Samakal:
2025-11-02@06:25:37 GMT

বিশুদ্ধ জঙ্গলের ঠিকানা

Published: 3rd, July 2025 GMT

বিশুদ্ধ জঙ্গলের ঠিকানা

মহাপ্লাবনের পর অনেক সময় কেটে গেছে। নির্বাচিত মানুষ ও জীবজন্তু নিয়ে ভাসছে নূহের নৌকা। কমতে শুরু করেছে প্লাবনের জল। এ অবসরে পৃথিবীর কোনো ভূমি জেগে উঠেছে কিনা, তার তালাশে ঘুঘু পাখি উড়ালেন পয়গম্বর। পাখি যখন ফেরে না, বুঝতে পারেন সামনে কোথাও আছে ভূমি। প্লাবনের জলে উর্বর আদিম এক পৃথিবী। অপেক্ষায় আছে হয়তো, কীসের? মানুষের। যে এ অদেখা ভূমি প্রত্যক্ষ করবে, বর্ণনা করবে। অকর্ষিত ভূমি চাষ করবে।
‘যেখানে জঙ্গলের শুরু’ বইয়েও একটা পাখি উড়িয়ে দিয়েছেন কবি উপল বড়ুয়া। পাখির চোখ অনুসরণ করে তিনি দেখেন ‘জঙ্গলে যাওয়ার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি–/পাখিদের অনুসরণ করে এত দূর এসে দেখি/এখানে সব দালান, মানুষে ভরা।’ (হারানো জঙ্গলে)
জঙ্গলের হয়তো নিজস্ব ভুবন আছে। যদিও ভুবন কথাটাই এলেবেলে হতে পারে। বরং আমরা যদি কোনো বিশুদ্ধ জঙ্গল খুঁজি, সেটা কেমন? তার ঠিকানা কি জানা আছে? যাই হোক, নিশ্চয় তার কোনো স্মৃতি বিদ্যমান নাগরিক মন-মগজে। সেখানে যাপনের কিছু অভিজ্ঞতা আছে, যা কিনা বিশুদ্ধ জঙ্গলের কল্পনা জাগিয়ে তোলে। এই যে মানুষের জঙ্গল লাগে না। লাগে জঙ্গলের স্মৃতি! ‘বনের পাশে এক শুকনো শীর্ণ নদী/সেই নদীর পাড়ে খানিক বসে দেখি/কেমন শান্ত চারপাশ, হালকা শীতে/রোদ পোহাচ্ছে বক, জনশূন্যে ঘেরা একটু দূরে মরা পাতার স্তূপ, যেন/বহু আগের দৃশ্য তৈরি করে রাখা।’ (এখানে, বনে)
অথবা মদ-মাংসের আয়োজনে আদিম জঙ্গলের প্রতি আমাদের টান। যেমন ‘তাঁবু ফেলা হবে আজ; ঝলসানো হবে পাখির হৃদয়’। (রাবার বাগানের রাত্রি)
মানুষ যখন পোড়ে– জঙ্গলও পোড়ে, যদিও উপল বড়ুয়ার জঙ্গলমুখী হওয়া মূলত কৃত্রিম ও জটিল জগৎ থেকে দূরে সরে শান্তির অন্বেষণ। কিন্তু জঙ্গল পোড়া আগুনে বিদ্ধ হন তিনি। বেশ পরিহাসমূলক হলেও বেশ সহজ ও জুতসই ভাষায় সেই বর্ণনা আছে, ‘সারা দিন গেল এক পরিবেশবাদীর সঙ্গে/হাতি বাঁচানোর কথা বলতে বলতে আমরা/ঢুকে পড়লাম জঙ্গল রক্ষার দাবিতে। সন্ধ্যায় শিল্পকলায় টি স্টলে প্লাস্টিকের কাপে/চায়ে চুমুক দিয়ে আমি তাকালাম তার পায়ে/বললাম, আপনার জুতোটা বেশ সুন্দর তো!/মুচকি হাসিতে জবাব তার, পশমের তৈরি।’ (পরিবেশবাদীর সঙ্গে)
এই বইয়ে উপল বড়ুয়ার ভূমিকা স্বভাব কবির। যেভাবে আমরা বলি-ভাবি, তা কবিতা-গান হয়ে উঠে এসেছে। অন্তত এমনটা ভাবতে বাধ্য করে। শব্দ বাছাই ও এর অর্থ-অনর্থ থেকে বাস্তবিক জঙ্গলের অংশ হয়ে ওঠার বাসনায় নিয়ে গেছে। কিন্তু উপল নিজেকে ঠিকই আলাদা করে শনাক্ত করতে পেরেছেন। হয়তো ভাবালুতা ভর করবে, ঠিক তখনই শব্দরা পিঠ চাপড়ে জানিয়ে দেবে, আমরা কোথায় আছি। নগরে, ব্যস্ত জীবনে। জঙ্গল যাপন স্রেফ বিশ্রামই। যে জগৎ বড়ই বিপন্ন। যেখানে জঙ্গলের শুরু আছে, কিন্তু আমরা জানি বিশুদ্ধ জঙ্গলের ঠিকানা মানুষ জানে না। যদি জানত, তবে কি কবিতা লিখত! মানুষের ভাষায়! নাকি জঙ্গল যখন কবিতা হয়ে ওঠে তখন মানুষ আসলেই মূক-বধির। সে যখন অংশ হয়ে ওঠে সমগ্র নিয়ে আর কীই বা বলবে। v
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ