ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেসরকারি খাতে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। নতুন প্রকল্পের উদ্যোগ কম, উল্টো চালু থাকা অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থানে খরা নেমে এসেছে। আর্থিক সংকটের কারণে এক–চতুর্থাংশ ব্যাংকঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোও ঋণ বিতরণের পরিবর্তে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগেই এখন বেশি মনোযোগী। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
গত জুনের শেষে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত ২২ বছরের যেসব তথ্য রয়েছে, তাতে এটিই সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বৃহস্পতিবার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই–ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানো ও বেসরকারি খাতকে চাঙা রাখাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এখন বেসরকারি খাতের দিতে একবারেই নজর দিচ্ছে না। ফলে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠানের ঋণও খারাপ হয়ে পড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে নজর দেওয়া উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের।
এখন ব্যবসায়ীরা কেউ বিনিয়োগ করবেন না। তবে যাঁদের ঋণ খারাপ হয়ে পড়েছে, তাঁদের নীতিসুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।—মুস্তাফা কে মুজেরী, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকগত বছরের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকের ব্যবসা সীমিত হয়ে পড়েছে বা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার পর্ষদে পরিবর্তন হওয়া ১৪টি ব্যাংকের কোনোটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ, আবার কোনোটি ঋণ সীমিত করেছে। কারণ, কমপক্ষে পাঁচটি ব্যাংক গ্রাহকের জমা টাকা তোলার চাহিদা মেটাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংক ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে। বাকিগুলোর একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও দুটি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক ও বস্ত্র খাতের কমপক্ষে ২০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণসুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। দেশের ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একাধিক কারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে। এস আলমের ছেলে আহসানুল আলমের ইনফিনিয়া গ্রুপ ও জামাতা বেলাল আহমাদের ইউনিটেক্স গ্রুপের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে এস আলম-সংশ্লিষ্ট ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপও তাদের একাধিক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
চট্টগ্রামে ৫ আগস্টের পর প্রথম ৭ মাসে ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই পোশাক, সুতা তৈরি ও জুতার কারখানা। মূলত অর্থায়ন সংকটের কারণে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১ হাজার ২০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ নিয়মিত করার জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীসহ আরও কিছু ব্যবসায়ীর ঋণ বিশেষ উদ্যোগে নিয়মিত করা হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা ১০০–এর মতো। এখনো ১ হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব ঋণ অবশ্য খেলাপি হয়ে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যেমন ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ বের করা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা এখনো সন্তুষ্ট নন। ব্যাংকঋণের সুদের হার ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ—দুটিই বেড়েছে। আর্থিক খাতে এখন সংস্কার চলছে, ফলে নতুন প্রকল্পে ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রতি মাসেই ঋণে প্রবৃদ্ধি কমছে। গত বছরের জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। এরপর গত ডিসেম্বরে তা ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে নামে। পরের মাস জানুয়ারিতে আরও কমে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়। ফেব্রুয়ারিতে নেমে যায় ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে। এরপর মে মাসে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ও জুনে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।
এখন মুদ্রানীতির লক্ষ্য কী হওয়া উচিত, জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি কমানো, সেদিকেই বেশি নজর দিচ্ছে সংস্থাটি। তবে বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে দেশের কোনোটাই ঠিক নেই। এই সরকার এক রকম ব্যর্থ সরকারে পরিণত হচ্ছে। এখন ব্যবসায়ীরা কেউ বিনিয়োগ করবেন না। তবে যাঁদের ঋণ খারাপ হয়ে পড়েছে, তাঁদের নীতিসুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র গত বছর র প রব দ ধ ব সরক র এস আলম ম ত কর আগস ট দশম ক এখন ব
এছাড়াও পড়ুন:
অজিতের পারিশ্রমিক ২৪১ কোটি টাকা!
ভারতের তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা অজিত কুমার। ভক্তদের কাছে তিনি থালা অজিত নামেই পরিচিত। গত ১০ এপ্রিল মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘গুড ব্যাড আগলি’ সিনেমা। মুক্তির পর বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলেছিল এটি। এরই মাঝে গুঞ্জন উড়ছে, পারিশ্রমিক বাড়াতে যাচ্ছেন অজিত।
পিঙ্কভিলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অজিত কুমারের পরবর্তী সিনেমা ‘একে৬৪’। এখনো সিনেমাটির নাম চূড়ান্ত হয়নি। গুঞ্জন অনুযায়ী, এ সিনেমার জন্য অজিত কুমার তার পারিশ্রমিক ১৫০ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ১৭৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০৭-২৪১ কোটি টাকার বেশি) করতে পারেন।
আরো পড়ুন:
মুক্তির আগেই কত টাকা আয় করল ‘কানতারা টু’?
আমি খুব কেঁদেছিলাম: মোহিনী
অজিত কুমার মনে করেন—‘সাধারণ গল্পের সিনেমাকেও রাজকীয়ভাবে উপস্থাপন করা উচিত।’ এই কারণে, সিনেমাটির বাজেট সম্ভবত ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি রুপির মধ্যে হতে পারে। তবে অজিতের টিমের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
‘গুড ব্যাড আগলি’ সিনেমা নির্মাণ করেন পরিচালক আধিক রবিচন্দ্রন। ‘একে৬৪’ সিনেমাও তারই নির্মাণের কথা রয়েছে। রেসিং সিজনের বিরতিতে সিনেমাটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কারণ অজিত কুমার তখন তার সিনেমার দিকেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবেন। শোনা যাচ্ছে, এই সিনেমা সব ধরণের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হবে, যেখানে ‘গুড ব্যাড আগলি’ কেবল অজিত ভক্তদের কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল।
ঢাকা/শান্ত