নির্বাচনের আগেই শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যাসহ প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। অন্যথা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে ছাত্র-জনতা ক্ষমা করবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। হেফাজতে ইসলামের দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

বিবৃতিতে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামবিদ্বেষী, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী চেতনা সংরক্ষণ, রাষ্ট্র সংস্কারের গণ-আকাঙ্ক্ষা সুসংহতকরণ এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠন করতে অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই শাপলা চত্বরে আলেম ওলামা হত্যাকাণ্ড ও জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে ছাত্র-জনতা ক্ষমা করবে না।

শাপলা চত্বরের রক্তাক্ত ইতিহাসের পথ বেয়ে জাতীয় জীবনে জুলাই বিপ্লব হাজির হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে, এখনো বিছানায় পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করা হাজার হাজার আহত শাপলা ও জুলাই-যোদ্ধা কাতরাচ্ছে। অগণিত শহীদের রক্তের ফসল জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হলে গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার কাছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে জবাব দিতে হবে।

জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে ‘গাদ্দারি’ (বিশ্বাসঘাতকতা) করে জনসমর্থন ধরে রাখা যাবে না মন্তব্য করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই বিপ্লব চলমান প্রক্রিয়া। জুলাইকে বিস্মৃত হতে দেওয়া যাবে না। জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে গাদ্দারি করে জনসমর্থন ধরে রাখা যাবে না। এ দেশে যারাই ভারতীয় আধিপত্যবাদের গোলামি করবে, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবে, মাফিয়াতন্ত্র জারি রাখবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণপ্রতিরোধের চেতনা বারবার ফিরে আসবে। দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নামতে বিলম্ব করবে না। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ফেরাউন পারেনি; হাসিনাও পারেনি। ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীনদের এই ঐতিহাসিক শিক্ষা ধারণ করতে হবে।’

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম দাবি কাঠামোগত সংস্কার। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার জন্ম দেওয়া বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর বিলোপ ও পুনর্নির্মাণের মধ্যেই বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ পরিদৃষ্ট। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এনে দিয়েছে। গণহত্যার বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক কাজগুলো আরও বেগবান করতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের এই যুগ্ম মহাসচিব বিবৃতিতে আরও বলেন, ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থের চেয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় আত্মনিবেদিত হওয়ার মধ্যেই মাহাত্ম্য নিহিত। আর সংস্কারকাজে অবশ্যই ইসলামবিরোধী অপশক্তির ফাঁদ ও কুমন্ত্রণা এড়িয়ে যেতে হবে। সংবিধানের মূলনীতি থেকে বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারী কমিশন বাতিল করতে হবে‌। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম, সভ্যতা সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের আলোকে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত গণহত য আরও ব ন করত

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়াল

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১২৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৩৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত মোট ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬১ হাজার ৭২২ জনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ জনে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয়ের আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

আরো পড়ুন:

নেতানিয়াহু পথ হারিয়ে ফেলেছেন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

গাজায় গণহত্যার মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুক্তি মিশরের

মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৮৫ জনে আহত হয়েছেন। এতে করে গত ২৭ মে থেকে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো ১৩ হাজার ৫৯৪ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

এছাড়াও জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন শিশুসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে গাজায় মানবিক সংকট আরো গভীর হওয়ার সাথে সাথে দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ২৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৬ জন শিশুও রয়েছে।  

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

দীর্ঘ ১৫ মাস ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ২০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪২ হাজার ৪৮৪ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়াল