কাপ্তাই হ্রদের দ্বীপে ফলছে লাল রাম্বুটান
Published: 27th, July 2025 GMT
গাছে ঝুলছে লাল রঙের থোকা থোকা ফল। কাছে গেলেই মনে হবে যেন চুলওয়ালা লিচু। তবে ফলটির নাম রাম্বুটান। রাঙামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের মুবাছড়ি গ্রামে কাপ্তাই হ্রদের ছোট দ্বীপে বিদেশি এ ফলের চাষ করেছেন প্রবীণ চাকমা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। তাঁর চার একর আয়তনের বাগানে রয়েছে পাঁচ শতাধিক রাম্বুটানগাছ।
রাঙামাটি শহরের যেকোনো ঘাট থেকে নৌপথে ৩০ মিনিটেই যাওয়া যায় বাগানটিতে। সম্প্রতি রাঙামাটি সদর থেকে নৌপথে নানিয়ারচরের বন্দুকভাঙা এলাকায় পৌঁছে ডান দিকে মুবাছড়ি গ্রামে ঢুকতেই বাগানটি চোখে পড়ে। বাগানটির চারদিকে কাপ্তাই হ্রদ, অদূরে হ্রদের দুই পাড়ে স্থানীয় বাসিন্দারের বসতঘর।
বাগানে অর্ধেকের মতো গাছে ফল ধরেছে। এরপরও এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০০ কেজির মতো রাম্বুটান বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। আরও অনেক ফল বিক্রি করা যাবে।বিকেল চাকমা, বাগানের তত্ত্বাবধায়কবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা রাম্বুটান ঝুলছে। বাগানে কথা হয় বিকেল চাকমার সঙ্গে। তিনি বাগানটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। বিকেল চাকমা বলেন, বাগানে অর্ধেকের মতো গাছে ফল ধরেছে। এরপরও এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০০ কেজির মতো রাম্বুটান বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। আরও অনেক ফল বিক্রি করা যাবে।
বাগানমালিক প্রবীণ চাকমা চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন। মুঠোফোনে তিনি জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই প্রথম রাম্বুটান দেখেন। এরপর নিজের রাম্বুটানের বাগান করার শখ জাগে। পরে স্বজন ও কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০২১ সালে বাগান শুরু করেন। বাগানের জন্য ভারতের চেন্নাই থেকে ৫০০ চারা আনা হয়। প্রতিটি চারার দাম পড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
গাছ থেকে সংগ্রহ করা রাম্বুটান হাতে এক শ্রমিক। সম্প্রতি রাঙামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের মুবাছড়ি গ্রামে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব গ নট
এছাড়াও পড়ুন:
বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে
আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর বাংলাদেশে এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’। বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় পশু, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ‘টাইগার’ নামে পরিচিত, বাঘ সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোগো। তাই বাংলাদেশ এ দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। বাংলাদেশে বাঘ ২০১৫–এর গণনায় ১০৬টি, ২০১৮তে ১১৪টি এবং সর্বশেষ ২০২৪–এর গণনায় ১২৫টি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের বাঘ নানামুখী হুমকির সম্মুখীন। এরপরও বাঘের সংখ্যা যে ঊর্ধ্বমুখী, এটি আশার সঞ্চার করে। এ জন্য বন বিভাগ ও সুন্দরবনের স্থানীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
সুন্দরবন বর্তমানে বাংলাদেশের বাঘের শেষ আশ্রয়স্থল। হরিণ বাঘের প্রধান খাদ্য। বাঘ বিজ্ঞানীরা বলেন, বাঘ শিকারের চেয়ে হরিণ শিকার বাঘের টিকে থাকার জন্য বিপজ্জনক। কারণ, পর্যাপ্ত খাবার না পেলে বাঘ দুর্বল হয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হারাবে এবং বাঘ-মানুষ সংঘাত বাড়বে।
এ মাসের ১৭ তারিখে সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির সদস্যরা একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ১০ কেজি হরিণের মাংসসহ দুজনকে আটক করেন। ছবিতে দেখলাম বস্তার গায়ে ঢাকার প্রাপকের নাম, ফোন নম্বর ও গন্তব্যস্থলের নাম লেখা আছে। বন বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধ হবে না, যত দিন এর চাহিদা থাকবে অন্যত্র। অথচ সবাই মিলে বন বিভাগকেই দায়ী করবে, ভোক্তাকে নয়।
দেশে বর্তমানে অনেক হরিণের খামার হয়েছে। খামার করলে বনের হরিণের ওপর চাপ কমবে এটিই ছিল হরিণ লালন–পালনের পক্ষে মুখ্য যুক্তি। কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে দেশে আজও হরিণের খামার আছে এবং বাড়ছে জানি না। সেদিন এক বন্ধু বললেন, কিছু শৌখিন মানুষ চেয়েছেন, তাই এটি হয়েছে। তবে সুন্দরবন থেকে এনে জীবন্ত হরিণ কেউ খামারে রাখবেন, এ দুঃসাহস কারও হবে না। বন্ধুকে বলতে পারিনি যে ২০১২ সারে সুন্দরবনের তিনটি বাঘের বাচ্চা তো ঢাকায় পাচার হয়েছিল। বন বিভাগের ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের বন্ধুরা অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির ভাগ্যে কী ঘটছে নিশ্চয়ই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। ভারতে বন্য প্রাণীর খামার নিষিদ্ধ।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের চারপাশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ জানেন যে হরিণ শিকার এবং হরিণের মাংস ভক্ষণ আইনসম্মত নয়। এরপরও তাঁরা এ কাজটি করেন, যেহেতু হরিণের মাংস অনেক সময় অন্যান্য মাংসের চেয়ে সস্তায় পাওয়া যায়। কারণ, যিনি বিক্রি করেন, তাঁকে তো হরিণটি কিনতে হয়নি; অন্যান্য গবাদিপশু তো ক্রয় করে বিক্রয় করতে হয়। ভিয়েতনামে বন্য পশুপাখির মাংস দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা ছিল মর্যাদার প্রতীক। ফলে ভিয়েতনাম তার শেষ বাঘটিও হারিয়েছে ২০০০ সালের দিকে।
অনেকের ধারণা, সুন্দরবনের হরিণ ব্যাপকহারে বাড়ছে এবং গুটিকয় খেলেও ওরা হারিয়ে যাবে না। তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, উত্তর আমেরিকায় ঘুঘুর মতো দেখতে একটি কবুতর—প্যাসেঞ্জার পিজন, যার সংখ্যা ছিল ৩০০-৫০০ কোটি। এরা দল বেঁধে যখন উড়ে যেত, মনে হতো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। আবাসস্থল নষ্ট হওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত শিকারের কারণে মাত্র ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রজাতিটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল।
বাঘ সুন্দরবনের জন্য একটি কিস্টোন প্রজাতি। বাঘ টিকে থাকলে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রসহ জীববৈচিত্র্য নিজে থেকেই টিকে থাকবে, সুন্দরবন টিকে থাকবে। এলাকার জনগণ মনে করেন, ‘সুন্দরবন মায়ের মতো’—ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে, জীবন বাঁচায়, খাদ্য জোগায়। তাঁদের মতে, বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ডটিমের সহযোগিতায় সুন্দরবনের চারপাশের গ্রামগুলোতে ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী বাঘ সংরক্ষণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যরা, বাঘবন্ধুরা এবং টাইগার স্কাউটরা আমাদের সামাজিক মূলধন।
বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য আমাকে আশান্বিত করে। বাঘের সংখ্যা সুন্দরবনের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। সুন্দরবন ভালো থাকলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এটি আমাদের জাতীয় সুখ সূচকের ওপরও প্রভাব বিস্তার করবে। দেশের সামগ্রিক সুখ ও মঙ্গল পরিমাপের এ ধারণাটি এসেছে ভুটান থেকে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিকেও তাঁরা জাতীয় সুখ সূচকের প্রবৃদ্ধি হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশও সেই স্বপ্নের ‘সিল্ক রোডে’ এক পা ফেলল।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়