বছরের জুলাই ও আগস্টে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
অর্থনীতি, বিনিয়োগ, জাতীয় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সবকিছুর বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর। সশস্ত্র বাহিনীরও এ ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি।