তেহরান থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক আলী হাশেম লিখেছেন, এটা স্পষ্ট যে গত রাতে (২৩ জুন) কাতারের আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে ইরান আগেই কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিল।

ইরান জোর দিয়ে বলছে, কাতারের সঙ্গে তাদের ভ্রাতৃসুলভ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং এই হামলা কাতার রাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে ছিল না।

তবু কাতারের দৃষ্টিতে এটি তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত; এ কারণেই দোহার পক্ষ থেকে যে নিন্দা জানানো হয়েছে এবং তা যৌক্তিক।

আরো পড়ুন:

ন্যাটোর হেগ সম্মেলন: থাকছেন কারা? আলোচ্যসূচিতে প্রধান্য কীসে কীসে

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ইরান

আলী হাশেম লিখেছেন, কাতার এই সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিরসনে সাহায্য করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আল উদেইদে হামলা সত্ত্বেও কাতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছে।
এটি অবশ্যই কাতারের জন্য আরেকটি কূটনৈতিক বিজয়।

অবশ্য আল উদেইদে ইরানের হামলার জন্য আবার নিন্দা জানিয়েছেন কাতারেন প্রধানমন্ত্রী। 

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই নিন্দা জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সফররত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম।

শেখ মোহাম্মদ সোমবার রাতে (২৩ জুন) কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “কাতার রাষ্ট্রের ওপর হামলা একটি অগ্রহণযোগ্য কাজ, বিশেষ করে যখন কাতার পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি আরো জানান, দোহা এই হামলায় ‘আচমকা বিস্মিত’ হয়েছে। কারণ ইরানকে তারা প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ দেশ হিসেবে দেখে।

শেখ মোহাম্মদ কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, “তারা হামলা প্রতিহত করেছে। ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, তার সবকটি প্রতিরোধ করা হয়েছে, শুধু একটি ব্যতীত।”

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানদের দৃঢ়চেতা মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার উপায়

সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভদ্রলোক লিখেছেন, মহানবী (সা.)-এর জীবনী (সিরাত) থেকে একটি গল্প বলার পর তাঁর সন্তান হঠাৎ প্রশ্ন করছে, ‘বাবা, নবীজি কি চশমা পরতেন?’

যদিও এটি সরল বা হাস্যকর প্রশ্ন, কারণ চশমা তো অনেক পরে আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু প্রশ্নটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এতে বোঝা যায়, নবীজি (সা.) তার সন্তানদের কাছে ইতিহাসের কোনো বিমূর্ত চরিত্র নন, বরং একজন বাস্তব ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন। এটা তাদের অবিচল মুসলিম হিসেবে গড়ে ওঠার যাত্রায় একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত।

দৃঢ়তা কেন গুরুত্বপূর্ণ

আজকের বিশ্বে মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকাই একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইসলামের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ঐতিহ্যবাহী পুঁজিবাদ বা সমাজতন্ত্রের সঙ্গে মেলে না। ইসলামের সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে মুসলমানেরা নমনীয় হলেও অধীনতা থেকে দূরে থাকে।

সন্তানদের তাই বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন না রেখে তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা এমন বিশ্বে অবিচল মুসলিম হিসেবে টিকে থাকতে পারে।

সন্তানদের দৃঢ়চেতা মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলতে ৫টি পরামর্শ

সন্তানদের অটল ও অবিচল মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা মানে তাদের ইসলামী পরিচয়, ইতিহাসের প্রতি গর্ব, নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বাস্তব সংযোগ, উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতার পার্থক্য শেখানো।

আরও পড়ুনদুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে০১ আগস্ট ২০২৫

১. শেখানো যে তাদের প্রথম পরিচয় মুসলিম

প্রতিটি শিশুর একাধিক পরিচয় থাকে—জাতীয়তা বা জাতিগত পরিচয়, সংস্কৃতি। কিন্তু কোন পরিচয়টি প্রাথমিক এবং কেন্দ্রীয়, তা না বুঝলে শিশুরা বিভ্রান্তির সমুদ্রে ভেসে যাবে। অনেকে তাদের সন্তানদের জাতীয়তা বা জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু এটি জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ বা ফ্যাসিবাদের মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। যেমন, ‘আমেরিকান’ পরিচয় আজ এত বৈচিত্র্যময় যে এখন ‘আমেরিকান’ ধারণাটিই অস্পষ্ট হয়ে গেছে।

ইসলামকে প্রথম পরিচয় হিসেবে শেখানো হলে শিশু একটি শক্ত ভিত্তি পাবে। এটি তাদের বিশ্বকে একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সাহায্য করে। তবে এটি ‘একমাত্র’ পরিচয় নয়। একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারীর অভিজ্ঞতা একজন আরব মুসলিম পুরুষের থেকে ভিন্ন হবে এবং এই বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে হবে।

২. ইসলামী ইতিহাসের প্রতি গর্ববোধ জাগানো

আত্মবিশ্বাসী শিশুদের জন্য রোল মডেল ও নায়কের প্রয়োজন। আধুনিক মিডিয়া পশ্চিমা নায়কদের—যেমন ক্যাপ্টেন আমেরিকা বা এলন মাস্ক—দিয়ে শিশুদের মন ভরিয়ে দেয়। কিন্তু মুসলিম শিশুদের জন্য আমাদের নিজস্ব ইতিহাসের নায়কদের কথা বলতে হবে।

সালাহউদ্দিন আইয়ুবি, আল-বিরুনি, প্রাচীন বাগদাদের গল্প শিশুদের বলতে হবে, যাতে তারা তাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্বিত হয়। যদি আপনি নিজে ইসলামী ইতিহাস সম্পর্কে কম জানেন, তবে শিখুন। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে। এই গল্পগুলো শিশুদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়।

৩. নবীজি (সা.)-কে তাদের কাছে বাস্তব করে তোলা

মহানবী (সা.) জুলিয়াস সিজার বা আলেকজান্ডারের মতো ঐতিহাসিক চরিত্র নন, যাদের সম্পর্কে আমরা কথা বলি কিন্তু যারা আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে না। নবীজি (সা.)-কে শিশুদের কাছে এমন একজন পরিবারের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে, যিনি এখন আমাদের মাঝে নেই কিন্তু যাঁর কথা, কাজ ও সম্মান আমাদের জীবনের কেন্দ্রে থাকবে।

ঘুমানোর আগে সিরাতের গল্প, তাঁর জীবনের ঘটনা বা তাঁর শিক্ষার কথা শিশুদের সঙ্গে শেয়ার করা তাঁকে তাদের কাছে বাস্তব করে তোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫

৪. উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা শেখানো

সন্তানদের উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না। আমরা দেখি, মুসলিমরা বিশ্বজুড়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, শরণার্থীদের সাহায্য করতে অস্বীকার করে বা তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করে। মিশরের রাবা মসজিদে শিশুদের গুলি করা, রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়া বা লিবিয়ায় দাস শিবির চালানোর মতো ঘটনা আমাদের উম্মাহর প্রতি ভালোবাসার ঘাটতি দেখায়।

সন্তানদের শেখাতে হবে যেন তারা নিপীড়ক বা নিষ্ঠুর না হয়। তাদের ভালোবাসা শেখাতে হবে, ঘৃণা নয়। এই ভালোবাসা কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, পুরো মানবজাতির জন্য। তবে নিজেকে ভালোবাসা না শিখলে অন্যকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।

৫. সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতার পার্থক্য শেখানো

শিশুরা জীবনে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হবে। তারা কি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য মদ্যপানে সম্মতি দেবে? তারা কি নির্দিষ্ট পোশাক বা চুলের স্টাইল গ্রহণ করবে? তাদের বিশ্বাস লুকিয়ে রাখবে কি বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ে?

তাদের সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতার পার্থক্য শেখাতে হবে। অন্যের ভিন্ন বিশ্বাস বা জীবনধারাকে সম্মান করা মানে তা অনুসরণ করা নয়। নিজের বিশ্বাস ধরে রাখা সত্ত্বেও সামাজিকভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়। বরং, এই দৃঢ়তা প্রায়ই আরও বেশি সম্মান অর্জন করে। শিশুদের শেখাতে হবে যে তারা ভিন্নভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং এটি তাদের আরও শক্তিশালী করে।

জীবন তাদের উপর অনেক চ্যালেঞ্জ চাপিয়ে দেবে, কিন্তু আমরা তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে পারি যাতে তারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তিশালী হয়। যেমন বলা হয়, ‘যে হাত দোলনায় দোলে, সে বিশ্ব শাসন করে।’

সূত্র: মুসলিম ম্যাটার্স

আরও পড়ুনশিশু সুরক্ষায় ইসলামের শিক্ষা১০ নভেম্বর ২০১৬

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্রকে অপ্রাসঙ্গিক করা হয়েছে: সিপিবি
  • সন্তানদের দৃঢ়চেতা মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার উপায়
  • আমি নিজেকে অপমানিত হতে দিতে পারি না, ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে কথা প্রসঙ্গে লুলা
  • ব্রাজিলের কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর
  • স্বচ্ছতার দিক দিয়ে এই পুরস্কারই সেরা