সূর্য পশ্চিমে সবে হেলে যেতে শুরু করেছে। তখনো চিকচিক করছে রৌদ্র কিরণ। তাপপ্রবাহের সঙ্গে অসহ্য ভ্যাপসা গরম। এসবের কোনো কিছুতেই ভ্রুক্ষেপ নেই খুদে নারী ফুটবলারদের। পরনে জার্সি, পায়ে ট্র্যাক স্যুট, পিঠে ব্যাগ, সাইকেলের প্যাডেল মাড়িয়ে একে একে মাঠে প্রবেশ করছে তারা।

কয়েকজনকে হেঁটেও আসতে দেখা গেল। বিকেল চারটার মধ্যে জড়ো হলো জনাতিরিশেক খুদে নারী ফুটবলার। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে সোজা মাঝমাঠে। এরই মধ্যে বাঁশিতে ফুঁ দিলেন কোচ। শুরু হলো ওয়ার্মআপ।

অনুশীলনের জন্য মাঠে ছোট ছোট রঙিন চাকতিসহ নির্দিষ্ট দূরত্বে নানান উপকরণ সাজানো। এসবের ফাঁকফোকর দিয়ে বল আদান-প্রদানসহ ৪০ মিনিটি নানা শারীরিক কসরত চলল। পরে দুটি ভাগে ভাগ হলো ২২ জন। বল গড়াল মাঠে।

ঠিক তখনই নামল বৃষ্টি। তাতে কি? তপ্ত রোদ যেখানে কাবু করতে পারেনি, সেখানে এমন বৃষ্টিতে মাঠ পিচ্ছিল হলেও বৃষ্টিটা যেন আশীর্বাদ হয়েই ধরা দিল খেলোয়াড়দের কাছে। আর ওদিকে কোচ তখন ‘বল ছাড়ো জারমিন, সোমাকে পাস করো লাবণী, সময় নিয়ো না, শট নাও, শট নাও, ম্যান দেখো, ম্যান ধরো, গুড’ নানাবিধ শব্দে উৎসাহ দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের।

অনুশীলন শেষে মাঠে নিজেদের মধ্যে দল ভাগ করে খেলছেন একাডেমির সদস্যরা। গত বুধবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীসংকৈল উপজেলায় রাঙাটুঙ্গী গ্রামে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ